ছবি: এএফপি।
২০ বছর আগে পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়ে যে যাত্রাপথের শুরু হয়েছিল, ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট হয়ে সেই পথটাই সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। পরাধীনতার দীর্ঘ অধ্যায় পেরিয়ে স্বাধীন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠেছিল সেই দিন। এই দিন থেকেই কার্যকর হয়েছিল ভারতের সংবিধান। শুরু হয়েছিল আমাদের গণতন্ত্রের নতুন যাত্রা।
স্বাধীনতার অনেক বড় ভাবনা থেকেই রচিত হয়েছিল ভারতের সংবিধান। এক নতুন লক্ষ্যের কথা ভেবেই ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কাজ করেছিলেন সংবিধান প্রণেতারা। বিবিধের মাঝে মহান মিলনের লক্ষ্যে যাত্রাই ছিল তাঁদের স্বপ্ন, ভাবনা। ভাষা-ধর্ম-জাতি-আচার-খাদ্যাভ্যাস, নানান বৈচিত্রের মধ্যেও সংহতির মূল সুরটাকে ধরে রাখাই স্বাধীনতার সেই প্রথম পর্বে আমাদের সামনে ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দূরদর্শী সংবিধান প্রণেতাদের সম্মিলিত ভাবনায় সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল মন্ত্রগুলো ছিল এই সংবিধানের পরতে পরতে।
তার পর কেটেছে আরও ৬৯ বছর। আজ পিছন ফিরে তাকাতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়ে যাওয়া পতাকা বহন করার মতন শক্তি আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। সংশয় লাগে আমাদের কাঁধ বোধহয় এত চওড়া করে তুলতে পারিনি আমরা। যে মন্ত্রের মূলে ছিল বহু স্বরের সৌহাদ্যপূর্ণ সহাবস্থান, সেই মন্ত্রোচ্চারণ এখন অস্পষ্ট, জিভ বোধ হয় আড়ষ্ট হয়ে এসেছে। বিবিধতার চর্চায় যে সযত্ন প্রয়াস থাকা দরকার, তাতে ফাঁকি দিয়েছি আমরা, অতএব ফাঁক থেকে যাচ্ছে কোথাও। এই প্রশ্ন জাগছে এবার আমাদের মনে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সমাজ-পরিসর হয়ে এখন ব্যক্তিমানসেও অসহিষ্ণুতার জং পড়ছে। দেশের বদলে দ্বেষের মন্ত্রে দীক্ষার কাজ চলছে এখন। পরমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা, তীব্র ঘৃণা এবং বিবাদের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পথে আমরা ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছি— এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন, তিন থেকে অজস্র।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এই সর্বনাশা ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। সেই সময় এসেছে। আমাদের ফিরে যেতেই হবে সেই মন্ত্রগুলির কাছে, যা আমাদের জন্য রেখে গিয়েছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। ঔদ্ধত্যের রাস্তা ছেড়ে ভিন্ন স্বর, ভিন্ন মতকে গুরুত্ব দেওয়ার ভাবনাকে স্থায়ী জায়গা করে দিতে হবে আমাদের মননে। তা হলেই আমাদের এই মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠবে মহান।
আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে এই প্রথম হাজির নেতাজির চার সেনানী
আরও পড়ুন: নারী শক্তিই প্রতীক হয়ে উঠল দিল্লির রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে