Paralympics 2024

আর এক লড়াই

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের নিয়ে সমাজের মনোভাব বাহ্যত অনেকটা পাল্টালেও, তাঁদের সহ-মানুষ ও সম-মানুষ হিসাবে গ্রহণ করার যাত্রায় সমাজ এখনও পিছিয়ে— বিশেষত ভারতের সমাজ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৩৯
Share:

আবারও একটি অলিম্পিক্স দোরগোড়ায়— গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সের দু’সপ্তাহ পর আগামী কাল ফ্রান্সেই ২০২৪-এর প্যারালিম্পিক্সের উদ্বোধন। এ কথা এখন আর অজানা নয় যে, প্যারালিম্পিক্স আসলে বিশ্বের নানা দেশের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ক্রীড়াবিদদের প্রতিভা প্রদর্শনের শ্রেষ্ঠ ক্ষেত্র, গণমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে এঁদের জীবনসংগ্রাম, হাল না-ছাড়ার লড়াই একুশ শতকের কিংবদন্তিতে পরিণত। হুইলচেয়ারে বসে এক দল খেলোয়াড় অনায়াসে বাস্কেটবল, টেনিস বা রাগবি খেলে যাচ্ছেন, দুই হাত না থাকলেও পায়ের আঙুলে তির ছুড়ে লক্ষ্যভেদ করছেন তিরন্দাজেরা, দৃষ্টিহীনরা দাপাচ্ছেন ফুটবল মাঠ, কৃত্রিম পা নিয়ে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে দৌড়চ্ছেন কত জন— এই দৃশ্যগুলি শিখিয়ে যায় কী করে জয় করতে হয় প্রতিবন্ধকতা, পূরণ করতে হয় স্বপ্ন। বুঝিয়ে দেয়, অসম্ভব বলে সত্যিই কিছু নেই।

Advertisement

আরও বড় তার সামাজিক বার্তাটিও। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের নিয়ে সমাজের মনোভাব বাহ্যত অনেকটা পাল্টালেও, তাঁদের সহ-মানুষ ও সম-মানুষ হিসাবে গ্রহণ করার যাত্রায় সমাজ এখনও পিছিয়ে— বিশেষত ভারতের সমাজ। ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি থেকে ‘বিশেষ ভাবে সক্ষম’ শব্দবন্ধে উত্তরণ নিশ্চয়ই সমাজের সংবেদনশীলতা ও সমানুভূতির পরিচায়ক, কিন্তু তা কতটা আন্তরিক সে প্রশ্ন থেকেই যায়, না হলে এই মানুষদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃশ্যমানতা আজ আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল। আজও বিশেষ ভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে তাঁদের মা-বাবা ও কাছের মানুষদের এক ধরনের গোপনীয়তা অবলম্বন করতে হয়, যে কোনও সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানে তাঁদের যোগদান এখনও অনায়াস ও সহজ হয়নি। সমাজ আজও এঁদের প্রতি ছুড়ে দেয় অনুদার কৌতূহল। যে মেয়েটি পায়ের আঙুলে কলম গুঁজে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় লিখছে, তার কথা জানতে পেরে সুস্থ স্বাভাবিক নাগরিকদের যে প্রতিক্রিয়া তাতে অনুকম্পাই মিশে থাকে বেশি। রাষ্ট্রও এঁদের জন্য প্রথাগত কিছু বন্দোবস্তের বাইরে বেশি ভাবে না— এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ‘দিব্যাঙ্গ’ বলে ডাকার পরেও। এ শুধু মানবাধিকারেরই লঙ্ঘন নয়, মানবসম্পদেরও অবহেলা— প্রকৃত অর্থে সমাজ পাশে এসে দাঁড়ালে এঁরাও হতে পারেন শিক্ষক, বিজ্ঞানী, শিল্পী বা অন্য কিছু।

হতে পারেন দুর্দান্ত খেলোয়াড়ও। প্যারালিম্পিক্সের মঞ্চ তারই প্রমাণ। এও মনে রাখা দরকার, প্যারালিম্পিক্সের মঞ্চে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সাফল্য অলিম্পিক্সের তুলনায় অনেক বেশি। টোকিয়ো অলিম্পিক্স থেকে তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন ১৯টি পদক: ৫টি সোনা, ৮টি রুপো, ৬টি ব্রোঞ্জ। এ বছর প্যারালিম্পিক্সে যোগ দিয়েছেন ৮৪ জন ভারতীয় ক্রীড়াবিদ, পদক-সম্ভাবনাও অনেক বেশি বলে ভাবা হচ্ছে। তবু প্রশ্ন জাগে, টোকিয়ো অলিম্পিক্সে জ্যাভলিনে সোনা ও এ বার প্যারিসে রুপো জয়ী নীরজ চোপড়াকে ঘিরে যত আলো, প্যারালিম্পিয়ান সুমিত অন্তিলকে ঘিরেও কি ততটাই? অথচ তিনিও টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে জ্যাভলিনে সোনা জয়ী, প্যারিসেও নামছেন প্যারালিম্পিক্স বিশ্বরেকর্ড গড়ার প্রত্যয় নিয়ে। এঁরা সমাজের অনুগ্রহ চান না, দাবি করেন প্রতিভার স্বীকৃতি। সমাজ ও রাষ্ট্র তাঁদের এই সক্ষমতাকে সম্মান করুক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement