সম্ভাবনা: দেশের বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে ‘মজদুর কিসান সংঘর্ষ র্যালি’। পার্লামেন্ট স্ট্রিট, নয়াদিল্লি, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮। পিটিআই
প্রশ্ন: ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য এখন বিরোধী ঐক্য খুব জরুরি, এ কথা আপনি সম্প্রতি একাধিক বার বলেছেন। কিন্তু সেই ঐক্য গড়ে তোলার পথে সমস্যা তো কম নয়! বিজেপি-বিরোধী বিভিন্ন দলের নিজেদের মধ্যে বিস্তর দ্বন্দ্ব আছে। যেমন অখিলেশ আর মায়াবতী। সমাজবাদী পার্টি এবং বিএসপির ভোটব্যাঙ্ক বলতে যাদের বোঝায়, তাদের মধ্যে তো দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব। সেটাকে অতিক্রম করে ঐক্য কতটা সম্ভব?
অমর্ত্য সেন: অখিলেশ এবং মায়াবতীর মধ্যে ‘হৃদ্যতা’ সত্যিই বড় উদাহরণ। ওঁরা তো কিছু দিন ধরে এক সঙ্গে কাজ করছেন। নানা রকম বোঝাপড়াও করে দেখিয়েছেন। যেমন সম্প্রতি উপনির্বাচনে। ঠিক যেমন রাহুল গাঁধীও বেশ কিছুটা রাজনৈতিক মুনশিয়ানা দেখাচ্ছেন।...
প্র: শুধু ভোটের তাগিদে জোট করলে কি চলবে? বৃহত্তর ও গভীরতর রাজনৈতিক সমন্বয় জরুরি নয়?
উ: শুধু নির্বাচনে জেতার জন্য জোট করব, এই ধারণাটা রাজনীতির দিক দিয়েও ভাল না, নির্বাচনের দিক দিয়েও ভাল না। যে বিষয়ে প্রথমেই সতর্ক থাকা দরকার, সেটা হল নেতৃত্ব নিয়ে টানাপড়েন। সেটাকে অতিক্রম করতে হলে একটা বড় রকমের আদর্শের প্রয়োজন আছে। ‘আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করছি’ বলতে লোকে এখন লজ্জা পায়, ভয় পায় যে এতে আমরা বাস্তব থেকে বিচ্যুত হলাম!
প্র: এর কারণ কী?
উ: আমার ধারণা এখানে দুটো সমস্যা আছে। এক, ভারতবর্ষের যে ঐক্যের চেতনা ছিল, তার বিরুদ্ধে একটা বড় রকমের হামলা চলেছে, যেটা প্রধানত বিজেপিই চালিয়েছে, এবং তার ফলে ক্রমশ অনেক লোকের মনে একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে, ও রকম কোনও আদর্শগত ঐক্য বলে কিছু আসলে নেই, ও সব নিয়ে ভাবা বা কথা বলা একটা ছেলেমানুষি। এই ধারণার সঙ্গে কী ভাবে লড়াই করা যায়, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ঐক্যের ধারণা যে এই হামলায় জখম হয়েছে, সেই বোধটা না থাকলে, সেই বিষয়ে চিন্তান্বিত না হলে, কেবল ‘নির্বাচনের জন্যে আমরা এক হলাম’ বললে একটা বড় রকমের জোরদার রাজনৈতিক আন্দোলন দাঁড় করানো যাবে বলে আমি মনে করি না। বিরোধী শক্তিগুলির মধ্যে কেউ কেউ এ ভাবে ভাবছেন না, তা নয়। কানহাইয়া কুমার ও জেএনইউতে তাঁর সহপাঠীরা এই বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। তেজস্বী বা অখিলেশের চিন্তাতেও এই বোধটা আছে বলেই মনে হয়। গুজরাত নির্বাচনের সময় যাঁরা উঠে এলেন, যেমন জিগ্নেশ মেবাণী, তাঁরাও এই বড় ঐক্যের আদর্শের কথা ভাবছেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, যেটা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে খুব বড় আকারেই আছে, সেটা হল স্বৈরাচার-বিরোধী একটা চিন্তা। এই কারণেই নন্দীগ্রামের ঘটনার পরে বামপন্থীরা পশ্চিমবঙ্গে আর মাথা তুলতেই পারলেন না। তা না হলে সিঙ্গুরের মতো একটা সমস্যা ওঁরা সামলাতে পারেন না, এটা ভাবা কঠিন। আসলে নন্দীগ্রামের রক্তাক্ত হাতে তখন ওঁদের পক্ষে সিঙ্গুরে করার কিছু ছিল না। আমার ধারণা, তৃণমূল এখন সেই সমস্যার মধ্যে নিজেরাও পড়েছে। এবং আগে কমিউনিস্ট পার্টি যা করত— গায়ের জোরে অন্যদের দমন করা— এখন তারাও তা-ই করছে, তার থেকে বেশিই করছে। কিন্তু ডায়ালেকটিক্স বলে একটা জিনিস আছে তো— দমন করলে নিজের শক্তি যেমন বাড়ল, তেমনই লোকের মনে বিরুদ্ধতার মানসিকতাও জোরদার হল। আমি যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি তাঁদের মধ্যে অনেকেই বলছেন, ‘‘বিজেপির প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে, সেটা এই কারণে নয় যে বিজেপিকে আমরা পছন্দ করি, কিন্তু তৃণমূলের স্বৈরাচার বন্ধ করা দরকার এবং সেটা বন্ধ করার ক্ষমতা সিপিএমের একেবারেই নেই।’’
সুতরাং এই সময় সিপিএম যদি বলে তারা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে চায়, তা হলে যদি বা তাদের এখনও একটু ক্ষমতা থেকে থাকে, সেটাও চলে যাবে বলে আমার ধারণা। বিজেপি তাতে আরও শক্তিশালী হবে। কারণ, যে ঐক্যের কথা আগে বলেছি, সেটা ছাড়াও লোকের মাথায় আর একটা জিনিস ঘুরছে, সেটা হল গণতন্ত্রের অভাব, স্বৈরাচারের দাপট। ঐক্যের বড় চিন্তাটার পাশাপাশি স্বৈরাচারের এই সমস্যার কথাও মাথায় রাখতে হবে। লোকে যা নিয়ে চিন্তিত, তাকে বাদ দিয়ে রাজনীতির রণকৌশল তৈরি করা যায় না। তৃণমূল এই মুহূর্তে অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও তার একটা ভঙ্গুরতা আছে, অশোক রুদ্রের ভাষায় বললে অবস্থাটা হল ‘আগ্নেয়গিরির শিখরে পিকনিক’। লক্ষ করার বিষয় হল, এই স্বৈরাচার মমতা থামাতে পারছেন না। অথচ এটা তাঁরই ক্ষতি করছে। যেমন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় যা হল, সেটা তাঁর পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। তিনি তো পঞ্চায়েতে এমনিই জিততেন। এই যে তিন ভাগের এক ভাগ আসনে আর কেউ দাঁড়াতেই পারল না, তাতে তৃণমূলেরই বদনাম হল। এতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির সুযোগ বাড়তে পারে, এই আশঙ্কা আছে।
প্র: পশ্চিমবঙ্গে তার প্রসার তো দেখাও যাচ্ছে।
উ: ধর্ম-সম্প্রদায় দিয়ে মানুষকে ভাগ করার রাজনীতি বাংলায় সেই চল্লিশের দশকে এসেছিল। তাতে বাংলা ভাগও হয়েছিল। কিন্তু তার পরে পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দেখিয়ে দেয়, সেই বিভাজন আসলে দুর্বল, তা বেশি দিন টেকে না। এবং, বিজেপির যে ইডিয়োলজি, সেটা দিয়ে ওরা উত্তর ভারতে ভোট পায়, দক্ষিণ ভারতেও ও দিয়ে ভোট পায় না, পূর্ব ভারতেও না। তবে সাময়িক ভাবে ওই বিভাজনের রাজনীতি সফল হতেই পারে, সেটা মানতেই হবে। তার কারণ, লোকে ভুল করে, তাকে ভুল বোঝানো যায়। লোকের যে ভুল করার ক্ষমতা আছে, সেটা তো অস্বীকার করা চলে না!
প্র: সেই ভুল ভাঙানো দরকার।
উ: আমার কথা হচ্ছে, ভারতবর্ষের স্বরূপ নিয়ে একটা সচেতনতা দরকার, এবং একটা মনের জোরের দরকার, যে, ভারতবর্ষকে তার ঐক্যের পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া চলবে না। আবার এটাও মানতে হবে যে অনেকে এই ব্যাপারটায় তত জোর দেবেন না, তাঁরা বরং স্বৈরাচারের প্রশ্নটাকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন। যেমন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তাঁরা বলবেন, বিজেপির আদর্শ না মানতে পারি, কিন্তু তৃণমূলের স্বৈরাচার আর সহ্য করা যাচ্ছে না, তার চেয়ে বিজেপিই ভাল। এ রকম একটা মনোভাব অনেকের মধ্যে দেখা যেতে পারে, এমনকি যাঁরা বরাবর বামপন্থী চিন্তাধারায় অভ্যস্ত, তাঁরাও এই ভুলটা করতে পারেন।
প্র: কিন্তু বিজেপি তো একটা যে-কোনও দল নয়। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি। তারা কী করতে চায়, সেটা তো গত কয়েক বছরে খুব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সেটা বোঝার পরেও যদি কেউ ‘ঠিক আছে, বিজেপি তবু মন্দের ভাল’ বলে তাদের ভোট দেন, তা হলে কি এটাই বুঝে নিতে হবে না যে, আমরা বাঙালির স্বাভাবিক অসাম্প্রদায়িকতার যতটা জোর আছে বলে ভেবেছিলাম, ততটা জোর তার নেই?
উ: আসলে কিন্তু এর থেকে বাঙালির সাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ হয় না। তাঁদের চিন্তাধারার একটা বড় রকমের ঘাটতি নিশ্চয়ই হচ্ছে। আবারও বলব, লোকের ভুল করার ক্ষমতাটাকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বলে মেনে নিতেই হবে!
প্র: তাঁরা ঠিক মতো বিচার করছেন না?
উ: বিচার করতে পারছেন না। আগে যখন বাংলায় দাঙ্গা হয়েছে, সেই সময়েও যাঁরা সাম্প্রদায়িক মতামত দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই মনে করেছেন এটা একটা সাময়িক ব্যাপার, আবার চলে যাবে। আমার মনে হয়, লোকের চিন্তাধারায় সাম্প্রদায়িকতা বর্জনের আদর্শটা শক্ত ভাবে থাকলেও অনেক সময় তাঁরা স্বৈরাচারের সমস্যাটাকে তখনকার মতো বেশি গুরুত্ব দিয়ে এমনটা ভাবতে পারেন যে— তৃণমূলকে হটানোর জন্যে এখন বিজেপিকে দরকার, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। তাঁরা এটাও ভেবে থাকতে পারেন যে, বিজেপির রাজনীতিটা বাঙালির রাজনীতি হতে পারে না, তাই ও নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই। বিজেপির রাজনীতিটা যে বাঙালির রাজনীতি হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কা হয়তো তাঁদের মাথায় সে ভাবে আসছে না। বিজেপি কী, তারা কোন চিন্তাধারার বা আদর্শের ধারক, কী ভাবে তারা এগোচ্ছে, সেটা বিচার করা খুবই দরকার। ভারতের একটা বেশ বড় অংশে অনেকখানি এগিয়েছে তারা, খুব কৌশল করেই এগিয়েছে, ছুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর ক্ষমতা দেখিয়েছে। এই কারণেই একটা রাজনৈতিক আলোচনার এখন প্রচণ্ড প্রয়োজন। শুধু ট্যাকটিক বা কৌশলের কথা ভাবলে চলবে না। এটাও মনে রাখা খুব দরকার যে, রাজনৈতিক আলোচনার জন্য রাজনৈতিক সক্রিয়তার বিশেষ প্রয়োজন আছে। সেটার ওপর আমাদের এখন খুব জোর দিতে হবে।
প্র: রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও আলোচনার ক্ষেত্রে একটা কথা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। হিন্দুত্ববাদীরা একটা অন্য ধরনের ‘ঐক্য’-এর বিভ্রান্তিকর প্রচার অনেকের মনে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। তারা বলছে, এটাই আসল ভারতীয়তা।
উ: হ্যাঁ, যদিও এটা তাদের হিন্দুত্বের ব্যাপার, কিন্তু তারা বলছে, এটা একটা বড় ছাতা, যার তলায় অনেক লোক চলে আসতে পারে। সেই প্রসঙ্গে, সম্পূর্ণ ভুল ভাবে, বিবেকানন্দ ইত্যাদিদের উদ্ধৃতও করছে। এই বড় ছাতার কথাটা বিজেপির সব লোক মানে বলে মনে করি না, কারণ তাদের চিন্তাধারা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। কিন্তু যেখানে ওদের এটা দরকার, সেখানে এটা ব্যবহার করছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে।
প্র: পশ্চিমবঙ্গেও সব জায়গায় এক নয়। দক্ষিণবঙ্গে বিজেপি উঠে আসছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটা কার্যকর শক্তি হিসেবে, যেটা আপনি বলেছেন। আবার অন্য কিছু এলাকায়, যেমন পুরুলিয়ায়, বিজেপি বিজেপি হিসেবেই উঠে আসছে। সেখানে তারা কাজ করছে প্রধানত উত্তর ভারতের মডেলে, একেবারে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে ওদের বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের বেশির ভাগই মধ্য বর্ণের লোক, একাংশ হিন্দিভাষী। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে বিজেপির চিন্তাধারা কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও, শহরে অনেকেই তাতে প্রভাবিত হচ্ছে, এটা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাই বলে দেয়। মধ্যবিত্তদের অনেকের মনে একটা সাম্প্রদায়িক ভাবনা আছে। তাঁরা নিজেরা হয়তো সাম্প্রদায়িক নন, কিন্তু সাম্প্রদায়িকদের নিয়ে তাঁদের কোনও আপত্তি বা অসুবিধে নেই।
উ: এটাই খুব ঠিক কথা। অনেকেই মনে করেন, সাম্প্রদায়িকতা ঠিক নয়, কিন্তু সেটা বড় সমস্যা নয়, ওটা আমরা সামলে নিতে পারব; যারা সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করছে, প্রয়োজন হলে তাদের সঙ্গে কিছু দিনের জন্য হাত মেলানোতে আমাদের আপত্তির কিছু নেই।
প্র: এবং এমনটা যাঁরা ভাবেন, আগে হয়তো তাঁরা চুপ করে থাকতেন, কিন্তু ইদানীং তাঁরা নিজেদের কথা জোর গলায় বলতে পারছেন। সরাসরি মুসলমানদের গালিগালাজ করে কথা বলার এই প্রাবল্য আগে এতটা দেখিনি। যে রাজনৈতিক আলোচনা এবং সক্রিয়তার কথা আপনি বলেছেন, সেটা কি এই কারণেই আরও বেশি জরুরি নয়?
উ: নিশ্চয়ই। এবং সে ব্যাপারে সিপিআইএমের একটা বড় ভূমিকা আছে। তারা তো একেবারে দমে গিয়েছে। দলের নেতারা যে সেটা বুঝতে পারছেন না, আমি তা মনে করি না। বামপন্থী রাজনীতিতে বড় আদর্শের দিকে নজর রাখা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন রাজনৈতিক বিভ্রান্তির সম্ভাবনা বিষয়ে পরিষ্কার ভাবে চিন্তা করা। সাম্প্রদায়িকতা রোধ করতে যাঁরা প্রস্তুত, তাঁরা যদি বামপন্থী না-ও হন, তাঁদের সঙ্গে হাত মেলানোর কারণ বামপন্থীদের আছে। অন্য দিকে, স্বৈরাচার বিষয়ে যে সমালোচনার প্রয়োজন আছে, সেটাও সঙ্গে সঙ্গে রাখা সম্ভব।
প্র: সিপিআইএম দীর্ঘ দিন ধরে ভোটের হিসেবের বাইরে কোনও কিছু দেখতেই ভুলে গিয়েছে। যে রাজনৈতিক আলোচনা বা শিক্ষার কথা আপনি বলছেন, সেটা আর ওদের অভ্যেসে নেই। অথচ সেটাই তো কমিউনিস্ট পার্টির একটা বড় কাজ।
উ: অনেকেই বলছে, সিপিআইএমকে এখন কোথাও পাওয়াই যাচ্ছে না। কোথাও কোনও অনাচার হলে তার প্রতিবাদ করাটা তো একটা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব, কিন্তু সে ব্যাপারে ওদের এখন আর দেখাই যায় না। হয়তো তার একটা কারণ হল এই যে, দীর্ঘ দিন রাজত্ব করে ওদের অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল কোনও কিছু ঘটলেই পুলিশ ডাকা। নিজেরা কিছু করার সচলতা আগের থেকে অনেক কমেছে।
প্র: সিপিএমের বাইরে অন্য গণতান্ত্রিক শক্তির রাজনৈতিক উত্থানের সম্ভাবনা কতটা? রাজনৈতিক আন্দোলনের বিষয়ের তো কোনও অভাব নেই! মহারাষ্ট্রে এবং বৃহত্তর ভারতে কৃষক আন্দোলন বা অন্য নানা আন্দোলন তো চলছেও।
উ: ঠিকই। কৃষক আন্দোলন, অন্যান্য আন্দোলনে বামপন্থীরা দেশ জুড়েই যোগ দিচ্ছেন এবং বেশ কিছুটা সাফল্যও পাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের কথা এই যে, তাঁরা যে বামপন্থী ছাড়া অন্যদের সঙ্গেও হাত মিলিয়ে দেশের বহু সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন, সেটা পরিষ্কার করে না বলার একটা প্রবণতা দেখতে পাই। এক সঙ্গে কাজ করার দরকার এখন খুবই বেশি। তা ছাড়া রাজনীতি তো শুধু কাজ করার ব্যাপার নয় (যদিও তার প্রয়োজন সত্যিই আছে), তার সঙ্গে সঙ্গে কী কারণে কী করলাম, এটা নিয়ে উপলব্ধি এবং আলোচনার প্রয়োজনও খুবই রয়েছে।
আমি শুনি যে, পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের এখনও তিন লক্ষ সদস্য আছেন। পার্টির প্রতি তাঁদের টান হয়তো আর একটু জোরাল হতে পারে, যদি ভাল আলোচনা ও চিন্তার সঙ্গে কাজের যোগটা আরও পরিষ্কার হয়। অন্য বামপন্থী দলগুলোর বিষয়েও এ কথা বলা যায়। বামপন্থী রাজনীতির প্রয়োজন তো পশ্চিমবঙ্গে কম নয়। এবং সেটার প্রকাশ কেন হচ্ছে না, এবং পার্টিগুলো নানা দিক দিয়ে— শুধু নির্বাচনে নয়— মার খাচ্ছে কী কারণে, এ নিয়েও ভাবার প্রয়োজন আছে। সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী, বামপন্থী ছাড়াও, অন্য দলগুলির সঙ্গে ওই বিষয়ে হাত মিলিয়ে কাজ করতে রাজি হলে যে বামপন্থী রাজনীতির ক্ষমতা কমত, এমনটা মনে করি না।
সাক্ষাৎকার: অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ও কুমার রাণা