Donald Trump

যাত্রা নাস্তি

নানা দেশের নির্দেশিকার মূল সুরটি এক: এই সময়ে আমেরিকা যাওয়ায় ঝুঁকি আছে, এমনকি ভিসা ও ভ্রমণ-সংক্রান্ত কাগজপত্র সঙ্গে থাকলেও।

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩২
Share:
ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

মানুষ কোন দেশে বেড়াতে যেতে চায়? অবশ্যই যে দেশ সুন্দর, প্রকৃতি যেখানে অকৃপণ সেজে আছে, ভ্রমণের সুযোগসুবিধাও যেখানে ভাল ও বিস্তর। উল্টো দিকে সেই দেশে যেতে মানুষ ভয় পায়, যেখানে ঢুকতে-বেরোতে পদে পদে বাধা, অভিবাসন ও ভ্রমণ নিয়ে গুচ্ছের ঘোষিত ও অঘোষিত বিধিনিষেধ, এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মুখটি গোমড়া ও তিতিবিরক্ত। হাল আমলে আমেরিকার দশা হয়েছে সেই রকম। সরকার, সীমান্তপ্রহরা ও নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের হাতে দেশের মানুষেরই ধরপাকড়, গ্রেফতারি বা আটকে রাখার মতো ঘটনা ক্রমাগত ঘটে চলেছে, পাশাপাশি অন্য দেশের নাগরিকের হেনস্থাও। এই পরিস্থিতিতে কানাডা, মেক্সিকো, ব্রিটেন এবং ইউরোপের বহু দেশ নিজেদের নাগরিকদের সতর্ক করে নতুন ভ্রমণ-নির্দেশিকা জারি করেছে— আমেরিকা যেতে চাইলে সাধু সাবধান।

নানা দেশের নির্দেশিকার মূল সুরটি এক: এই সময়ে আমেরিকা যাওয়ায় ঝুঁকি আছে, এমনকি ভিসা ও ভ্রমণ-সংক্রান্ত কাগজপত্র সঙ্গে থাকলেও। বুঝতে অসুবিধা হয় না, ইঙ্গিতটি আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার শাসনে অতিনিয়ন্ত্রণের দিকে, ভ্রমণকেও যা সন্দেহের আতশকাচ ছাড়া দেখতে পাচ্ছে না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ট্রাম্প আমলের একুশে আইন: পুং ও স্ত্রী দুই লিঙ্গপরিচয়ের বাইরে আর কোনও কিছু বরদাস্ত করা হবে না, পাসপোর্টে পর্যটকের জন্মকালীন ও ভ্রমণকালীন লিঙ্গ-পরিচিতি না মিললে সমূহ বিপদ। ইউরোপের কয়েকটি দেশ আলাদা করে এ নিয়ে সতর্ক করেছে, লিঙ্গনিরপেক্ষ, লিঙ্গ-ধারণায় অবিশ্বাসী এবং ট্রান্স-মানুষেরা আমেরিকায় গেলে বিপদে পড়তে পারেন; হতে পারে গ্রেফতারি, কারাবাসও। সম্প্রতি আমেরিকার মাটিতে ব্রিটিশ, জার্মান ও অন্য নাগরিকদের বিপদের মুখে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে, এবং দেখা গিয়েছে, লিঙ্গ বা যৌন পরিচয় তো অনেক পরের কথা, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও স্রেফ আমেরিকান কর্তৃপক্ষের পছন্দমতো উত্তর না পাওয়ায়, কিংবা ‘বহিরাগত’দের হাবভাব ভাল না লাগার কারণেও আটক বা হেনস্থা করা হচ্ছে।

ভৌগোলিক নৈকট্য হেতু আমেরিকার সঙ্গে যে দুই দেশের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ-যোগাযোগ, সেই কানাডা ও মেক্সিকোকে নিয়ে ট্রাম্পের মনোভাব এখন সবার জানা। মেক্সিকো থেকে শরণার্থী-স্রোত আটকাতে তিনি আগেই দেওয়াল তুলেছিলেন, এ বার কানাডাকে দাঁড় করিয়েছেন বিপুল বাণিজ্যিক অন্তরায়ের সামনে। কিন্তু শুধু শিক্ষা, ব্যবসা বা আশ্রয়ের কারণেই মানুষ আমেরিকা যায় না, ভ্রমণও এক বিরাট অর্থনৈতিক পণ্য তথা পরিষেবা। এই সত্যটি ট্রাম্প জমানার আমেরিকা বুঝেও বুঝছে না, যদিও এরই মধ্যে আমেরিকার ভ্রমণ-অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়েছে। কানাডা ও মেক্সিকো থেকে তো বটেই, ব্রিটেন জার্মানি ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলি থেকেও পর্যটন জোর ধাক্কা খেয়েছে; ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও এশিয়ার নানা দেশে ইউরোপের আগ্রহ বাড়ছে। স্বাভাবিক, বেড়াতে গিয়ে কেউ বিপদে পড়তে চান না, বিপদের আশঙ্কাও যখন আগে থেকেই জানা। ট্রাম্প কখন এ সত্য বুঝবেন কে জানে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র নিয়ে তিনি ভাবিত নন, ছিলেনও না কখনও। এক ভ্রমণ-ব্যবসা সূত্রে আমেরিকার ডলার-ভাঁড়ারে টান পড়লে হয়তো এই ভ্রমণ-দুরবস্থার ছবিটা পাল্টাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন