বৈঠকে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়েও সরব হয়েছে ভারত। প্রতীকী ছবি।
দুই প্রতিবেশী চিন ও পাকিস্তানকে জোরালো বার্তা দিল সাউথ ব্লক। সম্প্রতি ভারতের নেতৃত্বাধীন শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও)-এর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তৃতায় অজিত ডোভাল সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার উপরে জোর দেন। তাঁর বক্তব্য— যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও তাতে মদত জোগানো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতটি বুঝতে অসুবিধা হয় না। পাকিস্তানের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে অন্য প্রতিবেশীটিকে ঘিরে আশঙ্কা ও অশান্তি। বস্তুত, পাকিস্তানের থেকেও ভারতের বেশি চিন্তা চিনকে ঘিরে। ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাস থেকে ধারাবাহিক ভাবে লাদাখ সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারতের তরফে স্থিতাবস্থা নষ্টের অভিযোগ উঠেছে চিনের বিরুদ্ধে। তারই জেরে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে দেখা যায়। বিভিন্ন সময়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও, বেজিং-এর কথায় ও কাজের ফারাকটি স্পষ্ট। অতীতে ভারত বহু বার এই নিয়ে সরবও হয়েছে। বর্তমানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি তুলনায় স্থিতিশীল হলেও, এখনও ওই অঞ্চলে যে ভাবে দু’দেশের সেনা মোতায়েন রয়েছে, তাতে আগামী দিনে নতুন কোনও সংঘাতের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অতএব, এসসিও বৈঠকে চিনের নামোল্লেখ না করেও অজিত ডোভালের ইঙ্গিতটি তাৎপর্যপূর্ণ। পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বৈরথ নিঃসন্দেহে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জ। তবে, চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাও যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চকে হাতিয়ার করে ভারতের সংঘাতমনস্ক প্রতিবেশীদের সমস্যা বার বার বিশ্বদরবারে উপস্থাপিত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। ভারত যে সে কাজটি মন দিয়ে করছে, সেটা আশ্বাসজনক।
বৈঠকে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়েও সরব হয়েছে ভারত। চিনের বৈশ্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) নিয়ে বরাবরই ভারতের আপত্তি। এই প্রকল্পের অন্তর্গত পাকিস্তানে ‘চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর’ নামক প্রকল্পটির সূত্রে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে রেলপথ-সহ আরও পরিকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভূখণ্ডটি বেআইনি ভাবে দখলের অভিযোগের কারণে এখানে কোনও নির্মাণই সমর্থন করে না ভারত। কিন্তু ভারতের আপত্তিতে গুরুত্ব দেয়নি চিন। বিআরআই-এর মাধ্যমে আগামী দিনে পশ্চিম এশিয়া থেকে শক্তি আমদানি এবং ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তারের সূত্রে চিন যে ভাবে ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন বন্দরে বিনিয়োগ করছে, এবং ভারতের বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে আস্তানা তৈরি করছে, তাতে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা সমূহ। তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সংঘাতও ভারতের ক্ষেত্রে আত্মঘাতী হতে পারে। সামরিক শক্তির নিরিখে কারণটা সহজবোধ্য। পরিবর্তে পরোক্ষ কূটনৈতিক সমাধানই কাম্য। জি২০ নেতৃত্বের সূত্রে ভারত যেখানে গ্লোবাল সাউথের পক্ষ থেকে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, সেখানে নিজেদের স্বার্থেই ভারতকে এ বিষয়ে সতর্ক নীতি গ্রহণ করতে হবে।