Education System

নতুন পাঠ

স্কুলের ক্লাসকে কী করে ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, আরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে আনা যায় ক্লাসঘরে, সে নিয়ে এ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৮
Share:

লেখাপড়ার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়াতে সম্প্রতি কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুল পাঠদানের পরিকল্পনায় (লেসন প্ল্যানিং) শরিক করেছে ছাত্রছাত্রীদেরও। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির দশ জন ছাত্রছাত্রী, এবং দশ জন শিক্ষককে নিয়ে তৈরি হয়েছে পাঠ্যসূচি পরিকল্পনার কমিটি। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি ক্লাসে পাঠদানকে কী ভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায়, ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ তৈরি করা যায় পাঠ্য বিষয়ে, তা নির্ধারণ করবে ওই কমিটি। উচ্চ প্রাথমিক স্তরের ক্লাসগুলির ছাত্রছাত্রীদের থেকেও প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, এ ভাবে পঠনপাঠনে গণতান্ত্রিক কাঠামো আনলে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়বে। এক দিকে যেমন ছাত্রছাত্রীদের থেকে আরও সক্রিয়তা পাওয়া যেতে পারে, অন্য দিকে তেমনই শিক্ষকদের থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে নমনীয়তা। ছাত্রছাত্রীর মতামত শোনার ইচ্ছা, তাকে মূল্য দেওয়ার অভ্যাস সব শিক্ষকের মধ্যে নেই। নিজেকে শিক্ষাদাতা, এবং ছাত্রছাত্রীকে গ্রহীতা বলে চিন্তা করতেই অধিকাংশ শিক্ষক অভ্যস্ত। সেখানে পাঠদানের পরিকল্পনা কমিটিতে শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের সমান মর্যাদায় স্থান দেওয়া স্কুলে বড়-ছোটর ভেদ ঘুচিয়ে দেয়। নয়া প্রযুক্তির ব্যবহারের মতো কোনও কোনও বিষয়ে কিশোর-কিশোরীরা তাদের শিক্ষকদের চাইতেও অধিক দক্ষ। ক্লাসে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষণীয় বিষয়কে বহুগুণ বেশি সহজবোধ্য এবং আকর্ষণীয় করতে পারে। তাই শিক্ষককেও শিখতে হবে ছাত্রছাত্রীদের থেকে। অর্থাৎ শিক্ষা হয়ে উঠবে দ্বিমুখী, বা বহুমুখী।

Advertisement

স্কুলের ক্লাসকে কী করে ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, আরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে আনা যায় ক্লাসঘরে, সে নিয়ে এ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সরকারি ও বেসরকারি, সব রকম স্কুলেই। সাধারণত ক্লাসের পাশাপাশি নানা ধরনের ‘প্রোজেক্ট’ করান শিক্ষকেরা, ছুটির সময়ে বিজ্ঞান বা ভাষার বিশেষ শিবির করেন। কখনও বিজ্ঞান বা শিল্পপ্রতিভার বিকাশ ঘটানোর নানা প্রকল্প বা প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেন। পাশাপাশি, স্কুলের জন্য দায়িত্ববোধ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে স্কুলের পরিচালনার দায়িত্ব শিশুদের সংসদের উপর ন্যস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সমস্যা এই যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো খাতায়-কলমে থেকে যায়, শিক্ষকরা একটিমাত্র লক্ষ্যকেই শিরোধার্য করেন— সিলেবাস শেষ করা।

আক্ষেপ, পাঠ্যবিষয় বুঝতে না পারার দায় শিক্ষকেরা সাধারণত সম্পূর্ণ চাপিয়ে দেন শিশু ও তার অভিভাবকদের উপরে। অথচ, অর্থহীন পাঠের গুরুভার বোঝা শিশুর কাঁধে চাপানোর দায় কি শিক্ষকেরও নয়? তিনিই পারেন শিক্ষাকে ‘বাহন’ করে তুলতে। স্কুলের ব্যর্থতা এক ভয়ানক সঙ্কট তৈরি করেছে। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ার পিছনে রয়েছে শিশুর স্কুল-বিমুখতা। এই পরিস্থিতিতে পাঠ-পরিকল্পনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রতিটি স্কুলেই হওয়া দরকার। সেই কাজে শিক্ষকও হবেন ছাত্র, ছাত্রও হবে শিক্ষক। শামিল হতে পারেন অভিভাবক এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও। ক্লাসের শিক্ষা যে কেবল পরীক্ষার প্রস্তুতি নয়, জ্ঞান আহরণের একটি দীর্ঘ, রহস্যময় যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ, সেই বোধ শিশুর মধ্যে জাগাতে হবে স্কুলকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement