Attack on Journalists

মুদ্রার দুই পিঠ

কেরলের এর্নাকুলামে এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক এক ছাত্রনেতার কাজকর্মের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে খবর করেছিলেন, পত্রপাঠ তাঁর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর নিল পুলিশ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ০৬:১৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। ভারতে রাজনীতিকদের হাতে সাংবাদিকদের ‘আক্রান্ত’ হওয়ার ট্র্যাডিশন— মন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে উত্তরে প্রচ্ছন্ন বা প্রকাশ্য হুমকির ট্র্যাডিশন, নেতাকে নিয়ে অপ্রিয় খবর করার ‘অপরাধ’-এ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার ট্র্যাডিশন। ভারতীয় সাংবাদিকেরা এ-হেন পরিস্থিতিতে এখন আর অনভ্যস্ত নন, রাজনীতিকদের সাঙাত-শাগরেদ-বাহুবলীর মতো কায়মনোবাক্যের রক্ষীও তাঁদের প্রয়োজন হয় না, পেশাগত ও ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখেও সংবাদ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাই তাঁদের প্রথম ও শেষ রক্ষাকবচ। আসল দ্রষ্টব্য সাংবাদিকরা নন, রাজনীতিকরা— তাঁদের দমনযন্ত্রকুশলতার বিচিত্রতায়। অমেঠীতে চায়ের ভাঁড় হাতে গাড়িতে ওঠার সময় এক সাংবাদিক ‘বাইট’ চাওয়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বললেন, ওই সাংবাদিক আসলে তাঁকে ও তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্রকে অপমান করছেন, তিনি ওই সাংবাদিকের অফিস তথা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘কথা’ বলবেন। কেরলের এর্নাকুলামে এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক এক ছাত্রনেতার কাজকর্মের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে খবর করেছিলেন, পত্রপাঠ তাঁর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর নিল পুলিশ। দেশের দুই প্রান্তে দু’টি ঘটনা, কিন্তু সাংবাদিক-দমনে সমান মরিয়া, এবং নির্লজ্জ।

Advertisement

আরও ভেবে দেখার ব্যাপার— সাংবাদিককে চোখ রাঙানোর কাজে এ দেশের রাজনীতিকদের ‘পারফরম্যান্স’ দলনিরপেক্ষ। অমেঠীতে যে কাজ করেন কেন্দ্রীয় তথা বিজেপির মন্ত্রী, পিনারাই বিজয়নের কেরলে তা-ই করছেন বাম ছাত্রনেতা। অন্তত ঘোষিত ও প্রচারিত রাজনৈতিক আদর্শের নিরিখে বিজেপি ও সিপিএম-এর চেয়ে বেশি বিপরীত দলের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর, কিন্তু স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধে তাদের তৎপরতা ও পারদর্শিতায় বিস্ময়কর রকমের মিল। অন্য দলগুলির অতীত বা বর্তমানই বা কম কিসে— জরুরি অবস্থাকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের হাতে সংবাদ-স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ যেমন ভারতীয় গণতন্ত্রের মুখে অনপনেয় কালিমা লেপন করেছিল, তেমনই আজকের পশ্চিমবঙ্গেও সংবাদমাধ্যম স্বাধীন, সেই দাবি করার উপায় নেই। বিজেপি জমানায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে ভারতের স্থান ক্রমে নিম্নমুখী, আন্তর্জাতিক স্তরেও তা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, অথচ রাজনীতিকদের তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কেন্দ্রে যে বিরোধী দল সাংবাদিক-পীড়নের বিরোধিতায় মুখর, দেখা যাচ্ছে অন্য রাজ্যে শাসক দল হিসাবে তারাই সাংবাদিক-নিগ্রহে অভিযুক্ত।

অমেঠীর বিপিন যাদব বা এর্নাকুলামের অখিলা নন্দকুমারদের উপর রাজনীতিকদের আঘাত আসছে, সাংবাদিক হিসাবে তাঁরা তাঁদের কাজটি করেছেন বলে। সে কাজ প্রশ্ন করার কাজ, গণতন্ত্রে নেতা-মন্ত্রী তথা জনপ্রতিনিধিমাত্রেই যে প্রশ্নের উত্তর দিতে সাংবিধানিক ভাবে দায়বদ্ধ। স্রেফ প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার হুমকি আসলে রাজনীতিকের মনোগত নিরাপত্তাহীনতাই প্রকট করে। শুধু একটি খবর করার জন্য যদি এ দেশে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর হয়, পুলিশ জেরা করতে ডেকে পাঠায়, তা হলে ‘সংবাদ-স্বাধীনতা’, ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’-এর মতো উচ্চভাবের শব্দগুলি কদাপি উচ্চারিত না হলে ভাল— কোনও রাজনৈতিক দলের মুখেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement