ফাইল চিত্র।
সিজ়ারের স্ত্রীকে যে কোনও সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকিতেই হইবে। প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডের কার্যকালের শেষ লগ্নটিও যে ভাবে বিতর্কে নিমজ্জিত হইল, সিজ়ারের মাপকাঠিতে তাহা দুর্ভাগ্যজনক। কোভিড পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক পরিষেবা প্রাপ্তির বিষয়টি লইয়া সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করিয়া কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়াছে, শীর্ষ আদালতের নিকট তাহাদের পরিকল্পনা জানাইতে হইবে। আপাতদৃষ্টিতে সিদ্ধান্তটি জনস্বার্থের অনুকূল। কিন্তু, প্রশ্ন উঠিল যে, বেশ কয়েকটি হাই কোর্ট যখন সে বিষয়ে অভিযোগের বিচার করিতেছে— কেন্দ্রের সমালোচনাও আদালতে শোনা যাইতেছে— তখনই যদি সুপ্রিম কোর্ট গোটা বিষয়টি নিজের আওতায় লইতে চাহে, তাহাতে হাই কোর্টগুলির এক্তিয়ার খর্ব হইবার সম্ভাবনা দেখা দেয় না কি? এবং সংশয় হইতে পারে যে, ইহার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থতার সমালোচনায় বিদ্ধ হইবার অস্বস্তি হইতে মুক্তি পাইবে না তো? সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অবশ্য স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়াছে, তেমন কোনও উদ্দেশ্য আদালতের নাই। মহামান্য শীর্ষ আদালতের নিরপেক্ষতা, সদিচ্ছা ও উদ্দেশ্য লইয়া কোনও সংশয়ের অবকাশ না রাখিয়া সবিনয় নিবেদন— সত্যই যেন হাই কোর্টগুলি কাজ করিতে পারে।
কোভিড-এর ব্যবস্থাপনার উপর নজরদারির কাজে সুপ্রিম কোর্টের তুলনায় হাই কোর্টের সুবিধা হইল, স্থানীয় অবস্থা বিষয়ে হাই কোর্টের স্বাভাবিক কারণেই অধিকতর অবগত হইবার কথা। সেই কারণেও হাই কোর্টগুলির হাতে এই মামলা থাকাই বিধেয়। পদ্ধতিগত ভাবেও, হাই কোর্টের কাজের পরিসরে সুপ্রিম কোর্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করিতেছে, এমন সংশয়ের উদ্রেকও হইতে দেওয়া চলে না। সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তির শুভ্রতায় স্বার্থপঙ্কিল রাজনীতির ছায়ামাত্র না পড়িতে পারে, তাহা নিশ্চিত করাই কর্তব্য। উদ্বেগের বিষয়, কোভিড-সংক্রান্ত পরিষেবা লইয়া স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করিবার সিদ্ধান্তটি শীর্ষ আদালতের প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশের নিকটই ‘অনাবশ্যক’ প্রতিভাত হইয়াছে। তাঁহারা প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করিয়াছেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এই বিষয়ে পাল্টা মামলাও করিয়াছে। শীর্ষ আদালতের অবস্থান বুঝিতে ভুল হইতেও যদি এই অনাস্থা জন্মে, তবু তাহা গভীর উদ্বেগের কারণ।
ঘটনা হইল, শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত লইয়া সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার প্রশ্ন উঠিয়াছে। যেমন, কিছু দিন পূর্বে পঞ্জাবের কৃষক আন্দোলনের দাবি বিবেচনার জন্য যে কমিটি সুপ্রিম কোর্ট গঠন করিয়াছিল, তাহার সদস্যরা প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করিয়াছেন। পঞ্জাবের চাষিদের নিকট সেই কমিটি গ্রহণযোগ্য হয় নাই। আবার, প্রায় এক বছর আগে প্রধান বিচারপতি বোবডে প্রশ্ন করিয়াছিলেন, সরকার যখন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করিতেছে, তখন আর নগদ দেওয়ার কী প্রয়োজন? সেই সময়েই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যখন সুপ্রিম কোর্টকে জানান যে, কোনও পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নাই, সকলের আশ্রয়, অথবা পরিবহণের ব্যবস্থা হইয়াছে, তখন সেই বক্তব্য আদালত মানিয়া লইয়াছিল। উদাহরণগুলি ভরসা জাগায় না। শীর্ষ আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয় যে, মানুষের আস্থার মর্যাদারক্ষার গুরুদায়িত্ব আদালতের উপরেই ন্যস্ত। কোনও এক প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহরু বলিয়াছিলেন, শুধু ন্যায়বিচার করিলেই চলিবে না— তাহা যাহাতে জনসমক্ষে ন্যায়বিচার বলিয়া প্রতিভাত হয়, তাহাও নিশ্চিত করিতে হইবে। কথাটি স্মর্তব্য। দেশের শীর্ষ আদালত যে প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকিয়া সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করিতেছে, এই কথাটি সাধারণের নিকট স্পষ্ট হওয়া জরুরি।