দক্ষিণপন্থী কিংবা রক্ষণশীল বলিলে যাহাদের সম্পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায় না, যাহাদের যথার্থ পরিচিতি কেবল নিয়ো-নাত্সি, সেই সংকীর্ণ বিদ্বেষমূলক জাতীয়তাবাদী দল ভোটে জিতিয়া আসিয়া সরকার গড়িতেছে, ইহা সামান্য সংবাদ নয়। সম্প্রতি এমনই একটি অ-সামান্য সংবাদ আসিল অস্ট্রিয়া হইতে। নাৎসি মনোভাবাপন্ন ফ্রিডম পার্টি সেখানে শরিক হিসাবে সরকারে আসিবার কৃতিত্ব অর্জন করিল। ২০০০ সালে প্রথম বার একই ভাবে সরকারের অংশ হইয়াছিল এই দল, আরও বড় নির্বাচনী সাফল্য সহকারে, যদিও দুই বৎসরের মধ্যে সেই জোট ভাঙিয়া যায়। দেড় দশক পর আবারও একই ঘটনা। মধ্যবাদী পিপল’স পার্টি, প্রধান বিজয়ী দলের নেতা সেবাস্টিয়ান কুর্জ অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর পদে বৃত হইলেন ফ্রিডম পার্টির সমর্থন লইয়া। সমর্থনদায়ী দলের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত ফ্রিডম পার্টির প্রধান হেইনজ ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রাশেকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেছেন কুর্জ। পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে সম্প্রতি যে অতি-দক্ষিণবাদের রমরমা চলিতেছে, তাহার এক সাফল্যবিন্দু রচিত হইল এই জয় ও এই সরকার গঠনের মধ্য দিয়া।
স্ট্রাশের দলের উত্থান মনে করাইয়া দেয় যে, সত্তর বৎসরে পৃথিবী যতখানি পাল্টাইয়াছে, ততখানিই এক রকম আছে। নাৎসি হিংসাত্মক রাজনীতি আজও পুরোমাত্রায় ফ্রিডম পার্টির মতাদর্শে বিরাজ করিতেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আগমার্কা নাৎসি কর্মীরাই এই পার্টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের ভাবাদর্শ রক্ষা করিতে চাহিয়াছিলেন। আশ্চর্য নহে যে, সেই ভাবধারা এই পার্টির মধ্যে স্পষ্টত বহমান। কেবল একটিই পরিবর্তন: সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘৃণার লক্ষ্য পাল্টাইয়াছে। ইহুদিদের পাশাপাশি সেই স্থান দখল করিয়াছেন মুসলিমরা। সিরিয়ার উদ্বাস্তু আগমনের আগে হইতেই যে মুসলিমবিদ্বেষ পূর্ব ইউরোপের সমাজে গভীরসঞ্চারী, অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টি তাহার সাক্ষাৎ প্রমাণ।
অস্ট্রিয়ার রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের একটি বৃহৎ প্রভাব পড়িবার সম্ভাবনা সে দেশের বাহিরে, মহাদেশের পূর্বভাগ জুড়িয়া। কিছু কাল ধরিয়া পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে অতি-রক্ষণশীল রাজনীতির জোয়ার লক্ষিত হইতেছে। জাতিবিদ্বেষ এই অঞ্চলে কোনও দিনও মরে নাই, কিন্তু গত কয়েক বৎসর ধরিয়া সিরিয়া হইতে অবিরাম উদ্বাস্তুপ্রবাহ সেই বিদ্বেষকে একটি তীব্রতায় পৌঁছাইয়া দিয়াছে। পূর্ব ইউরোপ এই প্রবাহ ও এই বিদ্বেষের প্রধান পীঠস্থান হইলেও তাহার রেশ দ্রুত ছড়াইয়া পড়িতেছে ইউরোপের অন্যান্য অংশেও, এমনকী স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলেও। সেই প্রেক্ষিতে অস্ট্রিয়ার নূতন রাজনৈতিক অক্ষ হয়তো বিস্ফোরক পরিস্থিতি সৃষ্টি করিবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মুখে ইহা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইইউ-এর প্রধান কান্ডারি, প্রতিবেশী জার্মানির সম্মুখেও। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল যখন নির্বাচন-পরবর্তী কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়া যাইতেছেন, সরকার গঠনের জন্য উপযুক্ত শরিক দল খুঁজিয়া ফিরিতেছেন, তখনও অতি-রক্ষণশীলদের সহায়তা তিনি অতি যত্নে দূরে সরাইয়া রাখিয়াছেন। আশঙ্কা, অস্ট্রিয়ার নূতন সরকার মের্কেলের দেশেও রক্ষণশীল রাজনীতিতে নূতন বান আনিতে পারে। সেবাস্টিয়ান কুর্জ আশ্বাস দিয়াছেন, তাঁহার সরকার ইউরোপের স্বার্থেই কাজ করিবে। কোন ইউরোপ, কেমন ইউরোপ?