Farmers

দুর্মূল্য

বিক্রির পরিমাণের সীমা দ্বিগুণ করা চাষির কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় হবে, অথবা বোরো ধান উঠলে ধানের বাজারদর পড়বে— এ দু’টি সম্ভাবনা রাজ্য সরকারকে স্বস্তি দিতে পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

চাষিদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিয়েও বাজার থেকে যথেষ্ট ধান-গম কিনতে পারছে না কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার। এই সংবাদ উদ্বেগজনক। দেশবাসীর একটি বড় অংশের খাদ্যনিরাপত্তা নির্ভর করে গণবণ্টন ব্যবস্থার চাল-আটার উপরে। সরকারের হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনা। কিন্তু এই বহু-ব্যবহৃত অস্ত্রটি ক্রমশই ভোঁতা হয়ে উঠছে। এক দিকে সরকার-নির্ধারিত মূল্য কতটা ন্যায্য, তা নিয়ে চাষিরা প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য দিকে, প্রশ্ন উঠছে সরকারি নীতির কার্যকারিতা নিয়ে। গমের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেওয়ার পর থেকে কেন্দ্র বেশ কিছু ব্যবস্থা করেছে। ২০২২ সালে বন্ধ হয়েছে গম রফতানি, ২০২৩ সালে ব্যবসায়ীদের মজুত শস্যের পরিমাণের সীমা ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু তাতেও ঘাটতির আশঙ্কা কমেনি। নতুন ফসল ওঠার পর এপ্রিল মাসে চাষিরা বাজারে গম নিয়ে আসেন। সংবাদে প্রকাশ, বহুজাতিক ও স্থানীয় বৃহৎ সংস্থাগুলিকে এপ্রিলে বাজার থেকে গম কিনতে নিরুৎসাহ করেছে কেন্দ্র। প্রশাসনিক নির্দেশ জারি না হলেও, সংস্থাগুলিকে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে, শস্য কেনার ক্ষেত্রে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়াকে (এফসিআই) অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে সরকারি গুদামের ক্ষয়িষ্ণু গম-ভান্ডার দ্রুত পূরণ হয়। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম এমন ব্যবস্থা করল কেন্দ্র। প্রধান গম উৎপাদনকারী রাজ্যগুলির সরকারকেও কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, এফসিআই-এর লক্ষ্যমাত্রা (তিন কোটি টন গম) পূরণ করার পথে অসরকারি ক্রেতা যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। রেল যাতে বৃহৎ সংস্থাগুলিকে শস্য পরিবহণের সুযোগ না দেয়, তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গত বছর এফসিআই চাষিদের থেকে গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। ঘাটতি মেটানোর পথ গম আমদানি, কিন্তু তাতে রুষ্ট হতে পারেন ভারতের চাষি। দু’দিক সামলাতে দ্রুত গম কিনছে এফসিআই, কিন্তু সরকারি দর বহু রাজ্যে বাজার দরের চাইতে কম।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে সরকার-ঘোষিত সহায়ক মূল্য (কুইন্টাল ২২০৩ টাকা) বর্তমান বাজার মূল্যের চাইতে শ’খানেক টাকা বেশি। কিন্তু দূরের সরকারি বিক্রয় কেন্দ্রে ধান নিয়ে যাওয়া, দীর্ঘ প্রতীক্ষা, এবং অ্যাকাউন্টে টাকা পাওয়ার জন্য অপেক্ষার চাইতে, ঘরে বসে ব্যবসায়ীকে ধান বিক্রি করতেই স্বচ্ছন্দ চাষিরা। চাষিদের আকর্ষণ করতে ছত্তীসগঢ় কেন্দ্রের সহায়ক মূল্যের উপরে কুইন্টালে বাড়তি ৯০৭ টাকা দিচ্ছে চাষিদের, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছে মাত্র কুড়ি টাকা। বোঝার উপর শাকের আঁটি রেশন কেলেঙ্কারির সঙ্কট। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি ব্যবস্থা থেকে সরে যান বহু চালকল মালিক ও চাষি। এ বছর পঁচিশ লক্ষ চাষির নথিভুক্তির লক্ষ্য নিলেও, মাত্র সতেরো লক্ষ চাষির নাম উঠেছে রাজ্য সরকারের খাতায়। মোট সত্তর লক্ষ টন শস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র আটান্ন শতাংশ এখনও অবধি পূরণ হয়েছে। শস্য জোগানে টান না পড়ে, সে জন্য খাদ্য দফতর চাষিদের মাথাপিছু বিক্রয়সীমা বাড়িয়ে ত্রিশ কুইন্টালের জায়গায় করেছে ষাট কুইন্টাল।

বিক্রির পরিমাণের সীমা দ্বিগুণ করা চাষির কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় হবে, অথবা বোরো ধান উঠলে ধানের বাজারদর পড়বে— এ দু’টি সম্ভাবনা রাজ্য সরকারকে স্বস্তি দিতে পারে। না হলে হয় রাজ্যকে অনেক বেশি টাকা বরাদ্দ করতে হবে খাদ্যসাথী প্রকল্প চালু রাখতে, নয়তো সঙ্কুচিত করতে হবে খাদ্য সহায়তা প্রকল্পকে। দুটো বিকল্পের কোনওটাই স্বস্তিকর নয়। চটজলদি উপায় যা-ই করুক সরকার, শেষ অবধি প্রয়োজন ফসলের মূল্য, এবং খাদ্যনিরাপত্তার জন্য সরকারের উপর নাগরিকের নির্ভরতা কমানোর নীতি গ্রহণ। সরকারি প্রকল্পের উপর নাগরিকের নির্ভরতাকে দলীয় রাজনীতির কৌশল করে তোলায় দেশ বিপন্ন হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement