Indo-Myanmar Border

সীমান্তে অশনিসঙ্কেত

ভারত-মায়ানমার সীমান্তে আপাতত প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে। এবং তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে নাগাল্যান্ড ও মিজ়োরামের জনসমাজ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৫
Share:

ইতিহাস পাল্টে যায় জনদৃষ্টির অন্তরালে। এই মুহূর্তে একটি বৃহৎ পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলছে উত্তর-পূর্ব ভারত, কিন্তু আশ্চর্য— কিংবা একটুও আশ্চর্য নয়— দেশ জুড়ে সে বিষয়ে কত কম অলোচনা। ভারত-মায়ানমার সীমান্তে আপাতত প্রাচীর তৈরির কাজ চলছে। এবং তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে নাগাল্যান্ড ও মিজ়োরামের জনসমাজ। এই কাজ এখনই বন্ধ না হলে বড় ধরনের প্রতিরোধ ও অভ্যুত্থানের হুমকি দিয়েছে নাগা ও কুকি সংগঠনগুলি, বিশেষত ইউএনসি বা ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল। ২৭ জানুয়ারি একটি নির্দেশ প্রকাশ করেছে ইউএনসি, যাতে বলা হয়েছে যে সমস্ত নাগা মানুষ, বিশেষত যাঁরা চান্ডেল নাগা পিপলস অর্গানাইজ়েশন বা সিএনপিও নামক আঞ্চলিক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন, তাঁরা কোনও মতেই এই ‘ফেন্সিং প্রোজেক্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। বলার অপেক্ষা করে না, স্থানীয় মানুষের এমন মাত্রার অসহযোগ থাকলে কোনও মতেই ভারতীয় রাষ্ট্রের পক্ষে কাজটি সহজসাধ্য নয়। ফলে এখন বড় ধরনের সঙ্কটের সামনে দাঁড়িয়ে নাগাল্যান্ড সরকার। মিজ়োরামেও পরিস্থিতি সঙ্গিন। মিজ়ো জ়িরিয়াল পল বা এমজ়েডপি সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে জানিয়েছে যে প্রাচীর নির্মাণ এখনই বন্ধ করতে হবে। নতুবা সীমা পারাপারকারী সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংযোগের অভাবে মিজ়ো (এবং নাগা) জীবনযাপনের ভিত সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Advertisement

নাগা ও কুকি জনজাতি জীবনযাপন নিয়ে আশঙ্কার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আরও জটিল করছে মেইতেই-দের মতামত। তাঁরা এই প্রাচীরের পক্ষে। তবে প্রাচীরবন্ধনের মাধ্যমে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম বা এফএমআর বন্ধ করার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি অনুধাবনের আগে জানা ভাল, বাস্তবিক এই এফএমআর কী ও কেন। ১৯৬৮ সাল থেকে ভারতীয় রাষ্ট্র এফএমআর নীতি প্রণয়ন করে একটি প্রচলিত স্বাধীন যাতায়াত প্রথাকে স্বীকৃতি দেয়। চারটি রাজ্যে এই এফএমআর বলবৎ হয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজ়োরাম। সীমান্তের এই মুক্ত চলাচল আগে চল্লিশ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল, যা ২০০৪ সালে কমিয়ে ১৬ কিলোমিটারে আবদ্ধ করা হয়। ২০১৬ সালে আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এই চলাচল বন্ধ করা হবে। নাগাল্যান্ড ও মিজ়োরামে বিধানসভা এই প্রস্তাবের বিপক্ষে মতদান করে, যথাক্রমে ১ মার্চ এবং ২৮ মার্চ তারিখে। গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এফএমআর পুরোপুরি তুলে দেওয়া না হলেও আরও সীমিত করা হচ্ছে, ষোলো কিলোমিটারের পরিবর্তে দশে তাকে বাঁধা হচ্ছে। বিশেষ কয়েকটি জায়গা নির্ধারিত হচ্ছে, একমাত্র যেখান দিয়ে পারাপার করা যাবে।

এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক জনবিক্ষোভ— যা প্রায় হিংসার আকার ধারণ করতে উদ্যত, তার মূল কথাটি এই যে নাগা সার্বভৌমতাকে এই নতুন নিয়মে বিনষ্ট করা হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই জনজাতি সার্বভৌমতার বোধের গুরুত্ব কতটা, তা কেন্দ্রীয় সরকারের অবগত নিশ্চয়ই। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক (কিংবা বহুপাক্ষিক) ভিত্তিতে সমাধান করা দরকার। এমনিতেই মণিপুরের আগুন এখনও নেবেনি, এখনও মানুষের প্রাণসংশয় কমেনি। তার পর আবার নতুন করে নাগাল্যান্ড এবং মিজ়োরামে এই বিক্ষোভ অশনিসঙ্কেতেরই প্রকাশ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement