Petrol Diesel Price Hike

নিম্ন মানের রাজনীতি

উৎপাদন শুল্কে যৎকিঞ্চিৎ যে ছাড় সরকার দিয়াছে, তাহা লইয়া কথা বাড়াইবার মধ্যে কী পরিমাণ নির্লজ্জতা প্রকট হয়, কেহ সেই প্রশ্নটি তুলিতে পারেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

আমরা পেট্রল-ডিজ়েলের উপর উৎপাদন শুল্ক কমাইলাম, এই বার রাজ্যগুলিও যুক্তমূল্য কর কমাক’— কেন্দ্রীয় সরকারের এই অবস্থানটির মধ্যে নৈতিকতা ও রাজনৈতিক সুবিধাবাদ কোন অনুপাতে মিশিয়াছে, তাহা বিচার করিয়া দেখা প্রয়োজন। প্রথমত স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয় যে, ইউপিএ আমলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামের মূল্যস্তরের নিরিখে অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের যা দাম ছিল, সেই অনুপাতটি বজায় রাখিলে দিল্লিতে গত কাল এক লিটার পেট্রলের দাম ৭০ টাকার ধারেকাছে থাকিবার কথা ছিল। এই অঙ্কে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটিও ধরা আছে। গত কাল দিল্লিতে এক লিটার পেট্রলের দাম ছিল প্রায় ১০৪ টাকা। অর্থাৎ, ইউপিএ আমলের হারে যে দাম হওয়া উচিত ছিল, সরকার লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা উৎপাদন শুল্ক কমাইবার পরও পেট্রলের দাম তাহার দেড় গুণ। অতএব, উৎপাদন শুল্কে যৎকিঞ্চিৎ যে ছাড় সরকার দিয়াছে, তাহা লইয়া কথা বাড়াইবার মধ্যে কী পরিমাণ নির্লজ্জতা প্রকট হয়, কেহ সেই প্রশ্নটি তুলিতে পারেন।

Advertisement

সেই ঔচিত্যের প্রশ্নটিকে অতিক্রম করিয়া কেহ যদি কেন্দ্রীয় কর ছাড়ের চরিত্রটি বিচার করিয়া দেখেন, তাহা হইলে আরও কিছু প্রশ্ন উঠিবে। শুল্ক কমাইবার পূর্ব পর্যন্ত এক লিটার পেট্রলের উপর কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক বাবদ আদায় করিত মোট ৩২ টাকা ৯০ পয়সা। তাহার মধ্যে বেসিক এক্সাইজ় ডিউটি— অর্থাৎ, আদায়ীকৃত উৎপাদন শুল্কের যে অংশটি হইতে রাজ্যকে ৪১% হিস্যা দিতে হয়— ছিল মাত্র এক টাকা চল্লিশ পয়সা। অর্থাৎ, সংবিধানের আব্রুরক্ষার্থে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে পেট্রলে লিটারপ্রতি ৫৭ পয়সা দিত। বাকিটা, বিশেষ উৎপাদন শুল্ক ও একাধিক সেস-বাবদ কেন্দ্রই আত্মসাৎ করিত। পাঁচ টাকা ছাড় দিবার পরও কেন্দ্র এই খাতে লিটারপ্রতি রাজস্ব আদায় করিবে ২৬.৪০ টাকা, এবং বেসিক এক্সাইজ় হইতে আরও পাইবে ৮৩ পয়সা। যুক্তমূল্য করবাবদ রাজ্যগুলি পেট্রলের উপর যে কর আদায় করিয়া থাকে, তাহার পরিমাণ ইহার তুলনায় কম। অর্থাৎ, উৎপাদন শুল্কে ছাড় দিবার পর কেন্দ্র যেখানে দাঁড়াইল, রাজ্যগুলি পূর্ব হইতেই তাহার কম রাজস্ব আদায় করে। পশ্চিমবঙ্গ আরও কম— এই রাজ্যে লিটারপ্রতি এক টাকা রাজস্ব ছাড় দেওয়াই আছে। তদুপরি, রাজ্যগুলি যে হেতু যুক্তমূল্য কর আদায় করে, ফলে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সমেত তেলের দাম কমিলে রাজ্যের রাজস্বও আনুপাতিক হারেই কমে। অতএব, কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক ছাঁটায় রাজ্যের রাজস্ব আদায় এমনিতেই কমিয়াছে। আরও কমাইবার দাবিটি, অতএব, রাজ্যের রাজকোষের উপর খাঁড়ার ঘা হইবে।

পেট্রল-ডিজ়েলের বিক্রয় হইতে আদায় করা যুক্তমূল্য করের উপর রাজ্যগুলির অতিনির্ভরতার কারণটিও এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা বিধেয়। জিএসটি ব্যবস্থা চালু হইবার পর রাজ্যের হাতে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র কার্যত দুইটি— পেট্রোলিয়াম পণ্য, এবং আবগারি। কথা ছিল, অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের অধিকার হারাইবার ফলে রাজ্যগুলির যে আর্থিক ক্ষতি হইবে, জিএসটি-র বর্ধিত হিস্যা প্রদান করিয়া কেন্দ্র তাহা পুষাইয়া দিবে। অতিমারির অজুহাতে কেন্দ্র সেই প্রতিশ্রুতি হইতে সরিয়া আসিয়াছে— হকের পাওনা আদায় করিতেও রাজ্যগুলির কালঘাম ছুটিয়া গিয়াছে। অন্য দিকে, কেন্দ্র ক্রমেই বিবিধ সেস-এর পরিমাণ বাড়াইয়া দিয়াছে, যাহাতে কেন্দ্রীয় রাজস্ব রাজ্যগুলির সহিত ভাগ না করিতে হয়। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে পেট্রোলিয়ামের উপর যুক্তমূল্য করের পরিমাণ কমাইতে বলিলে তাহা নিতান্তই রাজনীতি। অতি নিম্ন মানের রাজনীতি। চক্ষুলজ্জার বালাই থাকিলে এমন রাজনীতি করা মুশকিল। সেই বালাই ভুলিয়াই বিজেপি যুক্তমূল্য কর কমাইবার দাবিতে মিছিল করিতেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement