RSS-Yogi Adityanath

স্পষ্ট বিভাজিকা

রাজনৈতিক মহলের অনুমান, আদিত্যনাথ ২০২৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির জন্য নিজের দাবি পোক্ত করতে আগ্রহী, এবং তিনি ‘হিন্দু হৃদয়সম্রাট’ হওয়ার পরীক্ষিত পথটি বেছে নিচ্ছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭
Share:

মোহন ভাগবত-নিক্ষিপ্ত তিরটি সম্ভবত নিশানায় বিঁধেছে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি বলেছিলেন, রাম মন্দির নির্মাণ করলেই কেউ হিন্দু নেতা হয়ে যান না। রাজনৈতিক জল্পনা ছিল, সরসঙ্ঘচালকের মন্তব্যটি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উদ্দেশে। এই জল্পনার পিছনে কারণ আছে। সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে আদিত্যনাথের সম্পর্কটি সুমধুর নয়। উদাহরণ, উত্তরপ্রদেশে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। যোগী তাকে নিজের শক্তি প্রদর্শনের প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন, এবং আরএসএস কার্যত হাত গুটিয়ে ছিল। ফলাফলে স্পষ্ট, কার রাজনৈতিক জোর কতখানি। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, আদিত্যনাথ ২০২৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির জন্য নিজের দাবি পোক্ত করতে আগ্রহী, এবং তিনি ‘হিন্দু হৃদয়সম্রাট’ হওয়ার পরীক্ষিত পথটি বেছে নিচ্ছেন। কাশী-মথুরা-সম্ভলসমেত উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৫০টি মসজিদকে ঘিরে রাজনীতি চলছে। এ দিকে, বিজেপির ঘোষিত নীতি হল, বাবরি মসজিদের পর আর কোনও ধর্মস্থান সংক্রান্ত রাজনীতিতে দল সরাসরি জড়াবে না। যোগী বিবিধ হিন্দু সংগঠনকে পরোক্ষ মদত দিচ্ছেন বলেই ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান। এই পরিস্থিতিতে যোগীর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় রাশ টানার তাগিদ সঙ্ঘ পরিবারের থাকবে না, তেমন দাবি করা মুশকিল। ভাগবতের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতির তীব্র প্রতিক্রিয়া বলছে, হিন্দু ধর্মগুরুরাও তাঁর মন্তব্যটিকে সে ভাবেই পাঠ করেছেন। হিন্দু সমাজের উপরে আরএসএস বনাম সাধুসন্তদের সংগঠনের নিয়ন্ত্রণের দড়ি টানাটানিতে গোরখনাথ মঠের প্রধান আদিত্যনাথ কোন দিকে, তা স্পষ্ট। ভাগবতের মন্তব্য হিন্দুত্ববাদী শিবিরের অন্তর্বর্তী বিভাজিকাকে প্রকট করল।

Advertisement

আরএসএসের প্রধান মন্দির-মসজিদ রাজনীতির বিরোধিতা করলে তার মধ্যে যে বিপুল দ্বিচারিতা থাকে, তাকে অস্বীকার করা অসম্ভব। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল বটে, কিন্তু সেই রাজনীতির সলতে পাকানোর কাজটি আরএসএস করছিল তারও অন্তত অর্ধ শতক আগে থেকেই। তা হলে কি আডবাণী, বাজপেয়ীর মতো আরএসএসের ঘরের লোকরা মন্দিরের রাজনীতির সুবিধা নিলে সঙ্ঘের আপত্তি নেই, কিন্তু আদিত্যনাথের মতো ‘বহিরাগত’কে তারা সেই সুবিধা দিতে নারাজ? প্রশ্নটির উত্তর সম্ভবত এতখানি সরলরৈখিক নয়। শতবর্ষী সংগঠনটি যে ভাবে ভারতকল্পনা করে, তা বিজেপির রাজনৈতিক ভারতকল্পনার চেয়ে জটিলতর; হিন্দু সন্তদের চেয়ে তো বটেই। এবং, একই সঙ্গে ব্যক্তি মোহন ভাগবতের কথাও অস্বীকার করা যাবে না— বিগত কয়েক বছরে তাঁর বিবিধ মন্তব্যকে ধারাবাহিক ভাবে দেখলে অনুমান করা চলে যে, তিনি সংগঠনের ডিএনএ অপরিবর্তিত রেখেই একটি নতুনতর পথের সন্ধান করছেন। তাঁর বর্তমান বক্তব্যটিকেও কি সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দেখা বিধেয়?

মসজিদ ভেঙে মন্দির গড়লে তার রাজনৈতিক লাভ কতখানি, তা বিলক্ষণ জানা। কিন্তু, ভেঙেচুরে সব দখল করে নিতে চাইলে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে বাধা পড়ে। এবং, সেই পথে লাগামহীন চলতে থাকলে তার কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা-ও কল্পনাতীত— অখণ্ড হিন্দু সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন শেষ অবধি বিবিধ খণ্ডজাতীয়তাবাদের জ্বালানি হয়ে উঠবে কি না, বলা মুশকিল। শতাব্দীপ্রাচীন আরএসএস সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার যাত্রাপথটি অতিক্রম করেছে। তারা সম্ভবত জানে, আধিপত্য বজায় রাখার শ্রেষ্ঠ পন্থা সর্বগ্রাসী দখল নয়, বরং সংখ্যালঘুদের জন্য অধীনতামূলক নাগরিকত্বের পরিসরটি খোলা রাখা। তার জন্য সর্ব ক্ষণ একটা নিচু তারের উত্তেজনা প্রয়োজন, আগ্রাসী হুঙ্কার নয়। প্রাক্‌-মোদী পর্বের বিজেপি নেতারা আরএসএসের প্রজ্ঞাকে কখনও অস্বীকার করেননি। মোদী-উত্তর যুগের নেতা আদিত্যনাথ কি সংঘাতের পথে হাঁটবেন?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement