—ফাইল চিত্র।
পরিবেশ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে যত কথা হয়েছে, তার মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ সংক্রান্ত আলোচনাকে স্বচ্ছন্দে প্রথম সারিতে রাখা যায়। আশ্চর্য এটাই, তা সত্ত্বেও সরকার থেকে নাগরিক সমাজ এক সীমাহীন ঔদাসীন্যে ভুগছে। ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাজ্য পরিবেশ দফতর ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে ১২০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সারা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট, চামচ, স্ট্র-এর মতো এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে। কিন্তু পরিপার্শ্বের দিকে চোখ রাখলে স্পষ্ট, এই নিষেধাজ্ঞার অনেকটাই থেকে গিয়েছে খাতায়-কলমে। জেলাগুলি তো বটেই, খাস কলকাতাতেও দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের সামগ্রী। অর্থাৎ, নজরদারিতে ঘাটতি বিস্তর। সর্বোপরি, এ ক্ষেত্রেও রাজ্য-কেন্দ্র তরজা অব্যাহত। কলকাতা পুরসভার দাবি, প্লাস্টিকের ব্যবহারে রাশ টানতে হলে কেন্দ্রকেই আগে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের কারখানাগুলি বন্ধ করতে হবে। সমস্যা হল, এই তরজার ফাঁক গলে প্রতি দিন একটু একটু করে পরিবেশ বিপর্যয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
রাজ্যে বর্ষার দিনগুলি শিয়রে অপেক্ষারত। প্লাস্টিকের বেলাগাম ব্যবহার নিকাশির ক্ষেত্রে যে অতি বিপজ্জনক তা নিয়ে সরকার তো বটেই, নাগরিক সমাজও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সম্প্রতি বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এক অনুষ্ঠানে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে মাটির স্তর প্লাস্টিকে ঢাকা পড়বে। জল মাটি ভেদ করে নীচে যেতে পারবে না। কিন্তু এ তথ্য জানা সত্ত্বেও কাজ হচ্ছে কই? গোড়ায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ পেয়ে পুরসভা স্থির করেছিল, আইন অমান্যকারী বিক্রেতাদের থেকে ৫০০ এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় হবে। এই জরিমানা আদায়ের কাজটি কোথায় কত দূর সম্পন্ন হয়েছে, তার হিসাব জানানোও একান্ত প্রয়োজন। প্রথম দিকে যে দোকান-বাজার ঘুরে অভিযান চালানো হয়েছিল, সেই কাজেও কি পূর্বের মতো উদ্দীপনা রয়েছে পুরসভার? নিকাশি নালার গালিপিটে প্লাস্টিক আটকে থাকলে তা শুধুমাত্র নগরবাসীর জলযন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। প্রতি বছর বর্ষার শুরু থেকে শীতের মাঝামাঝি পর্যন্ত কলকাতা যে ‘ডেঙ্গি রাজধানী’ হয়ে ওঠে, তার অন্যতম অনুঘটকও এই প্লাস্টিক। সে কথা স্মরণে রেখেও কি আরও উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন ছিল না পুরসভার?
নিজ কর্তব্যে গাফিলতি ঢাকতে অজুহাত খুঁজে বার করা রাজ্য প্রশাসনের পুরাতন অভ্যাস। প্লাস্টিকের কারখানা বন্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের ঔদাসীন্য অবশ্যই যুক্তিগ্রাহ্য কারণ। কিন্তু সমস্যা যখন ক্রমবর্ধমান, তখন এত দিনেও কেন্দ্রের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছনো গেল না কেন, সে প্রশ্ন অনুচিত নয়। প্রশাসন যদি সেই কাজ না পারে, তবে তা করবে কে? একই ভাবে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ না করে বার বার মৌখিক ভাবে নাগরিক অসচেতনতার দিকে আঙুল তোলা কতটা যুক্তিযুক্ত? পুরসভা সর্বাগ্রে নিজেদের ফাঁকফোকরগুলি খুঁজে বার করায় মন দিক। দোষারোপ তো বছরভরের জন্য তোলা রইলই।