Mother teresa

বিমুখ

মিশনারিজ় অব চ্যারিটি এই তালিকাতেই ছিল। সম্প্রতি জানা গিয়াছে, সরকার তাহাদের বিদেশি অনুদান গ্রহণের আইনি অধিকার পুনঃ ফিরাইয়া দিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৫
Share:

ফাইল চিত্র।

মিশনারিজ় অব চ্যারিটি লইয়া খুব গোল বাধিয়াছিল, মাদার টেরিজ়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সমাজসেবামূলক সংস্থা তথা এনজিও-র বিদেশি অর্থসাহায্য গ্রহণের অনুমতি কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাখ্যান করায়। ভারতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ-সহ বহুবিধ ক্ষেত্রে কাজ করা বিবিধ অসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ২০১০-এর ‘ফরেন কনট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট’ (এফসিআরএ)-র অধীনে এফসিআরএ লাইসেন্স লইতে ও সময়ে নবীকরণ করিতে হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাহার সময়সীমা গত বৎসরের ৩০ সেপ্টেম্বর হইতে প্রথমে ৩১ ডিসেম্বর, পরে এই বৎসরের ৩১ মার্চ অবধি বাড়াইয়াছে। সেই আবহেই জানা গিয়াছে, গত ৩১ ডিসেম্বর প্রায় ছয় হাজার এনজিও-র এফসিআরএ লাইসেন্স শেষ হইয়া গিয়াছে, নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাহারা কোনও বিদেশি অনুদান বা অর্থসাহায্য গ্রহণ করিতে পারিবে না। মিশনারিজ় অব চ্যারিটি এই তালিকাতেই ছিল। সম্প্রতি জানা গিয়াছে, সরকার তাহাদের বিদেশি অনুদান গ্রহণের আইনি অধিকার পুনঃ ফিরাইয়া দিয়াছে।

Advertisement

লাইসেন্স ফুরাইয়া যাওয়া এনজিও ও প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আইআইএম, আইআইআইটি, এসআরএফটিআই, অক্সফ্যাম ইন্ডিয়া, ভি ভি গিরি ন্যাশনাল লেবার ইনস্টিটিউট, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবীবিদ্যা চর্চা কেন্দ্র যেমন আছে, তেমনই আছে রামকৃষ্ণ মিশনের একটি শাখা, তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম, শ্রীসাঁইবাবা সনাতন ট্রাস্ট-ও, জানা গিয়াছে। তবু সব ছাপাইয়া মিশনারিজ় অব চ্যারিটি-ই সামনে আসিয়া দাঁড়াইল কেন? তাহার কারণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি মন্তব্য। কোনও এনজিও বা প্রতিষ্ঠানের এফসিআরএ লাইসেন্স না পাইবার কারণ মূলত দুইটি— সময়মতো তা নবীকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা, এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বাঁধিয়া দেওয়া যোগ্যতার মাপকাঠিতে পাশ করিতে না পারা। মিশনারিজ় অব চ্যারিটি-র ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে দ্বিতীয় কারণটিই বিবৃত হইয়াছে। তদুপরি বলা হইয়াছে, এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ‘অ্যাডভার্স ইনপুট’ বা ‘বিরুদ্ধ তথ্য’ আসিবার কথা। প্রশ্ন এইখানেই। এই বিরুদ্ধ তথ্য হিন্দুত্ববাদীদের তরফে কি না, কিংবা আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, গুজরাতে মিশনারিজ় অব চ্যারিটি-র একটি শাখায় সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পকে ব্যবহার করিয়া ধর্মান্তরণের অভিযোগে কেন্দ্রীয় সরকােরর প্রচ্ছন্ন সমর্থনের সিলমোহর কি না, সেই কারণেই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবীকরণের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হইয়াছিল কি না, কথা উঠিয়াছে।

কথা উড়াইয়াও দেওয়া যাইতেছে না, কারণ বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ব-আচরণের ভূরি ভূরি উদাহরণ। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পছন্দ না হইলে, কিংবা ধর্মীয়, রাজনৈতিক এমনকি কার্যক্ষেত্রের মতাদর্শ না মিলিলে তাহাকে প্যাঁচে ফেলিবার প্রবণতা এই সরকারে পরিলক্ষিত। বিজেপি জমানায় সংখ্যালঘু সংগঠনগুলিকে নিশানার অভিযোগ তো রহিয়াছেই। বিরোধীরা মনে করাইয়া দিতেছেন সাম্প্রতিক কালে গ্রিনপিস ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর ন্যায় সংস্থার সহিত কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বৈরথের কথা, সংস্থাগুলির পক্ষে যাহার ফল ভাল হয় নাই। কাজে খুঁত বাহির করিতে না পারিলে ছলছুতার প্রয়োজন পড়ে, মিশনারিজ় অব চ্যারিটি কাণ্ডেও কি তাহাই হইয়াছিল? আপাতত স্বস্তির সুর মিলিলেও সেই পুরাতন ধন্দ থাকিয়া গেল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement