মেডিক্যাল কলেজ তৈরির শর্ত নমনীয় করিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)। ন্যূনতম পাঁচ একর জমি আর আবশ্যিক নহে। তবে, পঠনপাঠন ও প্রশিক্ষণের নানাবিধ কাজের কোনটির জন্য ন্যূনতম কত জায়গা রাখিতে হইবে, তাহা নির্দিষ্ট করা হইয়াছে। ছাত্রদের জন্য ‘স্কিল ল্যাবরেটরি’ বাধ্যতামূলক হইয়াছে, যেখানে তাঁহারা প্রযুক্তির সাহায্যে অস্ত্রোপচার প্রভৃতি চিকিৎসার দক্ষতা অর্জন করিতে পারিবেন। কলেজের সহিত সংযুক্ত হাসপাতালে ন্যূনতম শয্যার সংখ্যা কমানো হইয়াছে। অতিথি শিক্ষক নিয়োগেও অনুমোদন মিলিয়াছে। আশা করা যায়, ইহার ফলে নূতন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা সহজ হইবে। ভারতে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট চিকিৎসক নাই। গ্রাম এবং শহরে চিকিৎসকের বণ্টনেও বৈষম্য বিপুল। প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাব গ্রামীণ, দরিদ্র পরিবারগুলির নিকট এক কঠিন সঙ্কট। তাহার সমাধানে নানা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, কিন্তু চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়াইলে তাহার কোনওটিই কার্যকর হইবে না। বর্তমানে ভারতে প্রায় সত্তর হাজার মেডিক্যাল আসন রহিয়াছে। বিশেষজ্ঞদের মত, আরও অন্তত ত্রিশ হাজার আসন না বাড়াইলে জনসংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট এমবিবিএস চিকিৎসক মিলিবে না।
অতএব সকলের নিকট চিকিৎসা পৌঁছাইতে হইলে রাষ্ট্রকে আরও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করিতে হইবে। প্রশ্ন উঠিয়াছে, বিধি শিথিল করায় মেডিক্যাল শিক্ষার আদর্শ এবং গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হইবে না তো? এ বিষয়ে বিতর্ক চলিতেছে। এক পক্ষের বক্তব্য, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই) ১৯৯৯ সালে যে পরিকাঠামোগত শর্তগুলি প্রণয়ন করিয়াছিল, সেগুলি অনাবশ্যক কঠোর এবং ব্যয়বহুল। তাহার ফলে, এক দিকে চিকিৎসকের সংখ্যায় ঘাটতি রহিয়া গিয়াছে; অপর দিকে বহু ছাত্রছাত্রী চিকিৎসক হইবার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পায় নাই। বেসরকারি কলেজের খরচ চালাইতে টাকার বিনিময়ে ছাত্রভর্তির দুর্নীতি বাড়িয়াছে। তাহার তুলনায় এনএমসি-র নূতন বিধি অধিক যুক্তিসম্মত। অপর পক্ষের দাবি, মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়ানো সমস্যা সমাধানের পন্থা নহে। চিকিৎসক নির্মাণের পদ্ধতি ও দর্শনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সমাজে পড়িয়া থাকে। এনএমসি-র পরিবর্তিত বিধি মেডিক্যাল শিক্ষায় বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহ দিবে। কিন্তু কেবলমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করিলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রের মধ্যে বিক্রেতা-উপভোক্তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হইলে শিক্ষার মান কমিবে, চিকিৎসকের সামাজিক দায়বদ্ধতার বোধও দুর্বল হইবে।
আশঙ্কা অমূলক নহে। ভারতে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকের অভাব-সহ নানা অব্যবস্থা, শিক্ষার নিম্নমান লইয়া বহু অভিযোগ উঠিয়াছে। সরকারি কলেজগুলিতেও পরিকাঠামোর ফাঁক কম নহে। এমতাবস্থায় শর্ত শিথিল করিলে হিতে বিপরীত হইতে পারে। যথেষ্ট শিক্ষক, যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং যথার্থ মূল্যায়ন, এগুলি নিশ্চিত করিতে পারে নাই এমসিআই। এনএমসি-র পরিদর্শন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, তৎপর ও কার্যকর না হইলে কলেজগুলি ‘ডিগ্রির দোকান’-এ পরিণত হইবে। অর্ধশিক্ষিত চিকিৎসক, অনিয়ন্ত্রিত চিকিৎসাব্যবস্থা নাগরিকের ঝুঁকি বাড়াইবে। অনুমোদনের সহজ শর্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব কঠিন করিল।