Roads

পথের দাবি

নেতামন্ত্রীরা ‘প্রতিনিধি’ নন, ‘প্র-শাসক’ মাত্র, যেখানে ‘প্রকৃষ্ট’ রূপে শাসনের বদলে ‘প্রবল’ রূপে শাসনই বিরাজমান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ০৯:০৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পথ তুমি কার? যে পথে হাঁটে, তার নও, যে পথের দিকে চেয়ে থাকে, তার নও— কেবল যার হাতে পথ তৈরির অর্থ থাকে, তার? তাই জন্য সারা বছর ধরে ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় সাধারণ মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়ে, পায়ের উপরেও সেই পথের চিহ্ন লেগে থাকে, ভাঙনও ধরে, মচকানিও। সল্ট লেক ও কেষ্টপুর অঞ্চলে ভোট-প্রচার শুরু হবে, নেতানেত্রীরা হাঁটাহাঁটি করবেন বলে এত দিনে পথ সারানোর উচ্চারণটি শোনা গেল, যদিও সেই উচ্চারণ কাজে পরিণত হওয়ার পর্ব এখনও আসেনি, হয়তো আসবে নেত্রী স্বয়ং যে দিন দেখে দেবেন, তার আগের সকালসন্ধে। কেবল রাস্তার গর্ত বোজানো নয়, রাস্তার জঞ্জাল সরানোরও ইশারা পাওয়া যাচ্ছে, যাতে মুখ্যমন্ত্রী হাঁটতে গিয়ে কোনও কটুগন্ধ না পান। মোলায়েম এবং সুগন্ধময় পথে হাঁটতে হাঁটতে তিনি ও তাঁরা ভুলেই যাবেন যে সাধারণত কী প্রাণান্ত কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করেন বাসিন্দারা, ঘর থেকে বেরোলেই জমে-থাকা নোংরার গন্ধবিধুর সমীরণ, পায়ে হেঁটে চলা মানে পায়ের উপর জবরদস্তি, আর রিকশা কিংবা গাড়িতে উঠলে পিঠ আর কোমরের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি। নেতামন্ত্রীরা ‘প্রতিনিধি’ নন, ‘প্র-শাসক’ মাত্র, যেখানে ‘প্রকৃষ্ট’ রূপে শাসনের বদলে ‘প্রবল’ রূপে শাসনই বিরাজমান।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী আসতে চলেছেন বলে পথ সারাই এখনই দরকার বলে বিধাননগর পুরসভা অঞ্চলে কয়েকটি ওয়র্ডে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে, এবং কেষ্টপুরে একই কারণে আগাম পরিদর্শনে এসে গিয়েছেন তৃণমূলের বড় মাপের নেতা, অন্য অনেক অঞ্চলের অধিবাসীরা আক্ষেপ করছেন কেন তাঁদের জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী আসছেন না, এলে তো তাঁদের রাস্তার খানাখন্দেরও একটা বন্দোবস্ত হত। ইত্যাকার সংবাদ-জ্ঞাপনে এই উপলব্ধিই হয় যে, ভোট বড় উপকারী বস্তু। কেননা, একমাত্র যে ভোটের সময় মানুষের কথা নেতাদের মনে পড়ে, তা-ই নয়, এই সময় ছাড়া তাঁরা মানুষকে ঠিক মনুষ্যপদবাচ্য বলে মনে করেন না। এও সেই প্রতিনিধিত্বের ধারণাটিকে নস্যাৎ করে: ভারতের মতো দারিদ্রলাঞ্ছিত অনুন্নয়ন-পরিকীর্ণ দেশে নেতারা কখনওই জনগণের কেউ নন, তাঁরা সম্পূর্ণ ভিন্ন শ্রেণিভুক্ত। জনগণও তা জানেন, সুতরাং তাঁরাও মেনে নেন। বছরের পর বছর খানাখন্দ টপকাতে টপকাতে তাঁরা পরের ভোটের মঙ্গলবাদ্যের অপেক্ষায় থাকেন। তার যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে ছোট শহর ও মফস্‌সলের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।

কিছু কিছু অঞ্চল অবশ্য প্রতি বছরই পথ সারাই-এর কর্মযজ্ঞ দেখে— প্রতি বছর, কেননা যে ভাবে তা সারাই হয়, সেটা অবশ্যই কয়েক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে আবার পুনর্মূষিক-এ পরিণত হয়। এই রহস্য নিয়েও আলোচনা করে লাভ নেই, কেননা পথ সারাই-এর প্রয়োজনবোধ থেকে শুরু করে পথ সারাই কর্মসূচি, সবটাই যে আসলে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক, নাগরিকমাত্রেই সে বিষয়ে অবহিত। কাজ পাইয়ে দিতে হবে, টাকা পাইয়ে দিতে হবে, ঠিকাদারকে দিয়ে করাতে হবে, এগুলিই সেখানে বিবেচ্য, পথের স্বাস্থ্য-ভাবনা নেহাতই অকিঞ্চিৎকর। এই কারণে ওয়ার্ক অর্ডার এসে পড়ে থাকে, কিন্তু কাজ হয় যখন নেতারা চাপ অনুভব করেন তখন। সে চাপ উপর থেকেও আসতে পারে, আবার তলা থেকেও, কেবল চাপের মধ্যে রাস্তাঘাটে চলাচলের সুযোগসুবিধার বিবেচনাটিই অনুল্লেখ্য, অন্যান্য বিবেচনার চাপে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement