— ফাইল চিত্র।
চার দশক আগে দেশের প্রথম ‘পাতাল-রেল’ চালু হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল কলকাতা। সম্প্রতি শহরের সেই বিস্মৃত কৃতিত্ব পুনরুজ্জীবিত হল দেশের প্রথম নদী তলদেশের মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার সৌজন্যে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মার্চের মাঝামাঝি হাওড়া-ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত শুরু হল পাতাল-রেলের বাণিজ্যিক যাত্রা। এরই সঙ্গে চালু হয়েছে জোকা-তারাতলা এবং নিউ গড়িয়া-রুবি পরিষেবা। ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর-এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে এবং হুগলি নদীর তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চালু হয় ২০১৭-য়। যদিও ২০১৯ সালে সুড়ঙ্গ গঠন এবং নির্মাণকাজের জেরে মধ্য কলকাতায় একাধিক বাড়িতে ভাঙন ধরে এবং দু’তিন বছর পরে একই স্থানে একাধিক বার জলের পাইপ ছেদের কারণে ব্যাহত হয় প্রকল্পের গতি।
এমনিতেই মহানগরীর রাস্তার পরিমাণ অন্যান্য মেট্রো শহরের তুলনায় কম। সমীক্ষা বলছে, ভারতের অন্য মেট্রো শহরগুলির তুলনায় কলকাতার যানবাহনের ঘনত্ব সর্বোচ্চ। এক দিকে রাস্তার পরিমাণ কম এবং অন্য দিকে ক্রমবর্ধমান যানবাহন— অবশ্যম্ভাবী ফল, যানজট। এর জেরে যে শহরের যাতায়াতের সময় বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা প্রতিনিয়ত টের পান নিত্যযাত্রীরা। বস্তুত, গত পাঁচ বছরে যাতায়াতের গড় সময় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, এমনটাই ধরা পড়েছিল রাজ্য পরিবহণ দফতরের গত বছরের তথ্যে। এমন অবস্থায় শহরের যানবাহনের চাপ কমাতে জরুরি হয়ে পড়েছিল বিকল্প ব্যবস্থা। সেই সূত্রে মেট্রোর পরিষেবায় সাম্প্রতিক কালের সম্প্রসারণ মহানগরীর গণপরিবহণের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এ-হেন স্বল্পকালীন যাত্রা মানুষকে যেমন স্বাচ্ছন্দ্য দেবে, তেমনই কমাবে সময়ের অপচয়। ভুললে চলবে না, নগরোন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল সুষ্ঠু যানপরিষেবা, যা শহরের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রভাবিত করে তার অর্থনীতিকেও। শুধু তা-ই নয়, দেশের অন্য শহরগুলির মতো চার পাশে ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে এই পুরনো মহানগরী। মেট্রো সম্প্রসারণ শহরটিকে আরও সহজগম্য করে তুলছে শহরতলি তথা পার্শ্ববর্তী শহরগুলির মানুষের কাছে। একই সঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন দূষণের বিষয়টিও। নতুন মেট্রো পরিষেবার কারণে শহরের যানবাহনের উপরে যাত্রীদের চাপ যেমন কমবে, তেমনই হ্রাস পাবে কার্বন নিঃসরণের সার্বিক পরিমাণও।
তবে, দেশে প্রথম চালু হয়েও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন তথা সংযোগের নিরিখে দিল্লি-সহ অন্যান্য শহরের তুলনায় এ-যাবৎ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল মহানগরীর মেট্রো পরিষেবা। তা ছাড়া সদ্য চালু পরিষেবাতেও ধরা পড়েছে বিবিধ খামতি। যেমন, উপযুক্ত দিকনির্দেশক বোর্ডের অভাব বিভ্রান্ত করে যাত্রীদের। ট্রেনের আনাগোনা এবং অভিমুখ নিয়ে উপযুক্ত ঘোষণা শোনা যায়নি স্টেশনে, এমন অভিযোগও বিস্তর। রয়েছে টিকিট বিতরণ, টিকিট সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার একাধিক খামতিও। যদিও সমস্যাগুলি সাময়িক। আশা করা যায়, মেট্রো কর্তৃপক্ষ যথাশীঘ্র সম্ভব এ-হেন সমস্যা মিটিয়ে ফেলবে। একই সঙ্গে আশা, সাম্প্রতিক সংযোজন কলকাতা মেট্রোকে যেমন তার হৃত গৌরব ফিরে পেতে সাহায্য করবে, তেমনই নতুন কলকাতাকে পুরনো কলকাতার সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্রে পালন করবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।