Israel Palestine Conflict

সূচনাক্ষণ

অতি বড় দুর্ভাগ্যের দ্যোতক এই পরিবর্তন। কেননা, অস্থির সংঘর্ষময় এশিয়ায় এবং বৃহত্তর বিশ্বে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫১
Share:

ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের দিকে নজর গোটা বিশ্বের। —ফাইল চিত্র।

সব বছর নয় সমান। কিছু বছর তো সমান নয়ই, বরং যুগান্ত-কারী। নতুন বছরের সূচনা দিবসটি কিছু আশা ও ভরসার কথা দিয়েই শুরু করা উচিত, কিন্তু তেমন কথা চয়ন করাও আজ সহজ নয়। হয়তো সেটাই ২০২৪ সাল বিষয়ে প্রথম বার্তা। ভূরাজনীতির বিশ্বে যে আগামী দিনগুলি সুখশান্তিভরা না হতে পারে, সংঘর্ষ সন্ত্রাস পরিবেশ-সঙ্কট সবই যে বাড়তে পারে— এমন উদ্বেগ কান পাতলেই শোনা যায়। বিশেষত ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন পরিস্থিতি এবং সেই সূত্রে বিশ্ববাস্তব যে অনেক জটিল হতে পারে আগামী সময়ে, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কান পাতলে শোনা যায় ভারতের জন্য গভীর উদ্বেগও, কেননা এ দেশের জন্য নতুন বছর আক্ষরিক ভাবে ‘যুগান্ত’ নিয়ে আসতে চলেছে। স্বাধীনতার পর সাড়ে ছয় দশক ধরে ভারতের যে সত্তা বিকশিত হয়েছিল, তা পাল্টে গিয়ে এখন দ্রুতবেগে এক ভিন্ন রূপ পরিগ্রহণে ব্যস্ত এই দেশ। ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, এই বছরের প্রথম ভাগে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন সেই পরিবর্তিত সত্তায় এমন ভাবে সরকারি সিলমোহর বসাবে যা আর সহজে সরানো বা ফেরানো যাবে না। ভারতের সেই নতুন সত্তায় তখন ‘গণতন্ত্র’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’, ‘সমাজতন্ত্র’, এ সব পরিচিতি হয়তো পাকাপাকি ভাবে হয়ে যাবে গৌণ। এক দশক যাবৎ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের শীর্ষে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই পরিবর্তনগুলি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। কিন্তু ২০২৩ সাল বুঝিয়ে দিল, দৃশ্যমান ধারাগুলি শাখাস্রোত থেকে মূলস্রোত হয়ে গেছে, এরাই এখন ভারতের চরিত্রনির্দেশক।

Advertisement

অতি বড় দুর্ভাগ্যের দ্যোতক এই পরিবর্তন। কেননা, অস্থির সংঘর্ষময় এশিয়ায় এবং বৃহত্তর বিশ্বে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। ‘বিশ্বগুরু’ জাতীয় সরকারি অতিভাষণকে সরিয়ে রাখলেও এ কথা মানতেই হয় যে সেই ভূমিকা দক্ষ ভাবে পালন করার অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি। নতুন বিশ্বশক্তি চিনের সঙ্গে পশ্চিম বিশ্বের টক্করের পরিপ্রেক্ষিতেও ভারতের সেই গুরুত্ব বাড়ছে। কিন্তু গণতন্ত্র দুর্বল ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা প্রবল হলে বিশ্বমঞ্চে এই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা ভারতের পক্ষে কেবল দুরূহ নয়, অসম্ভব হতে পারে। এ দিকে নতুন বছর ২০২৪ সালের প্রথম মাসেই যে ভাবে রামমন্দির উৎসবে দেশকে বাঁধার কর্মসূচির রূপায়ণ শুরু হল, তার ব্যঞ্জনা ও লক্ষ্য কিন্তু গোটা বিশ্ব খেয়াল করছে। ব্যঞ্জনা— এই মন্দির পুরোনো ভারতের বিরুদ্ধে প্রবল বিজয়ের গৌরব। লক্ষ্য— সংখ্যালঘু আবেগকে নিষ্পেষণ করে সংখ্যাগুরু রাজত্ব প্রতিষ্ঠা। তিন দিন আগে ভারতে টেলিকম বিপ্লবের স্থপতি এবং কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় স্যাম পিত্রোদা এই কথাটিই মনে করিয়েছেন। দেশের এই চরিত্র পরিবর্তনে লাভ কি তা হলে দেশের? না কি, কেবল দেশশাসনের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদেরই?

প্রশ্নটি নতুন বছরের গোড়ায় নতুন করে অবসন্ন করে। পুরনো ভারত অন্তত নীতিগত ভাবে সকলকে নিয়ে চলতে চেয়েছিল। ভুলত্রুটি তাতে ছিল না, এমন নয়, কিন্তু অন্তত মূল নীতিটি থেকে সে সরেনি। নতুন ভারতে সমস্ত নাগরিকের পরিচর্যা করতে চাওয়ার সেই উদারতাটুকুই আজ সম্পূর্ণ ব্রাত্য ও অপাংক্তেয় হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে সমস্ত রকম প্রতিবাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টাও আজ অনেকাংশে সফল, বিরোধীদের কোণঠাসা করাও। পশ্চিমবঙ্গবাসী অবশ্য জানেন, শাসক-বিরোধী সমীকরণ বিপরীত হলেও, প্রতিবাদের পরিসর ভেঙে গিয়ে এই রাজ্যের অভ্যন্তরেও এখন দলীয় কর্তৃত্ববাদের আবহ। চার দিকের রাজনীতির এই বিস্মরণ ও আস্ফালনের মধ্যে নেতানেত্রীদের মৌলিক দায়ের কথাটি মনে করিয়ে দেওয়া, এবং তদনুসারে কাজ করানোর ভার কিন্তু নাগরিকের উপরেই ন্যস্ত। নতুন উদ্যমে সেই দায়িত্ব পালনের প্রয়াস শুরু হতে পারে কি? একমাত্র তবেই ‘যুগান্ত’ কথাটি হয়তো এক ভিন্ন মর্যাদায় ফিরে আসতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement