নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে এসে পরিস্থিতিটা যেন কিছুটা অন্য রকম। ২০১৪-র মে মাসে দিল্লির মসনদে আসীন হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। টানা তিন বছর অত্যন্ত মসৃণ ছিল যাত্রাপথ। সাংগঠনিক বৃদ্ধি হোক বা নির্বাচনী সাফল্য, প্রচারের আলো কেড়ে নেওয়া হোক বা কোণঠাসা বিরোধীকে আরও কোণঠাসা করে দেওয়া— সব সূচকই বলছিল মোদীর তথা বিজেপির সংসারে এখন সুখের দিন। শেষ ছ’মাসে সেই সুখের দিনে কিছুটা টান পড়েছে যেন। যতটা সহজে অভীষ্টে পৌঁছনো যাচ্ছিল এত দিন, ততটা নির্বিঘ্ন ঠাহর হচ্ছে না আজকের পরিমণ্ডলটা, মনে হতেই পারে মোদীর তথা বিজেপির আজ। আর সেই কারণেই দীর্ঘদিন পরে এমন কোনও নির্বাচন, যাকে ঘিরে লড়াইয়ের আবহটা অন্তত রয়েছে।
আরও পড়ুন: আশ্চর্য হিমাচল, শূন্য ডিগ্রিতেও ভোটগ্রহণ
হিমাচল প্রদেশে আজ বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটগ্রহণের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে গুজরাতেও। দুই রাজ্যেই জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেসও বেশ জোরকদমে ময়দানে এ বার। কংগ্রেসের সম্ভাবনা নিয়ে চর্চাও বেশ জোরদার সংবাদমাধ্যমে, সামাজিকমাধ্যমে। গত তিন বছরে প্রায় কোনও নির্বাচনেই এমনটা দেখা যায়নি দেশে। তার মানেই এই নয় যে, গত তিন বা সাড়ে তিন বছরে দেশে কোনও নির্বাচনে হারেনি বিজেপি। দিল্লি, বিহার এবং পঞ্জাবের বিধানসভায় বিজেপি হেরেছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, অসম, গোয়া, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড বিজেপি জিতে নিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় অবিশ্বাস্য এবং নজিরবিহীন জয় পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেও আবহটা একতরফা ছিল না, এ কথা ঠিক। সপা-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে বিজেপির জোর টক্করের পরিমণ্ডল ছিল। কিন্তু সেই সময়টাতেও দেশের রাজনীতিতে বিজেপির সব চাল সোজা পড়ছিল, আর বিরোধীদের সব চাল উল্টো। হিমাচল প্রদেশ আর গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পরিস্থিতিটা কিন্তু তেমন নয়। নোটবন্দির এক বছর পর তার সুফল-কুফলের বিচার আতসকাচের নীচে। জিএসটি নিয়ে নানা মহলে ক্ষোভের ইঙ্গিত। গত কয়েক মাসে রাহুল গাঁধীর রাজনৈতিক অস্তিত্ব বেশ কিছুটা মজবুত এবং গুরুতর হয়ে ওঠার আভাস যেন। বিরোধী শিবিরে এক সামগ্রিক বিজেপি বিরোধী সংহতির প্রবণতাও। সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জটা বেশ তীব্র হয়েছে বিজেপির সামনে এ বার। আর সেই চ্যালেঞ্জের আবহেই ভোটে যাচ্ছে হিমাচল-গুজরাত। ফলাফল যা-ই হোক, এই বিধানসভা নির্বাচন গত সাড়ে তিন বছরের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে বেশ কিছুটা আলাদা।
২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানে বা কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে ২০১৮ –র ওই সব নির্বাচন যদি সিংহাসনের সেমিফাইনাল হয়, তাহলে গুজরাত ও হিমাচলের এই ভোট অবশ্যই কোয়ার্টার ফাইনাল। কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক পদক্ষেপ ঘিরে যখন দেশজোড়া বিতর্ক, দেশের শাসকদল তথা সরকারকে ঘিরে যখন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা শুরু, তখন বিরোধী শিবির কতটা কাজে লাগাতে প্রস্তুত এই সব ইস্যুকে, কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে তারা ফেলতে পারবে শাসককে, এই কোয়ার্টার ফাইনালে তা অনেকখানি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
নির্বাচন সর্বদাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব। হিমাচল আজ সেই উৎসবে সামিল। গুজরাতের দিনও এগিয়ে আসছে। শান্তিতে, অবাধে, নির্বিঘ্নে মিটুক নির্বাচন পর্ব, কাম্য এমনই। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই নির্বাচনে জয় হোক গণতন্ত্রের। রইল শুভেচ্ছা।