Hunger Crisis

শিশুর খিদে

ভারতের খাদ্য সুরক্ষা নীতির ফের পর্যালোচনা প্রয়োজন। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের অধীনে ছ’মাস থেকে তিন বছরের শিশুর জন্য প্রত্যহ পাঁচশো ক্যালরি সম্পন্ন খাবার সরবরাহ হওয়ার কথা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৭
Share:

২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই চিত্রে কোনও উন্নতি হয়নি, বরং সামান্য অবনতি হয়েছে। ফাইল চিত্র।

ভারতে শিশুর ক্ষুধার বহর নতুন নিরিখে পরিমাপ করে একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা দেখাল এক উদ্বেগজনক ছবি। এখনও দু’বছর বয়স হয়নি, অথচ দিনভর অভুক্ত থাকছে, ভারতে এমন শিশুর সংখ্যা ঊনষাট লক্ষ। এই তথ্য মিলেছে জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে, যা সরকারি তথ্য। এত দিন বয়স অনুপাতে শিশুর ওজনের স্বল্পতা (ওয়েস্টিং) এবং দৈর্ঘ্যের স্বল্পতা (স্টান্টিং) দিয়ে মাপা হত শিশু অপুষ্টি। এই প্রথম খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ খতিয়ে দেখা হল, এবং বোঝা গেল যে, ছ’মাস থেকে তেইশ মাস বয়সের শিশুদের প্রায় কুড়ি শতাংশেরই একটা গোটা দিন অভুক্ত থাকার ঝুঁকি রয়েছে। আরও আক্ষেপের কথা, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই চিত্রে কোনও উন্নতি হয়নি, বরং সামান্য অবনতি হয়েছে। সব রাজ্যে অবশ্যই এই ছবি এক নয়— পশ্চিমবঙ্গ-সহ কুড়িটি রাজ্যে ‘খালিপেট’ শিশুর অনুপাত কমেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়, এই দু’টি রাজ্যে এমন খাদ্যবঞ্চনা এতই বেড়েছে যে, জাতীয় গড়ে তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, শিশুদের খাদ্যবঞ্চনার সম্পূর্ণ ছবি এই সমীক্ষা থেকে পাওয়া সম্ভব নয়— হয়তো এই ঊনষাট লক্ষ শিশুর অনেকেই একাধিক দিন খাদ্য পায়নি, বা পুষ্টিগুণহীন খাদ্য পেয়েছে। তবে এত ছোট শিশুদের মধ্যে ক্ষুধার এই ব্যাপ্তি আগে এত স্পষ্ট হয়নি। ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ সালের মধ্যে ‘স্টান্টিং’ এবং ‘ওয়েস্টিং’-এর হার ভারতে কিছু কমেছে। কেন্দ্র একেই ‘সাফল্য’ বলে দাবি করে আসছে। এখন খাদ্য বঞ্চনার এই চিত্র নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

Advertisement

প্রথম চিন্তাটি খাদ্যসুরক্ষা নিয়ে। ভারতকে ক্ষুধাশূন্য করা, সকলের জন্য যথেষ্ট খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার যে লক্ষ্য ভারত গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য’-র অংশ হিসাবে, তার দিশা অস্পষ্ট। আজও ভারতে তিন জন শিশুর মধ্যে অন্তত এক জন অপুষ্ট। ২০২১ সালের গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট বলছে, সদ্যোজাতের ওজনে ঘাটতি, শিশু অপুষ্টি, মায়ের মৃত্যুহার, রক্তাল্পতা— প্রতিটি নিরিখেই ভারত পিছিয়েছে। অতএব, ভারতের খাদ্য সুরক্ষা নীতির ফের পর্যালোচনা প্রয়োজন। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের অধীনে ছ’মাস থেকে তিন বছরের শিশুর জন্য প্রত্যহ পাঁচশো ক্যালরি সম্পন্ন খাবার (যথেষ্ট প্রোটিন-সহ) সরবরাহ হওয়ার কথা। তা সত্ত্বেও কেন এই বয়সের শিশুদের মধ্যে ক্ষুধার প্রকোপ এত বেশি? তার কারণ, বরাদ্দের অপ্রতুলতা, কর্মীর অভাব এবং নজরদারির গাফিলতিতে বিপন্ন এই প্রকল্পটিই।

অথচ, এই প্রকল্পটিই সার্থক ভাবে কাজ করলে প্রশমিত হত দ্বিতীয় উদ্বেগটি— শিশুর পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। অতি ছোট শিশুর অভুক্ত থাকার কারণ কেবল খাদ্যাভাব নয়, তাকে খাইয়ে দেওয়ার লোকের অভাব। দরিদ্র পরিবারের মা কাজে বেরোতে বাধ্য হলে শিশুর পরিচর্যা অবহেলিত হয়, এ-ও শিশু-অপুষ্টির কারণ। দরিদ্র, শ্রমজীবী এলাকাগুলিতে সারা দিনব্যাপী অঙ্গনওয়াড়ি, বা ক্রেশ চালানো তাই প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা শিশুর চাহিদাগুলি চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট ভাবে সেগুলি পূরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশাল প্রকল্পের বিপুল বরাদ্দের প্রচার থেকে সে ক্ষেত্রে বেরোতে হবে নেতাদের। তাঁদের ভোটের খিদেতে রাশ টানলে হয়তো শিশুর পেট ভরতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement