CBI-ED Investigations

নিরপেক্ষ?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাম্প্রতিক কালে যতই বড় মুখ করে বলুন তাঁর আমলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ, বাস্তব ভিন্ন কথা বলছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৪:৪১
Share:

পুলিশ ও প্রশাসন যখন অপরাধের কিনারা করতে ব্যর্থ হয়, তখন ডাক পড়ে ইডি বা সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। ভারতীয় নাগরিকেরা বিশ্বাস করেন,
এদের তদন্ত হবে আগাগোড়া রাজনীতির প্রভাবমুক্ত। তবে ভারতে আদর্শ আর প্রকৃতের মধ্যে তফাত অনেক; তাই ইদানীং প্রায়ই চোখে পড়ছে, ইডি-সিবিআই’ও তিরস্কৃত হচ্ছে আদালতে। বিআরএস নেত্রী, তেলঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা কে কবিতাকে সদ্য জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট, আবগারি নীতি সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ইডি ও সিবিআইয়ের করা মামলায় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তুলেছে তদন্তের চরিত্র নিয়ে, কারণ দেখা যাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা মামলার অন্যতম অভিযুক্তকে গোড়ায় রাজসাক্ষী করে পরে তাকেই আবার পেশ করেছে সাক্ষী হিসাবে। আজ যাকে ধরলাম কাল তাকে ছেড়ে দিলাম, যখন যেমন মনে হল তেমন ভাবে সাক্ষী বা তদন্তের খুঁটিনাটি পাল্টালাম, এই প্রবণতাটি ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের আশা জোগায় না, বরং সন্দেহের উদ্রেক করে।

Advertisement

এই সন্দেহ অমূলক নয়। কে কবিতার ক্ষেত্রে তো তবু তদন্তপ্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি, সার্বিক ভাবে বিজেপি আমলে বিরোধীরা বারংবার অভিযোগ করছেন, ইডি বা সিবিআই পরোক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারেরই হাত শক্ত করছে, তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বিরোধিতা নির্মূলের কাজে। সম্প্রতি নানা রাজ্যে, বিশেষত অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেখা গিয়েছে ইডি বা সিবিআইয়ের পদধ্বনি। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এই সবই বিরোধীদের ভয় দেখানোর বা চাপ দেওয়ার চেষ্টা, বা জোর করে বিজেপি জোটে নিয়ে আসার কৌশল। মহারাষ্ট্রে দু’বছর আগে শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্দে এবং গত বছর এনসিপি-র অজিত পওয়ারের সদলবলে বিজেপিতে যোগদানের পর কথা উঠেছিল, ইডি-সিবিআইয়ের ভূত তাড়া করছিল বলেই এঁরা বিজেপির কাছে নিজেদের সঁপে দিয়েছেন। কিমাশ্চর্যম্‌, যে এনসিপি নেতা প্রফুল্ল পটেল গত বছর জুলাই অবধিও ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স-এয়ার ইন্ডিয়া সংযুক্তকরণের মামলায় একের পর এক সমনে ব্যতিব্যস্ত হচ্ছিলেন, তিনিই পরে সিবিআইয়ের ক্লিন চিট পেয়েছেন। অন্য দিকে, আম আদমি পার্টি গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই সরব অরবিন্দ কেজরীওয়াল-সহ আপ নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ধরপাকড় নিয়ে: ইডি-সিবিআই পাঠানো আসলে বিজেপির হাতে না পেয়ে ভাতে মারতে চাওয়ার রাজনৈতিক চাল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাম্প্রতিক কালে যতই বড় মুখ করে বলুন তাঁর আমলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ, বাস্তব ভিন্ন কথা বলছে। গত বছর নভেম্বরে রাজস্থানের অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো দু’জন ইডি আধিকারিককে গ্রেফতারও করেছিল, এক চিট ফান্ড মামলায় তাঁরা পনেরো লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন! এই প্রতিটি উদাহরণকে যদি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সুদীর্ঘ ঐতিহ্যে এক-একটি দাগ ধরতে হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের ধামাধরা ও হাতিয়ার হিসাবে তাদের ভূমিকাকে তা হলে বলতে হয় অমোচনীয় কলঙ্ক। কেন্দ্র ও বহু ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনও যখন অভিযুক্ত হিসাবে কাঠগড়ায়, তখন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ন্যায়বিচারের পথে আদালতেরও আগে এরাই ছিল ভরসা। সেই বিশ্বাসের জায়গাটি ভেঙে যাওয়ার মতো দুর্ভাগ্য আর নেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement