—প্রতীকী চিত্র।
একুশে জুলাই কলকাতায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ উদ্যাপনের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিকে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে কেন, প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি চিকিৎসক সংগঠন। শাসক দলের রাজনৈতিক কার্যসূচিকে যে সরকারি কর্মসূচি হিসাবে দেখা চলে না, তা কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শীর্ষ কর্তারা ভুলেছেন? এই ভ্রান্তি বার বার ঘটছে। সরকারি পদাধিকারী নন, দলের এমন নেতাও যখন জেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচি করছেন, তখন তাঁর সঙ্গে ‘মেডিক্যাল টিম’ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে। আর একুশে জুলাই উপলক্ষে তো স্বাস্থ্য দফতর রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাছাকাছি সমস্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিক্যাল টিম মোতায়েন রাখতে হবে। গত বছরও এমন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। কিন্তু কেন? এমন নির্দেশের বিরুদ্ধে অন্তত দু’টি আপত্তি উঠতে বাধ্য। প্রথমত, এটি অনৈতিক এবং বেআইনি। চিকিৎসকেরা যথার্থই প্রশ্ন তুলেছেন যে, স্বাস্থ্য দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে কী করে একুশে জুলাইকে ‘শহিদ দিবস’ বলে উল্লেখ করা হতে পারে? কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার কোনও বিশেষ দিবসকে সরকারি ভাবে পালনীয় বলে মনে করলে, তা নির্ধারণ করার বিধিসম্মত উপায় রয়েছে। একুশে জুলাই রাজ্য প্রশাসনের কাছে ‘শহিদ দিবস’ হল কবে, কী করেই বা? ভয় হয়, আধিকারিকদের একাংশ বাধ্যতা দেখাতে গিয়ে নিয়মকানুনের ‘অ আ ক খ’ ভুলতে বসেছেন।
দ্বিতীয়ত, এই বিজ্ঞপ্তি জনস্বার্থবিরোধী। সরকারি হাসপাতালগুলিতে এমনিতেই যেখানে যথেষ্ট চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নেই, সেখানে কেন একটি রাজনৈতিক জমায়েতের জন্য নিয়মিত পরিষেবা বিঘ্নিত করা হবে? মেডিক্যাল কলেজ থেকে জেলা হাসপাতাল, ব্লক হাসপাতাল, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব কতখানি, তা কারও অজানা নয়। ফলে যে কোনও সরকারি হাসপাতালে সর্বদাই একটা জরুরি অবস্থার পরিস্থিতি বিরাজ করে। হাসপাতালের বাইরেও চিকিৎসকের নানা পদ রয়েছে, যা শূন্য থাকায় পরিষেবার অভাবে ভুগছেন দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ। যেমন, কারখানাগুলির স্বাস্থ্য পরিদর্শকের (মেডিক্যাল ইনস্পেক্টর অব ফ্যাক্টরিজ়) ছ’টি পদ রয়েছে, কোনওটাতেই কর্মী নেই। বিড়ি প্রভৃতি শিল্পের শ্রমিকদের ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ রয়েছে নামেই, চিকিৎসকের নাগাল তাঁরা সহজে পান না। এ সত্ত্বেও চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স প্রভৃতি ব্যবস্থার অনেকটাই মোতায়েন থাকে ‘ভিআইপি’-দের প্রয়োজনে। সরকারি চিকিৎসার যেটুকু পড়েছে আমজনতার ভাগে, বিশেষ কারণ ছাড়া তাতে হস্তক্ষেপ করা চলে না।
রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি সেই ‘বিশেষ কারণ’ হতে পারে না। কেউ যুক্তি দিতে পারেন যে, যেখানে এত মানুষের সমাগম প্রত্যাশিত, সেখানে মেডিক্যাল টিম রাখাই তো ভাল। বেশ কথা, কিন্তু তা হলে বিরোধীদের জনসমাবেশের জন্যেও তা চাই। দলের নেতারা ‘আমরা-ওরা’ বিভেদ করতে পারেন, প্রশাসন দলীয় পরিচয় বিচার করে ব্যবস্থায় হেরফের করতে পারে না। তবে প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক। শাসন ক্ষমতাকে যে কোনও জনসুবিধার উপর, জনসম্পদের উপর, দখলদারির অবাধ ছাড়পত্র বলেই কি মনে করে তৃণমূল কংগ্রেস দলটি?