একটানা পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়তে থাকা কোনও ছোটখাটো বিষয় নয়।
পেট্রো-পণ্যের দাম আকাশ ছুঁতে চাইছে। সব নজির ভেঙে রোজ দাম বাড়ছে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আশ্বাস দিয়েছিলেন, উপযুক্ত পদক্ষেপই করবে সরকার। পেট্রো-পণ্যের দাম একটানা বাড়তে থাকা নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন বলে তিনি জানিয়েছিলেন। খুব শীঘ্রই কোনও পদক্ষেপ করা হবে বলে তিনি দাবি করেছিলেন। কোন পদক্ষেপের কথা অমিত শাহ বলেছিলেন, কারও কাছেই সম্ভবত স্পষ্ট নয়। কারণ পেট্রো-পণ্যের একটানা মূল্যবৃদ্ধিতে কোনও লাগাম এখনও পরানো যায়নি।
আশ্বাস কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছ থেকেও এসেছিল। তিনি আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন, পেট্রো-পণ্যের একটানা মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সরকার কী করার কথা ভাবছে। পেট্রল-ডিজেলকে জিএসটি ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। জিএসটি-র অধীনে এলে জ্বালানি তেলের দাম অনেকখানি কমবে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কবে হবে সেই পদক্ষেপ? জানা যায়নি। পেট্রো-পণ্যকে জিএসটি-র আওতায় আনার প্রচেষ্টা কত দূর এগোল, তা-ও স্পষ্ট হয়নি।
সুশীল মোদী আবার আর এক রকমের কথা শোনালেন। জিএসটি-র আওতায় এলেই পেট্রল-ডিজেলের দাম কমবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই বলে তিনি জানালেন। সুশীল মোদীও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তো বটেই। তিনি দেশে জিএসটি নেটওয়ার্ক প্যানেলের প্রধানও। তাই সুশীল মোদীর কথা এ প্রসঙ্গে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সুশীল মোদী দাবি করছেন, জিএসটি-র আওতায় এলেও পেট্রোল-ডিজেলের দাম এতই সামান্য কমতে পারে যে, তা প্রায় ধর্তব্যের মধ্যেই আসবে না। অতএব জিএসটি-তেই সুরাহা হবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
সংশয় ক্রমশ বাড়ছে। কোন পথে কমবে লাগাতার বাড়তে থাকা পেট্রল-ডিজেলের দাম, প্রশ্ন এখন ঘরে ঘরে। জ্বালানি তেলের এই বেনজির মূল্যবৃদ্ধিতে আদৌ রাশ টানা যাবে কি না, ধোঁয়াশা এখন সে প্রশ্নকে ঘিরেই।
ধোঁয়াশা কিন্তু ক্রমশ বাড়ছে। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে একটানা পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়তে থাকা কোনও ছোটখাটো বিষয় নয়। গোটা দেশ উদ্বিগ্ন। শুধু উদ্বেগে সীমাবদ্ধ নেই পরিস্থিতিটা। জ্বালানি তেলের আকাশছোঁয়া দর সরাসরি প্রভাব ফেলছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়। হাহাকারের পরিস্থিতি বললেও খুব অত্যুক্তি হয় না। প্রায় প্রত্যেক নাগরিক এই মুহূর্তে জানতে চাইছেন, সুরাহা কোন পথে? সেই পথ না দেখিয়ে সংশয় আরও বাড়িয়ে তোলা রাষ্ট্রের কাছ থেকে কাম্য নয়।
জিএসটিতে এলেও পেট্রোল, ডিজেলের দাম কমবে না: সুশীল মোদী
শাসক দলের সভাপতি আশ্বাস দিচ্ছেন, উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী দাবি করছেন, পেট্রল-ডিজেলকে জিএসটি-র আওতায় আনতে পারলেই অনেকটা কমে যাবে দাম। আর জিএসটি নেটওয়ার্ক প্যানেলের প্রধান জানাচ্ছেন, ওই পথে দাম কমা সম্ভব নয়।
গোটা পরিস্থিতির দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, দিশাহীন হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রই। পেট্রো-পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ আদৌ সম্ভব কি না, সম্ভব হলে কোন পথে— সরকারেরও কি কোনও ধারণা রয়েছে সে বিষয়ে? প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। এ কথা ঠিক যে, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম লাগামছাড়া ভাবে বাড়ছে। কিন্ত এ কথাও ঠিক যে, আমাদের দেশে পেট্রল-ডিজেলের দামের উপরে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি নানা রকমের কর আরোপ করে রেখেছে, যা প্রত্যাহার করা হলে দাম অনেকটা কমে আসতে পারে এখনই। কর বা সেস তুলে নেওয়া হলে সরকারি কোষাগার খানিকটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে ঠিকই। কিন্তু সেই ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস সরকারকে দেখাতেই হবে। কারণ সাধারণ নাগরিকের নাভিশ্বাসের মূল্যে কোষাগার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। কোন পথে সুরাহা, সে সংশয়েরও দ্রুত নিরসন জরুরি।