Election Violence

খেলা দখলের খেলা

রবিবার রাজধানী দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিরোধী দলগুলির সভা থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা উঠে এসেছে। কথাটি এই যে, সব প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ের জমি সমান না হলে নির্বাচন অবাধ থাকে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

অবাধ নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টির রকমারি প্রকরণ বহু কাল ধরেই এ দেশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রত্যক্ষ হিংসা, হুমকি, ভোট ছিনতাই ইত্যাদির পাশাপাশি নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করার প্রচ্ছন্ন নানা কৌশলের সঙ্গেও নাগরিকরা বিলক্ষণ পরিচিত। গত শতাব্দীর আশির দশকে এই রাজ্যে এমনকি ‘বৈজ্ঞানিক রিগিং’ নামক বিচিত্র কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ অভিধাটি সুপ্রচলিত হয়েছিল। সমস্ত ক্ষেত্রেই এই সব প্রক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা নিতেন শাসকরাই। সেটা স্বাভাবিক ও অনিবার্য, কারণ ক্ষমতা শাসকের হাতে, আর ক্ষমতা ছাড়া জবরদস্তি করা যায় না। এই কারণেই বিরোধীরাও কোনও কোনও অঞ্চলে জবরদস্তি বা কারচুপি করতেন, এখনও করেন, সেখানে তাঁদের ক্ষমতা আছে। কিন্তু ভারতের বর্তমান শাসকরা বোধ করি কেবলমাত্র এই সব পুরনো তরিকাতে ভরসা রাখতে পারেননি বা চাননি, তাঁরা নির্বাচনী অমৃতকলসটি নিজেদের দখলে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে সরাসরি এবং সর্বপ্রকারে কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর। মনে হয়, নিছক খেলায় কারচুপিতে তাঁদের শান্তি বা স্বস্তি নেই, তাঁদের লক্ষ্য খেলাটিকে দখল করে নেওয়া।

Advertisement

এই পরিপ্রেক্ষিতেই রবিবার রাজধানী দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিরোধী দলগুলির সভা থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা উঠে এসেছে। কথাটি এই যে, সব প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ের জমি সমান না হলে নির্বাচন অবাধ থাকে না। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ: কেন্দ্রীয় শাসকরা সেই সমান জমিটিকে সম্পূর্ণ অসমান করে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটিকেই ভয়ানক ভাবে বিপর্যস্ত করছেন। এই অভিযোগের পক্ষে ‘পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ’ প্রবল। রাষ্ট্রক্ষমতা কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে, বিশেষত তাদের প্রধান দল ও নেতৃত্বকে দুর্বল, নাজেহাল, বিপন্ন করে তুলতে পারলে শুরুতেই বিপুল সুবিধা আদায় করে নেওয়া যায়, এই সত্যটিকেই বর্তমান শাসকরা সম্পূর্ণ আত্মস্থ করে নিয়েছেন। বিরোধী নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের নামে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে যে কর্মকাণ্ড চলছে, যে ভাবে চলছে, তা দেখে কেউ যদি মনে করেন, ওই সংস্থাগুলিও ভোটের লড়াইয়ে নেমে গিয়েছে, সেই ধারণাকে অমূলক বলা কঠিন হবে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি নিজেদের মাথায় অতিরিক্ত বোঝা নিয়ে ফেলছে— সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যটি যে ঠিক এই সময়েই উচ্চারিত হল, তার কোনও বিশেষ তাৎপর্য নেই কি? অন্য দিকে, ‘প্রধান’ বিরোধী দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আয়কর দফতরের আকস্মিক অতি-তৎপরতাও শুরু হয়েছে ঠিক নির্বাচনের পূর্বলগ্নে। তাদের আর্থিক সংস্থান আটকে দিয়ে ব্যয়সাধ্য নির্বাচনের সময় বিপাকে ফেলাই যে এই তৎপরতার প্রকৃত লক্ষ্য, এমন একটি সংশয় অনিবার্য ও অপ্রতিরোধ্য।

দুর্নীতির তদন্ত বা বকেয়া আয়কর উদ্ধার যে একটি প্রয়োজনীয় কাজ, সে-কথা বলবার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেই কাজ কী ভাবে পরিচালিত হবে, বেছে বেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নেতাদের বিরুদ্ধেই সেই কর্মকাণ্ড চালিত হবে কেন, ঠিক নির্বাচনের আগেই সেই উদ্যোগ তুঙ্গে উঠবে কেন— এই প্রশ্নগুলির কোনও সদুত্তর নেই। নেই বলেই সম্ভবত শাসকরাও শেষ অবধি এক পা পিছিয়ে আসতে চাইছেন। সোমবার আয়কর দফতর জানিয়েছে যে, আয়কর নিয়ে নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক ব্যবস্থা করা হবে না! দুই আর দুইয়ে চার করলে একটি ধারণাই স্বাভাবিক: শাসকরা ভয় পেয়েছেন যে, বিরোধী-দমনের এই উৎকট বাড়াবাড়ি দেখে ভোটদাতারা বিরূপ হতে পারেন। বিপক্ষের নেতা-মন্ত্রীদের ধরে ধরে কারাগারে পাঠানোর হানাদারির দৃশ্যগুলিও কি— নিতান্ত অন্ধ ‘ভক্ত’ ছাড়া— নাগরিকদের বিরূপ করবে না? সরকারি ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের শেষ করে দেওয়া গেলে আর নির্বাচনের দরকার কী, সেই প্রশ্নও— ‘ভক্ত’বৃন্দ ছাড়া— সমস্ত ভারতবাসীর মনে উঠবে বইকি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement