Gautam Adani in Bribery Case

নিতান্ত ব্যক্তিগত

বিভিন্ন সংবাদসূত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে গৌতম আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি; ২০২২ সালে সেই সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ১২,১০০ কোটি ডলারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫ ০৫:০৫
Share:

বিশ্বের দুই বৃহৎ গণতন্ত্রের দুই শীর্ষ নেতা যখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন, তখন সেই আলোচনায় কোনও ব্যক্তিবিশেষের প্রসঙ্গ আসে না— ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে কথাটি বলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবিশেষের নাম গৌতম শান্তিলাল আদানি। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর বিষয়ে প্রশ্ন উঠল, কারণ আমেরিকার সিকিয়োরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গত নভেম্বরে আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল যে, ভারতে সৌর বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বরাত আদায় করতে গৌতম আদানি ও তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র সাগর ভারতে বিভিন্ন সরকারি আধিকারিককে মোট পঁচিশ কোটি ডলারের ঘুষ দিয়েছেন, কিন্তু সে কথাটি আমেরিকার ব্যাঙ্ক ও বিনিয়োগকারীদের থেকে গোপন রেখেছেন। আমেরিকার বাজার থেকে এই প্রকল্পের জন্য বিপুল বিনিয়োগ ও ঋণ সংগ্রহ করেছেন আদানিরা, সে কারণেই সে দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি ও ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস তাঁদের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেছে। ভারতে আদানিদের কাছে সে নোটিস পেশ করার জন্য আমেরিকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদনও করেছে। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন, আদানির প্রশ্নটি নিতান্ত ব্যক্তিবিশেষের নয়— তার সঙ্গে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ প্রশাসন, দুর্নীতি ইত্যাদি অনেকগুলি বিষয় জড়িয়ে আছে; এবং তা জড়িয়েছে আন্তর্জাতিক পুঁজির বাজারের সুতোয়।

Advertisement

নিন্দক বলতে পারে, বহু ক্ষেত্রেই গৌতম আদানি প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য। সে অভিযোগের সবই অবশ্য সমাপতন। যেমন, বিভিন্ন সংবাদসূত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে গৌতম আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি; ২০২২ সালে সেই সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ১২,১০০ কোটি ডলারে। ২০১৪ সালে তিনি ধনীতম ভারতীয়দের তালিকায় দশম স্থানে ছিলেন, ২০২২-এ স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তির শিরোপা পেয়েছিলেন। কিন্তু, আদানির উত্থানের সঙ্গে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়কালটি সমাপতিত হলেই যে তা নিয়ে তির্যক প্রশ্ন করতে হবে, এমন তো নয়। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যে সব দেশে সফরে গিয়েছিলেন, তার প্রতিটিতেই দেখা গিয়েছিল আদানিকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা অথবা ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় জি২০ বৈঠক, বিভিন্ন উপলক্ষে আদানিকে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর পাশেই। নিন্দককে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, সরকারি সূত্র অনুসারে, কোনও সফরেই সরকারি প্রতিনিধি তালিকায় আদানি ছিলেন না। স্বাধীন দুনিয়ার স্বাধীন নাগরিক হিসাবে যে কোনও জায়গায় যাওয়ার অধিকার তাঁর ছিল এবং আছে। প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালীন তাঁকে দেখা গিয়েছে বলেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর সবিশেষ প্রীতিভাজন, এমন দাবি করলে সুস্থ মস্তিষ্কে তা মেনে নেওয়া অসম্ভব।

নিন্দক যতই বলুক যে, বিভিন্ন দেশে প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরেই আদানি সেখানে বড় মাপের বরাত পেয়েছেন; অথবা যতই কেনিয়া থেকে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ থেকে তানজ়ানিয়ায় ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের উদাহরণ দিক— সেই নিন্দকের মুখের উপরে বলে দিতে হবে যে, কোনও অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি, অতএব এ-হেন জল্পনা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পরে প্রধানমন্ত্রীর মৌন নিয়েও নিন্দক যদি প্রশ্ন তোলে, সে ক্ষেত্রেও বলার যে, অভিযোগ তো প্রমাণ হয়নি। তবে কিনা, শীর্ষ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হলে যাবতীয় সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকা জরুরি। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ঘুষ দেওয়া থেকে শেয়ার বাজারে জালিয়াতির মতো হরেক অনিয়মের অভিযোগ উঠেই চলেছে, তাঁর সঙ্গে বারে বারেই প্রধানমন্ত্রীর নামটি জড়িয়ে ফেলার সুযোগ নিন্দককে দেওয়াই বা কেন? কী বা এমন বাধ্যবাধকতা আছে যে, নিতান্ত এক ব্যক্তিবিশেষের থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজের নামটিকে কিছুতেই বিচ্যুত করতে পারেন না?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement