Pakistan Supreme Court

পুনর্নির্মাণ

ভারতের মতো পাকিস্তানেও, নির্দেশ মানেই যে তাহা যথাবিধি কার্যকর হইবে, এমন নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৫৮
Share:

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বলিয়াছে, সে দেশে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে যে পুরাতন মন্দিরটি ধ্বংস করা হইয়াছে গত বৎসর, দ্রুত তাহা নির্মাণ করিয়া দিতে হইবে। গত ছয় মাস যাবৎ এ বিষয়ে বহু তর্কবিতর্ক চলিয়াছে। জুলাই মাসে যখন পাক সরকার সে দেশের কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডিয়োলজি-র কাছে জানিতে চাহে যে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করিলে কোনও ধর্মনৈতিক সমস্যা আছে কি না, তাহার পর হইতেই বিতর্কের সূত্রপাত। ইসলামাবাদ হাইকোর্টে তিন-তিনটি মামলা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই খারিজ হইয়া যায়। মামলায় অভিযোগ ছিল যে, পাকিস্তানের মতো ইসলামি রাষ্ট্রের মন্দির নির্মাণ করিবার কোনও অধিকার নাই, তবুও সরকার এমন সিদ্ধান্ত লইতে চলিয়াছে। অবশ্যই জনগণের টাকায় হিন্দু মন্দির তৈরির বিষয়টিও উঠিয়া আসে এই সূত্রে। শোনা যায়, ইহাতে ইসলামের অবমাননা হইতে চলিয়াছে। আর বিপরীতে উঠিয়া আসে সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রসঙ্গের নানা দিক। রাষ্ট্রের কর্তব্যের আলোচনা ও তর্কবিতর্কের মধ্যে মামলাটি ক্রমে বিচারবিভাগের ঊর্ধ্বতন অঙ্গনে আসিয়া পড়ে। এই অর্ধবৎসরকালব্যাপী মতসংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা জরুরি।

Advertisement

রায়টির গুরুত্ব আরও বাড়িয়া গিয়াছে, কেননা পাক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা মন্দির পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত সমর্থন করিতে গিয়া বলিয়াছেন, মন্দির-ধ্বংসের ঘটনা আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের মর্যাদাহানির কারণ। সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার মধ্যে যে কোনও দেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদার বিষয়টি যুক্ত, এই পুরাতন কথাটি পুনরায় মান্যতা পাইল পাকিস্তানি প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে। প্রধান বিচারপতি গুলজ়ার আহমদ ইভাকুয়ি প্রপার্টি ট্রাস্ট বোর্ডকে দেশব্যাপী অন্যান্য মন্দিরের নিরাপত্তা দ্রুত নিশ্চিত করিতেও নির্দেশ দিয়াছেন। পাশাপাশি, এই প্রসঙ্গটি তুলিয়া বিদ্বেষ ছড়াইবার জন্য সে দেশের জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের প্রতি পাকিস্তানের অনেকগুলি মানবাধিকার গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজের ক্ষোভ বর্ষিত হইয়াছে।

ভারতের মতো পাকিস্তানেও, নির্দেশ মানেই যে তাহা যথাবিধি কার্যকর হইবে, এমন নহে। একটি মন্দির পুনর্নির্মিত হইতেছে বলিয়াই ভুলিয়া যাওয়া যাইবে না যে, পাকিস্তানে সহস্রাধিক হিন্দু মন্দিরের স্থানে এখন কেবল গোটা-ত্রিশেক মন্দির পূজার্চনার জন্য ব্যবহার হইয়া থাকে। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি দেশে-বিদেশে বহুনিন্দিত। তবে সেই পরিপ্রেক্ষিতেই পাক সুপ্রিম কোর্টের কথাগুলি বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। মন্দ পরিস্থিতির মধ্যেও যখন যুক্তি, বুদ্ধি ও শুভচিন্তা প্রতিষ্ঠা করিতে আগাইয়া আসেন প্রধান বিচারপতি গুলজ়ার আহমদের মতো কেহ, জুলাই মাস হইতে প্রতিটি আদালতেই যখন ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির সারাইবার পক্ষে রায় দেন বিচারকরা, পাকিস্তান বিষয়ে তাহা কিছু বার্তা বহিয়া আনে। বিশেষত পাশের বৃহৎ প্রতিবেশী গণতন্ত্রটিতে যখন একটি ঐতিহাসিক মসজিদ সঙ্ঘবদ্ধ গুন্ডামির দ্বারা ধ্বংস করিবার পর তিন দশক জুড়িয়া মসজিদ পুনর্নির্মাণের বিষয়টি কেবল গৌণ এবং অপ্রয়োজনীয় বলিয়াই বিবেচিত হয়, সেখানে এই সংবাদের গুরুত্ব বিশেষ। ইসলামাবাদ হয়তো দিল্লিকে একটি বার্তা দিতেই চাহিতেছে। দিল্লি কী ভাবিতেছে বার্তা পাইয়া, জানিতে ইচ্ছা করে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement