UGC

গুণগত মানের প্রশ্ন

নতুন ব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষায় অনলাইন বা ‘হাইব্রিড মোড’-এর প্রসঙ্গটি এসেছে। অতিমারি কালে প্রমাণিত, এখনও শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার বিকল্প অনলাইন শিক্ষা হয়ে উঠতে পারেনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ ০৬:৪৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

উচ্চশিক্ষা, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অতঃপর আরও নমনীয় হবে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্নাতকোত্তর স্তরের যে পাঠক্রম এবং ক্রেডিট কাঠামো প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, স্নাতক স্তরে মেজর বিষয়গুলির সঙ্গে যে মাইনর বিষয়গুলি নেওয়া হয়, কোনও শিক্ষার্থী চাইলে সেই বিষয়গুলি নিয়েও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়তে পারেন। এক সঙ্গে দু’টি বিষয়েও স্নাতকোত্তর করা যাবে। ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র অনলাইনে অথবা অনলাইন-অফলাইন একত্রে— যাকে ‘হাইব্রিড মোড’ বলা হচ্ছে— স্নাতকোত্তর পড়তে পারবেন। সে ক্ষেত্রে যাঁরা এক সঙ্গে দু’টি বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন, তাঁরা একটি কোর্স অনলাইনে এবং অন্যটি অফলাইনে করতে পারবেন। এ ছাড়াও সুযোগ থাকবে স্নাতকে ছিল না, এমন বিষয়েও স্নাতকোত্তর পড়ার। সর্বোপরি, মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েও ফের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরা যাবে।

Advertisement

এই নমনীয়তা আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে দিতে পারে। বিশেষত, মাঝখানে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পরেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার সুযোগ পাওয়া গেলে বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে উচ্চশিক্ষা করতে না-পারা শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি জরুরি হয়ে ওঠে, তা হল— নমনীয়তার পথে হাঁটতে গিয়ে উচ্চশিক্ষায় গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে কি? যেমন, একই সঙ্গে দু’টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ কি যথেষ্ট বাস্তবসম্মত? স্নাতকোত্তর পাঠক্রম শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর, তা শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যম নয়। সীমিত সময়ের মধ্যে দু’টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠনে শিক্ষার্থী সেই সর্বোচ্চ ‘শিক্ষা’ প্রাপ্ত হবেন কি না, প্রশ্ন থেকে যায়। স্নাতক স্তরে ছিল না, এমন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার যে সুযোগ এই নতুন ব্যবস্থায় থাকবে, প্রশ্ন সে ক্ষেত্রেও। বিদ্যালয় স্তর থেকে কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার পিছনে শিক্ষাকে সম্পূর্ণতা দেওয়ার ভাবনাটি কাজ করে। অপরিচিত কোনও বিষয়ে স্নাতকোত্তর করতে গেলে সেই ‘সম্পূর্ণতা’র ভাবনাটি ধাক্কা খেতে পারে। এই বিষয়গুলি বিবেচনা না করে সিদ্ধান্ত নিলে সামগ্রিক ভাবে উচ্চশিক্ষার ধারণাটিই লঘু হয়ে পড়তে পারে, যে আশঙ্কা শিক্ষাবিদদের আছে।

নতুন ব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষায় অনলাইন বা ‘হাইব্রিড মোড’-এর প্রসঙ্গটি এসেছে। অতিমারি কালে প্রমাণিত, এখনও শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার বিকল্প অনলাইন শিক্ষা হয়ে উঠতে পারেনি। এক বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগের অপ্রতুলতা কিংবা পরিবারের স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য না থাকায় দু’টি বছর শিক্ষাবঞ্চিত থেকে গিয়েছিল। তা ছাড়া, অনলাইন শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক অনভিপ্রেত বিভাজনেরও জন্ম দিয়েছে। সেই বিভাজন ফের স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাটি যে কোনও উপায়ে রোধ করা জরুরি। সর্বোপরি, এই নতুন ব্যবস্থায় প্রবেশের আগে পরিকাঠামোগত খামতিগুলি দূর করা আবশ্যক। পশ্চিমবঙ্গে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। উচ্চশিক্ষাকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হল, অথচ পাঠদানের মূল বিষয়গুলিই অবহেলিত হল— এই বিষয়টিতে এক অদূরদর্শিতার চিহ্ন বর্তমান। নতুন নীতিটি সেই পথেরই শরিক হবে কি না, আশঙ্কা থেকেই গেল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement