ছবি: ফেসবুক।
বড় দুশ্চিন্তা হচ্ছে, বেশ কিছু দিন ধরেই হচ্ছে। ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষায় ছিলাম— সহিষ্ণুতার শক্তি হয়তো ছাপিয়ে যাবে, ভাসিয়ে নেবে অসহিষ্ণু দৌরাত্ম্যগুলোকে। কিন্তু ঘটছে বাস্তবে উল্টোটাই, দৌরাত্ম্যই ভাসিয়ে নিতে চাইছে আজ সব কিছু, কট্টরবাদ আজ পাড়ায়-পাড়ায়, অলিতে-গলিতে রাক্ষস নাচাচ্ছে।
এক দিকে আরএসএস, অন্য দিকে জামাত বা হুজির বিপদ দেখতে পেয়েছেন কবি মন্দাক্রান্তা। লাশ চাননি, প্রেমের পলাশ চেয়েছেন, কবিতা লিখেছেন। প্রতিদানে সোশ্যাল মিডিয়া তাঁর জন্য বয়ে আনল গণধর্ষণের হুমকি!
মন্দাক্রান্তার মতো নারীরা দেশকে ধ্বংস করছেন, অতএব গণধর্ষণেই তাঁর উচিত শিক্ষা— যে ফেসবুক পোস্টে কবিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সে পোস্টের সারকথা এই। চরম আক্রোশ, হিংসা এবং বিদ্বেষ থেকেই যে এই পোস্টটির জন্ম, সে নিয়ে কারও কোনও সংশয় নেই। ফ্যাসিবাদের মুখটাকে আক্রোশে যে ভাবে রক্তাভ হয়ে উঠতে দেখছি, তাতে আশ্চর্য হওয়ারও কিছু নেই, ফ্যাসিবাদের মুখ এমনই হয়। কিন্তু হুমকি যিনি দিয়েছেন, তাঁর ‘দেশভক্তি’ দেখে আশ্চর্য হতেই হচ্ছে। দেশকে ‘ধ্বংস’ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতেই ওই ‘দেশভক্ত’ চান কবির গণধর্ষণ, ফেসবুক পোস্টটির ব্যাখ্যা অন্তত তেমনই দাঁড়ায়। অর্থাৎ, যিনি এক নারীকে এবং এক কবিকে গণধর্ষণের হুমকি দিতে পারেন, তিনিও নিজেকে দেশভক্ত ভাবেন। তিনিও ভাবেন, তাঁর দ্বারা দেশ ও দশের মঙ্গল সম্ভব!
আরও এক কবির কথা মনে আসছে, আসন্ন সময়ের আচ্ছন্ন ভাবটা তিনি অনেকগুলো বছর আগেই টের পেয়েছিলেন। অদ্ভুত সময় বলে ডেকেছিলেন, যাঁরা অন্ধ এ অদ্ভুত সময়ে তাঁরাই চোখে সবচেয়ে বেশি দেখেন বলে কবির মনে হয়েছিল। আমরা বুঝছি, আপনারা বুঝছেন, মন্দাক্রান্তা বুঝছেন, কবির সে মনে হওয়া কত অভ্রান্ত ছিল।
ফ্যাসিবাদের দাপট লোরকাকে ছিঁড়ে নিয়েছিল বৃন্ত থেকে, মনে পড়ে নিশ্চয়ই আজও। ফ্যাসিবাদের উত্থান কালবুর্গীকে কিছু দিন আগেই শেষ করে দিয়েছে। আর কিন্তু চুপ বসে থাকার সময় নেই। প্রতিরোধটা এখনই শুরু করতে হবে। না হলে কোনও এক অচেনা ভবিষ্যতে পৌঁছে ফেলে আসা সময়ের এক কবির মতো প্রশ্ন করতে হবে— কবিরা সব কোথায়?