প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কর্মীদের বর্তমান প্রয়োজন কতখানি, তা যাচাই করতে এবং কাজের সন্ধানে প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত কর্মীদের রাজ্যের বাইরে যাওয়ার প্রবণতার মূল্যায়ন করতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে ৪৪ সদস্যের কমিটি গড়েছে রাজ্য সরকার। এমত উদ্যোগের মূল লক্ষ্য, পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান, যাতে কাজের বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ী সেই প্রশিক্ষিত কর্মী এই রাজ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিযুক্ত হতে পারেন। একই সঙ্গে কমিটি দেখবে, বাংলা থেকে কত জন প্রশিক্ষিত এবং অপ্রশিক্ষিত কর্মী অন্য রাজ্যে কাজ করছেন। প্রসঙ্গত, কিছু দিন পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক আলোচনাতে রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ খোঁজার উপর জোর দিয়েছিলেন, এবং তরুণদের উৎসাহ দিয়েছিলেন যাতে তাঁরা রাজ্য সরকারের স্বনিযুক্তি প্রকল্পগুলির সুবিধা নিতে পারেন। সাম্প্রতিক রেল-দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিনিয়ত যে বিপুল সংখ্যক কর্মী কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন— সরকারি হিসাব অনুযায়ী কমবেশি চল্লিশ লক্ষ— তাঁদের নিয়ে আবার রাজ্য সরকারের প্রতি আক্রমণ শানানো চলছে। রেল-দুর্ঘটনার সঙ্গে এই সমস্যাকে জড়িয়ে ফেলার মধ্যে রয়েছে নিছক কু-রাজনীতি। তবে সমস্যাটি যে বিরাট, এবং ভয়ঙ্কর, তাতে সংশয় নেই। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সেই স্রোত রাজ্যের শাসক দলেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। বালির বাঁধে স্রোত আটকায় কি না, সে প্রশ্ন পৃথক। কিন্তু সরকার বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে, এমন একটি দৃশ্যপট রচনা করার রাজনৈতিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
সরকার রাজ্যের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেই পারে। তাঁদের জন্য যদি রাজ্যের মধ্যেই কর্মসংস্থান হয়, তাও সুসংবাদ। প্রশ্ন হল, পশ্চিমবঙ্গে সমস্যা কি জোগানসংক্রান্ত— অর্থাৎ, রাজ্যে যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত কর্মী নেই; না কি চাহিদাসংক্রান্ত— অর্থাৎ, রাজ্যে যথেষ্ট কাজের সুযোগ নেই? উত্তরটি রাজ্যবাসী বিলক্ষণ জানেন— যাঁরা কাজের সন্ধানে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁরা আরও বেশি জানেন। ফলে, শ্রমিক-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এই রাজ্য থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতায় রাশ টানা যাবে না। কথাটি এমনই স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন এবং অনস্বীকার্য যে, মুখ্যমন্ত্রী-সহ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয়রা তা বুঝতে পারেননি, তা বিশ্বাস হয় না।
ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী বহু বার পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন, এমনকি বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজনও করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি। শিল্পের জন্য জমি জোগাড়ের পথে রাজনৈতিক বাধাও দূর হয়নি। অতিমারি দেখিয়ে দিয়েছিল ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের বিপন্নতা। ভিনরাজ্যে থাকাকালীনও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। অসুরক্ষিত অবস্থায় কাজ করতে গিয়ে প্রাণহানিও ঘটে। তবুও সেই প্রবণতায় ভাটা পড়ে না। পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের পথে বাধা প্রচুর— এ রাজ্যের বর্তমান রাজনীতির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে শিল্পসম্ভাবনাকে বলি দিয়ে— তার এক দিকে রয়েছে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা, অন্য দিকে রয়েছে সর্বগ্রাসী সিন্ডিকেট রাজ। কাজেই, পরিযায়ী শ্রমিকের কথা ভাবতে হলে শেষ পর্যন্ত রাজ্যে শিল্পায়নের ব্যবস্থা করা ভিন্ন উপায় নেই, এই কথাটি মুখ্যমন্ত্রীকে স্বীকার করতেই হবে।