Editorial News

বাংলার মাটি সত্যিই কি দুর্জয় ঘাঁটি?

সতর্ক থাকার সময় এখন। সময় এখন অতন্দ্র প্রহরার। দুর্বৃত্তরা এসে হাজির এই বাংলার মাটিতে, মিলন দুর্গ ধ্বংস করার বাসনা নিয়ে। আমাদেরই স্থির করতে হবে আমরা কোন পথ বেছে নেব। এই মাটি, এই ঘাঁটি সত্যিই দুর্জয় কি না তা প্রমাণের দায় একমাত্র আমাদেরই, আর কারও নয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০০:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

এই রামনবমীর ক্ষত শুকোতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। কারণ এই ক্ষত বহিরঙ্গে নয় অন্তরঙ্গে। এটাই দুর্ভাগ্যের। না, এই কারণে দুর্ভাগ্যের নয় যে, এই বাংলা রবীন্দ্রনাথের অথবা নজরুলের অথবা বিদ্যাসাগরের। দুর্ভাগ্যের কারণ এ বাংলার মাটির সঙ্গে মিশে থাকা সেই বাউল ফকিরেরও, পির দরগায় মাথা ঠেকানো সেই হিন্দু জনতার অথবা দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে সামিল থাকা মুসলিম মুখগুলোরও। সেই বাংলা রামের নামে অস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি এবং অবশেষে রানিগঞ্জের ওই ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রবাহের সাক্ষী থাকল। সাক্ষী থাকল সেই বাংলা, জন্ম ইস্তক রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ এই বাণীকেই সার সত্য জেনে এসেছে।

Advertisement

অতএব, দারুণ বেদনার সময় এখন। ক্ষত যত, ক্ষতি তত— এটা বোঝার ক্ষমতাও এখন বোধ হয় বিলুপ্ত হতে বসেছে। ক্রমাগত। অলিতে এবং গলিতে, পথে এবং প্রান্তরে এখন তরবারির ঝনঝনি। প্রতীকী ভাবে যেটা উঠে এল রামনবমীর মিছিলে এমনকী নাবালকের হাতেও। এই তরবারির কোপ পড়ছে এখন ক্রমাগত সমাজের প্রতিটি গ্রন্থিস্থলে, প্রতিটি মিলন প্রাঙ্গনে, যে প্রাঙ্গন কয়েকশো বছর ধরে পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সযত্নে লালন করে এসেছিল হিন্দু এবং মুসলিমেরা।

এই মাটিতে রক্তের দাগ লাগেনি এমনটা নয়। হিন্দু এবং মুসলিম রণোন্মাদ হয়ে ওঠেনি এমনটাও নয়। ইতিহাস সাক্ষী এ রাজ্য কয়েক বারই দেখেছে এমনতর ঘটনা। কিন্তু প্রত্যেক বারেই আবার সমাজ তার মিলনছন্দে ফিরে এসেছে। কিছু দিন পরে দুর্গাপুজো এবং ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ক্লেশ হয়নি কোনও সম্প্রদায়েরই। এ বারেও কি তেমনটাই হবে? বেদনার্ত হৃদয়ে সেই প্রার্থনার সময়ে একটা দুরুদুরু ধ্বনি। সমাজ জুড়ে ছুরি চলছে ক্রমাগত। বিভাজনের ছুরি, পরস্পরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়ার জন্য উন্মত্ত আচরণ যেন চারিদিকে এবং সেই আচরণও একটা নির্দিষ্ট নিয়মে মাপা, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির। উদ্দেশ্য যদি হয় রাজনৈতিক, তা হলে আশঙ্কার মাত্রা বহু গুণ বেড়ে যায়। বহু গুণ বেড়ে যায় আমাদের সবার দায়িত্ব।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সতর্ক থাকার সময় এখন। সময় এখন অতন্দ্র প্রহরার। দুর্বৃত্তরা এসে হাজির এই বাংলার মাটিতে, মিলন দুর্গ ধ্বংস করার বাসনা নিয়ে। আমাদেরই স্থির করতে হবে আমরা কোন পথ বেছে নেব। এই মাটি, এই ঘাঁটি সত্যিই দুর্জয় কি না তা প্রমাণের দায় একমাত্র আমাদেরই, আর কারও নয়।

আরও পড়ুন: রাম-মিছিলের জের, ৪৮ ঘন্টায় হত ৩

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement