— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গণতন্ত্রে অসন্তোষ বা অসম্মতি জানাতে প্রতিবাদ, আন্দোলন থেকে শুরু করে ধর্মঘট, সব কিছুরই ‘অধিকার’ আছে নাগরিকদের, সংবিধান ও আইনমতে। আবার নাগরিকেরা যখন বিক্ষোভ প্রকাশে রাস্তায় নামবেন, তখন প্রশাসন, বিশেষত পুলিশ বসে থাকবে না, কাঁদানে গ্যাস লাঠিচার্জ জলকামান ব্যবহারে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করবে, প্রতিবাদীদের পথে ব্যারিকেড বসাবে, এও দস্তুর। কিন্তু হরিয়ানা-পঞ্জাব সীমান্তে জায়গায় জায়গায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত কৃষকদের যে বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে হরিয়ানা পুলিশের ঘোষিত পদক্ষেপটি অভাবিতপূর্ব: প্রতিবাদীদের পাসপোর্ট ও ভিসা বাতিল! হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি বলেছেন, ড্রোন ক্যামেরা, ছবি আর ভিডিয়োর মাধ্যমে তাঁরা শনাক্ত করেছেন প্রতিবাদের নামে গন্ডগোল পাকানো, ব্যারিকেড ভাঙা, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা বিক্ষুব্ধদের, এ বার তাঁদের নাম ঠিকানা ছবি পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও দূতাবাসগুলিকে পুলিশ অনুরোধ করবে বিক্ষোভকারীদের পাসপোর্ট-ভিসা বাতিল করে দেওয়ার।
জনপরিসরে চালু রসিকতার অনেকাংশ কেন পুলিশকে ঘিরেই গড়ে ওঠে, হরিয়ানার ঘটনা তার হদিস দিতে পারে। নাগরিক প্রতিবাদ দমনে রাষ্ট্রযন্ত্র নানা কৌশল অবলম্বন করে, তার অনেকটা আসে পুলিশের মারফত— কখনও তর্জনগর্জনে, কখনও ব্যবস্থা গ্রহণে। পঞ্জাব-হরিয়ানার ঘটনায় যেমন কিছু কৃষক নেতার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) পদক্ষেপ করার কথা বলেও পুলিশ পরে তা প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু তার পরে যা এল, সেই পাসপোর্ট-ভিসা বাতিলের ঘোষণাটি হাস্যকর, কারণ সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিকমাত্রেই জানেন যে, পাসপোর্ট-ভিসা বাতিল ও-ভাবে করা চলে না, অন্তত পুলিশ আধিকারিক যে ভাবে বলেছেন সে পথে তো নয়ই। পাসপোর্ট বিদেশগমনের ছাড়পত্র, তার সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের সম্পর্ক; এবং ভিসা দেওয়ার কাজটি গন্তব্য-দেশের সরকারের। রাজ্য পুলিশের অনুরোধে কোনও দূতাবাসের চিঁড়া ভিজবার নয়, অন্তত সে দায় রক্ষার দায় তাদের নেই। ১৯৬৭-র পাসপোর্ট আইনমতে পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে একমাত্র পাসপোর্ট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, তা-ও জাতীয় সুরক্ষা ভঙ্গ, সন্ত্রাসবাদ বা এই গোছের কিছু গুরুতর অপরাধ করা হলে তবেই। সবচেয়ে বড় কথা এই সবই হতে হবে প্রমাণসাপেক্ষে, পাসপোর্টধারী নাগরিককে আগে থেকে নোটিস দিয়ে জানিয়ে, তাঁকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তবেই, খেয়ালখুশি মাফিক কিংবা অন্যায্য ভাবে কখনওই নয়।
পুলিশ যে এ সব জানে না তা নয়। তবু, লাঠি হাতে থাকা মানেই দু’-এক ঘা বসানোর ইচ্ছাটি এ ভারতে শাসক থেকে পুলিশের বারংবার প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে, অনধিকার জেনেও পাসপোর্ট-ভিসা বাতিলের পুলিশি আস্ফালনও তারই বহিঃপ্রকাশ। আসলে সাম্প্রতিক অতীতে কৃষক আন্দোলনের মুখে কেন্দ্র যে ভাবে নতিস্বীকার করেছে তার দৃষ্টান্ত এখনও তরতাজা। পঞ্জাব-হরিয়ানা’সহ নানা রাজ্যের কৃষকেরা আবারও চলেছেন দিল্লি অভিমুখে, যেন তেন প্রকারেণ তা রুখে দেওয়াই এখন শাসকের মস্ত চ্যালেঞ্জ। পুলিশের কাজ ছিল আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানো, পাসপোর্ট-ভিসা বাতিলের অলীক জুজু দেখিয়ে সে হয়ে উঠল পরিহাসপাত্র।