ইসলামপুর কলেজে সংঘর্ষে আহত পড়ুয়ারা।বৃহস্পতিবার অভিজিৎ পালের তোলা ছবি।
সরকার বিধানসভায় আইন পাশ করাচ্ছে, সম্পত্তি নষ্ট করা যাবে না। রাত পোহাতেই ইসলামপুরের কলেজে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, অবাধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে। সরকারও তৃণমূলের। ছাত্রছাত্রীরাও তৃণমূলের। কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে এই ঘটনার? ব্যাখ্যা একটাই— উদ্যত স্ববিরোধ।
সম্পত্তি রক্ষার্থে যে বিল বিধানসভায় পেশ করা হয়েছিল, তা বিরোধীশূন্য অবস্থায় পাশ হয়েছে। কারণ, তার আগেই বিধানসভা এক ধুন্ধুমারের সাক্ষী হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, যে কোনও মূল্যে এক সুষ্ঠু শৃঙ্খলার পরিসর কায়েম করা। বিরোধীর আশঙ্কা, এই কঠোর আইন আসলে প্রতিটি ভিন্ন মতাবলম্বী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার হাতিয়ার। বিধানসভায় ধুন্ধুমার তা নিয়েই। বিল পাশের সময় বিরোধীরা সভাকক্ষে ছিলেন না ঠিকই। তবে, থাকলেও ছবিটাকে বদলাতে পারতেন না। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে সরকার অনায়াসেই বিলটি পাশ করিয়ে নিত। কিন্তু, বিরোধী পক্ষকে যতটা অক্লেশে সামলে নেওয়া যাচ্ছে, নিজেকে সামলানো আর ততটা সহজসাধ্য নেই। স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বটেই, আরও নানা ক্ষেত্রেই সরকারকে বার বার অস্বস্তিতে ফেলছে তৃণমূলের অন্দরে বাড়তে থাকা স্ববিরোধ।
এমন নয় যে, তৃণমূল তার স্ববিরোধ নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী নয়। এমনও নয় যে সরকার এই স্ববিরোধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। কখনও শাসকদলের ছাত্রনেতাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কখনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচে সাধারণ কর্মীর হেনস্থার খবর পেয়ে কাউন্সিলরকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। কখনও থানা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কাউন্সিলর পুলিশের হেফাজতে যাচ্ছেন। কখনও ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেত্রীকে খোদ শিক্ষামন্ত্রী তথা দলীয় মহাসচিব কঠোর সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। শাসক দলের এবং সরকারের নেতৃত্ব বার বার একই বার্তা দিচ্ছেন— বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু বার বার মাথাচাড়া দিচ্ছে উদ্যত স্ববিরোধ, বার বার ভেঙে খান খান হচ্ছে যাবতীয় সঙ্কল্প।
উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করতে হচ্ছে, শাসকের অন্দরমহলের কোন্দল কিন্তু ক্রমবর্ধমান। এই কোন্দলকে এখনই তৃণমূলের মুষল পর্ব আখ্যা দেওয়া অতিকথন হবে। কিন্তু, রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির প্রবাহ হীনবল হতে হতে যখন প্রায় শূন্যস্থানে পর্যবসিত, তখন তৃণমূলই যে নানা রূপে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে উদ্যত, তথাপি তৃণমূলই যে অন্যতর ভাবে বিরোধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ এ কথা বলাই যায়।
দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায় নেতৃত্বের রয়েছে ঠিকই। কিন্তু, দল শুধু নেতৃত্বের নয়। দল সাধারণ কর্মীদেরও। তাঁরা যদি দল, সরকার তথা জনগণের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার কথা বিস্মৃত হন তা হলে শুধু নেতৃত্বের পক্ষে সুষ্ঠু শ়ৃঙ্খলার পরিসর কায়েম রাখা সহজ কাজ নয়। স্বয়ং দলনেত্রীর বার্তাও যদি সম্বিত্ ফেরাতে না পারে, তা হলে অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে এই উদ্যত স্ববিরোধ মুষল পর্বের রূপ নেবে না, এ কথা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।