Jair Bolsonaro

সুখের সময় নহে

প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি কে হইবেন, তাহা সাধারণত একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৬
Share:

নরেন্দ্র মোদী ও জাইর বোলসোনারো।

প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি কে হইবেন, তাহা সাধারণত একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক নহে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো যে ভারত সরকারের চোখে এই সম্মাননীয় ভূমিকা লাভ করিলেন, কূটনৈতিক দিক দিয়া তাহা অর্থপূর্ণ, সুতরাং যথেষ্ট সঙ্গত। ব্রাজিল ভারতের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বিশ্বরাজনীতির সমীকরণগুলি ভাবিলেই বোঝা যায়, কেন ‘ব্রিকস’ গোষ্ঠীতে নৈকট্যের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক রক্ষা করিবার দায় দুই দেশের দিক হইতেই বিরাট। এই লইয়া তিন বার আমাজ়নের দেশের প্রতিনিধি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি রূপে বৃত হইলেন— ১৯৯৬, ২০০৪-এর পর ২০২০। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে প্রজাতন্ত্র দিবসের উপলক্ষটি কূটনীতির কাজে লাগাইতে উদ্‌গ্রীব থাকেন, তাহাও গত কয়েক বৎসরের তালিকা হইতে পরিষ্কার। ২০১৮ সালের ছাব্বিশ জানুয়ারি দিল্লির কুচকাওয়াজ দেখিতে একত্র দেখা গিয়াছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশ-দশটি দেশের অভ্যাগতকে। প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোকে লইয়া যাঁহারা অত্যন্ত অপ্রীত হইয়াছেন, তাঁহাদের উদ্দেশে বলা প্রয়োজন যে, মানুষ হিসাবে বোলসোনারো যতই আপত্তিকর হউন, একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের নির্বাচিত শীর্ষনেতা হিসাবে তাঁহার গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য।

Advertisement

অবশ্য একই সঙ্গে, অতিথি নির্বাচন লইয়া আপত্তি না থাকিলেও স্বস্তি ও গৌরব বোধ করিবারও উপায় থাকে না। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সত্তর বৎসর পূর্তির প্রত্যুষে যে এমন এক আদ্যন্ত বিদ্বেষবাদী মানুষ এই দেশের মঞ্চ অধিকার করিলেন, তাহা বিশ্বরাজনীতির হতভাগ্য হাল দেখাইয়া দেয়। ইহা ভারতের দুর্ভাগ্য নহে, পৃথিবীর দুর্ভাগ্য। যে জননেতা তাঁহার প্রতিস্পর্ধী মহিলা নেত্রীকে বলেন, আপনাকে আমি ধর্ষণ করিব না কেননা আপনি তাহার উপযুক্ত নহেন— তাঁহার রুচি, রাজনীতি, সমাজচেতনা, কোনও কিছু লইয়াই সংশয় থাকে না। প্রবল নারীবিদ্বেষী, সংখ্যালঘুবিদ্বেষী, সমকামী-বিদ্বেষী, সর্বোপরি, গণতন্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধাপোষণকারী প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো কথায় কথায় ভিন্নমতের ভিন্নপথের মানুষকে অপদস্থ ও অপমান করিতে, কুরুচিময় মন্তব্যের বন্যা বহাইতে পছন্দ করেন। দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের হায়েনার সহিত তুলনা করেন। তাহা সত্ত্বেও ব্রাজিলবাসীরা তাঁহাকে বড় ভোটে জিতাইয়া দেশপ্রধান বানাইয়াছেন। তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের সৌভ্রাতৃত্বের খাতিরে তাঁহাদের নেতাকে সম্মান না দিয়া গতি নাই। তবে সম্মান দিবার সহিত ইহাও মানিতে হয় যে, এ বড় সুখের সময় নহে।

বোলসোনারো ভারতের প্রতি বিশেষ ভাবে সৌহার্দপূর্ণ নহেন। বিশ্ববাজারে ইক্ষুবাণিজ্যে ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল গত বৎসর হইতে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় লাগাতার ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার করিয়াছে যে, ভারত কী ভাবে বাজারের হাল নষ্ট করিতেছে, ব্রাজিলের স্বার্থ পণ্ড করিতেছে। বাস্তবিক, বোলসোনারোর আমন্ত্রণ লইয়া প্রশ্ন যদি উঠাইতেই হয়, তাহা হইলে এই জায়গাটিতেই। যে দেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের নিয়মিত স্বার্থবিরোধিতা করিতেছে, তাহাকে কি রাষ্ট্রীয় উৎসবের দিনে ডাকা উচিত?

Advertisement

কঠিন প্রশ্ন। কঠিন প্রশ্ন ইহাও যে, কূটনৈতিক ভাবে সমর্থনীয় হইলেও বোলসোনারোর আমন্ত্রণের মধ্যে কি বর্তমান ভারত সরকারের কিছু রাজনৈতিক সুবিধাও ঘরে তুলিবার পরিকল্পনা ছিল? ভূবিশ্বের হালচাল বলিতেছে, দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সহিত পরস্পরকে ন্যায্যতা দিবার একটি ঐকান্তিক প্রয়োজনবোধও রহিয়াছে। গণতন্ত্র অন্যত্রও ধাক্কা খাইতেছে— ইহা প্রমাণ করিলে নিজের দেশে গণতন্ত্রের পথে না-হাঁটার একটি সুপুষ্ট যুক্তি মিলে। সুখের সময় নহে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement