Mayanmar

শুভ সঙ্কেত

প্রতিবেশী মায়ানমার প্রসঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের এই পক্ষাবলম্বন শুভ ইঙ্গিত বহন করিতেছে। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ০৫:০৭
Share:

সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব মায়ানমার।

অবশেষে একটি সদর্থক কূটনৈতিক পদক্ষেপ। বিগত সপ্তাহে যে দিন মায়ানমারে নিহত নাগরিকের সংখ্যা ৫৮০ ছাড়াইল, সেই দিন প্রকাশ্যে সামরিক সরকারের নিন্দা করিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থায়ী ভারতীয় প্রতিনিধি টি তিরুমূর্তি। তিনি সামরিক সরকারকে সংযত হইবার পরামর্শ দিয়াছেন, গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাইবার কথা বলিয়াছেন। ইহা প্রথম বার, অতএব ইহার মধ্যে সাউথ ব্লকের অবস্থান পরিবর্তন দেখিলে ভুল হইবে না। কূটনৈতিক মহলের অনুমান, প্রতিবেশী দেশে নিয়মিত অস্থিরতার ফল ভুগিতেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। মণিপুর ও মিজোরামে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়িতেছে। সীমান্ত বরাবর হিংসার আশঙ্কায় চিন্তিত নয়াদিল্লি। মায়ানমারের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলির উত্তর-পূর্ব যোগের ইতিহাস অস্বীকার করা যাইবে না, তৎসূত্রে নৈরাজ্যও। সীমান্তবর্তী বিশৃঙ্খলা দেশের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করিলে নয়াদিল্লি পদক্ষেপ করিবেই। তদুপরি, আন্তর্জাতিক মহলের উচ্চকণ্ঠ প্রতিবাদও সাহস জুগাইতেছে। ইত্যাকার হিসাব কষিয়াই হয়তো সাহসিক পদক্ষেপ— এবং গণতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল। সিদ্ধান্ত স্বাগত। কূটনীতির জটিল ও বিচিত্র হিসাবেও সাহসিকতা একটি জরুরি মাত্রা, সন্দেহ নাই।

Advertisement

প্রসঙ্গত, পূর্বতন সামরিক জমানাতেও ভারত বিচলিত হইয়াছিল, আউং সান সু চি-র আন্দোলনকে পরোক্ষ ভাবে সমর্থনও করিয়াছিল। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্রশক্তির সরাসরি নিন্দা করে নাই। ২০০৭ সালে মায়ানমারে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ সেনা কর্তৃক নিরুদ্ধ হইবার পরে বহু রাষ্ট্র ধিক্কার জানাইয়াছিল; কিন্তু ভারত বলিয়াছিল, প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাইবার অভিপ্রায় তাহাদের নাই, মায়ানমারের সার্বভৌমত্ব নয়াদিল্লি সম্মান করে, অতএব সেই দেশের জনগণকেই সংগ্রাম করিয়া গণতন্ত্র অর্জন করিতে হইবে। কেন এই সাবধানি পদক্ষেপ, বুঝিতে অসুবিধা নাই। একেবারে পাশের ঘরে যদি শত্রু বাসা বাঁধিয়া লয়, তাহা হইলে এমন সতর্কতা জরুরি অবশ্যই। কূটনৈতিক স্বার্থ-মতে, মায়ানমার ভারতসঙ্গ ত্যাগ করিলে নয়াদিল্লির বিপুল ক্ষতি, এবং সেই ক্ষতির পরিমাণ মায়ানমার-ভারত দ্বিপাক্ষিকতার অপেক্ষা অনেক গুণ বড়— চিনের উপস্থিতির কারণে। এই প্রেক্ষিতেই নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক নিন্দা প্রস্তাবটির গুরুত্ব বুঝিতে হইবে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য আরও একটি বিষয়। জম্মুতে আটক রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর কিছু মানুষকে যথাশীঘ্র স্বদেশে পাঠাইবার প্রার্থনা জানাইয়া আবেদন জমা পড়িয়াছিল সুপ্রিম কোর্টে, যাহা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে খারিজ হইয়া গিয়াছে। রোহিঙ্গা সূত্রে ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা’ সঙ্কটাপন্ন হইবার এবং ‘দুর্বৃত্ত কার্যকলাপ’ বৃদ্ধি পাইবার অভিযোগ করিয়াছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আদালত জানাইল, ‘ডিপোর্টেশন’ বা দ্বীপান্তরের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া কাহাকেও দেশান্তরী করা যাইবে না, প্রশ্নটি মানবাধিকারের। মায়ানমারে গণহত্যা বিষয়ে আদালত মন্তব্যে অস্বীকৃত হইলেও রায়ের তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। রোহিঙ্গা-পক্ষের আবেদনকারীর বয়ানে সামরিক সরকারের অত্যাচারের প্রসঙ্গ উঠিয়াছিল, দ্রুত দ্বীপান্তরের আবেদনে স্থগিতাদেশ উহাকেই নৈতিক মান্যতা প্রদান করিল। প্রতিবেশী মায়ানমার প্রসঙ্গে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের এই পক্ষাবলম্বন শুভ ইঙ্গিত বহন করিতেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement