Maratha reservations

মরাঠা প্রশ্ন

প্রসঙ্গত, মরাঠা ক্ষত্রিয়রা সে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ শতাংশ, যারা প্রধানত মরাঠাওয়াড়া অঞ্চলের কৃষিজীবী সম্প্রদায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:১১
Share:

একনাথ শিন্দে। —ফাইল চিত্র।

স‌ ংরক্ষণ যে ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্যতম জটিল বিষয়, গত চার দশকে তা যথেষ্ট ভাবে প্রমাণিত। কিন্তু আশঙ্কা ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে যে, আগামী দশকগুলিতে সংরক্ষণ সম্ভবত ভারতীয় গণতন্ত্রের সর্বাধিক সমস্যাসঙ্কুল বিষয়ে পরিণত হবে। মণিপুরের ভয়ঙ্কর ঘটনাবলি এখনও সমগ্র ভারতকে কম্পমান করে রেখেছে। সম্প্রতি তীব্র হয়ে উঠল মহারাষ্ট্রে মরাঠা সংরক্ষণ আন্দোলন। এতটাই তার তীব্রতা যে, প্রাণাহুতির ভয়ও নতুন করে জেগে উঠছে। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে বুঝে নেওয়া যায় যে, অনেক বাধা সত্ত্বেও সমাজে ও রাজনীতিতে এই আন্দোলনের একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই দাবি মেনে নিয়েছেন, এবং সত্বর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বাধাগুলি গুরুতর। ‘পদক্ষেপ’ প্রতিশ্রুত হলেও তা ‘সত্বর’ ঘটানো যাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। এবং এই ঘটনার ফলে অন্যান্য রাজ্যেও ‘অনগ্রসরতা’র নতুন ব্যাখ্যা তৈরি হয়ে নতুন দাবিসমূহ উত্থাপিত হবে কি না, সেটা পরবর্তী প্রশ্ন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, মরাঠা ক্ষত্রিয়রা সে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ শতাংশ, যারা প্রধানত মরাঠাওয়াড়া অঞ্চলের কৃষিজীবী সম্প্রদায়। প্রথামতে তাঁরা সংরক্ষণযোগ্য গোষ্ঠী না হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনুন্নত বলে এঁরা সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন বেশ কয়েক দশক ধরে। এ প্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে অণ্ণাসাহেব পাতিলের আত্মবলিদানের কথা: সেই সময়ে রাজ্যের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী বাবাসাহেব ভোঁসলে কোনও মতেই সংরক্ষণে রাজি না হওয়ায় অণ্ণাসাহেব অনশনে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মণ্ডল কমিশনের পর থেকে এই দাবি আরও জোরদার হয়। ২০০৪ সালে সে দাবি অংশত পূরণ করতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে মরাঠা-কুনবি ও কুনবি-মরাঠাদের গণ্য করা শুরু হয়, কিন্তু তাতে মরাঠা গোষ্ঠীর ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। ওবিসি-র মধ্যে বিপরীত ক্ষোভ শুরু হয় মরাঠাদের অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনায়, কেননা তাতে সংরক্ষণের মধ্যেকার ভাগাভাগি বেড়ে যাবে। ২০১৪ সালে মরাঠাদের ১৬ শতাংশ সংরক্ষণ চালুর প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ হলে হাই কোর্টে তা স্থগিত হয়, প্রতিবাদ আন্দোলন হিংসাদীর্ণ হয়ে ওঠে। শেষে দেবেন্দ্র ফডণবীসের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে ১৩ শতাংশ সংরক্ষণের রায় দেয় হাই কোর্ট। অতঃপর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের দরবারে পৌঁছয়, ও সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ২০২১ সালের মে মাসে তা বাতিল বলে ঘোষিত হয়। বাতিলের যুক্তি, মহারাষ্ট্র এতদ্দ্বারা ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণে পৌঁছে যাচ্ছে। অর্থাৎ আজকের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে আশ্বাস দিলেও, সে রাজ্যের সব দল একমত হলেও, এই মুহূর্তে বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে, রাজ্যের সংরক্ষণ পরিমাণ নির্ধারিত ৫০ শতাংশ সীমা পেরোতে পারে কি না সেই সাংবিধানিক বিতর্কে।

তর্কটি গুরুতর। দুই দিকেই রাষ্ট্রদার্শনিক যুক্তিগুলি যথেষ্ট প্রণিধানযোগ্য। সংরক্ষণ যদি শেষ পর্যন্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার পন্থা হয়, তা হলে এই পূর্বনির্ধারিত মাত্রা কতখানি সমর্থনযোগ্য, সে প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, বিষয়টি কি রাজ্যের বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত, না কি গোটা দেশের জন্য এক ও অভিন্ন হওয়া বিধেয়? এর থেকেই উঠে আসে আর একটি রাষ্ট্রনৈতিক প্রশ্ন: সংরক্ষণ বিষয়ে শেষ কথা কেন বলবে সুপ্রিম কোর্ট? যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কি রাজ্যের এক্তিয়ার আর একটু বেশি হওয়া উচিত নয় এই ক্ষেত্রে? শেষ কথাটি উঠছে এই আশঙ্কায় যে, অর্থনৈতিক অনুন্নয়নের ভিত্তিতে সংরক্ষণের দাবি ক্রমশই বাড়তে পারে দেশে, বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন মাত্রায়। গণতন্ত্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার আকাঙ্ক্ষাটি ভারতের মতো বৃহৎ বহুসংস্কৃতিপূর্ণ দেশে পরতে পরতে জড়িত, এবং সেই কারণেই গুরুত্বসহকারে প্রণিধানযোগ্য। মরাঠা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের সূত্রে মহারাষ্ট্র তা আর এক বার মনে করিয়ে দিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement