INC

পথে এ বার

ইতিহাসের তর্কবিতর্ক বাগবিতণ্ডা চলতেই থাকবে, কিন্তু ইত্যবসরে বিরোধী কংগ্রেস নেতাদের পদযাত্রা আয়োজনের রকম দেখে এক ধরনের স্বস্তি বোধ করা সম্ভব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২২ ০৪:৪৮
Share:

আশি বছর পার। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পর এ বার ভারত জোড়ো আন্দোলন? মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতৃত্ব দিল্লিতে এমনই ঘোষণা করলেন, ১৯৪২ সালের অগস্ট আন্দোলনের সঙ্গে তাকে মিলিয়েও দেওয়া হল। দেড়শো দিনে বারোটি প্রদেশ এবং দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ৩৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা মানুষকে উজ্জীবিত করবে, জয়রাম রমেশের মুখে এমন দাবি শোনা গেল। যাত্রার উদ্দেশ্য যখন সাধারণ মানুষকে সাহস জোগানো, নির্যাতন কিংবা বিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, রুখে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করা— সমগ্র পরিকল্পনাটির রাজনৈতিক প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য এমন কোনও আয়োজনের মূল্য বিরাট। আর একটি জরুরি কথাও প্রসঙ্গক্রমে এই পদযাত্রা-সূত্রে উঠে আসছে কংগ্রেস নেতাদের মুখে। তা হল, ১৯৪২ সালে জাতীয় আন্দোলনের সময় আরএসএস বা হিন্দু মহাসভার অবস্থান। জয়রাম রমেশ প্রশ্নটি সময়মতো নতুন করে ছুড়ে দিয়েছেন যে, গান্ধীজি, নেহরু, বল্লভভাই পটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ, গোবিন্দবল্লভ পন্থ প্রমুখ যখন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছিলেন, কারাবাস বরণ করেছিলেন, তখন ঠিক কী করছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়রা? তাঁরা সকলে সরে ছিলেন ব্রিটিশবিরোধিতা থেকে। অনেকে সক্রিয় ভাবে ব্রিটিশের সহযোগিতাও করেছিলেন। তবে এখানে একটি কথা। আশি বছর আগের ইতিহাসের ভিত্তিতে কিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করার চেষ্টা বালখিল্যোচিত— যে কোনও তরফেই। কংগ্রেস নেতারা সে কালের আরএসএস বিষয়ে বঙ্কিম মন্তব্য করলেও তা দিয়ে এ কালের হিন্দুত্ববাদকে বোঝা যায় না। তবু তাঁদের এই মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, বর্তমান বিজেপি-আরএসএস নেতৃত্ব যে প্রতি বিষয়ে নিজেদেরই ভারতের জাতীয়তার সর্বশ্রেষ্ঠ ঠিকাদার বলে বিজ্ঞাপিত করেন, আর অন্যদের, বিশেষত কংগ্রেসের, মুণ্ডপাত করেন— তা কত ভিত্তিহীন, বোঝানোর জন্য। আজকের বিজেপি শাসকদের স্বীকার করতে হবে, এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মুখ্যতম ও সক্রিয়তম ভূমিকা নিয়েছিল কংগ্রেস, আর কেউ নয়।

Advertisement

ইতিহাসের তর্কবিতর্ক বাগবিতণ্ডা চলতেই থাকবে, কিন্তু ইত্যবসরে বিরোধী কংগ্রেস নেতাদের পদযাত্রা আয়োজনের রকম দেখে এক ধরনের স্বস্তি বোধ করা সম্ভব। সুদীর্ঘ সময় ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কোনও রাজনৈতিক কার্যক্রম ঠিক করে উঠতে পারেনি, মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরির কোনও সম্যক প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। বেশির ভাগই ঘোষণা-বক্তৃতার মঞ্চপ্রযোজনা, সংসদের ওয়েল-ভ্রমণ কিংবা সমাজমাধ্যমে হুঙ্কার-তোলন। অন্তত একটি বার যে পদযাত্রার সূত্রে নেতারা রাস্তায় নামবেন, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তাঁদের পায়ে ধুলো লাগবে, মানুষের সঙ্গে তাঁদের মুখোমুখি মোলাকাত হবে, ভারতীয় রাজনীতির পক্ষে এ এক সুসংবাদ। গণতন্ত্রের সংসদীয় কার্যক্রম খুব জরুরি বস্তু ঠিকই, কিন্তু এই সব প্রতিষ্ঠানের বাইরেও যে কিছু গণতান্ত্রিক কার্যক্রম সম্ভব, তা এখন ভারতে মনে করিয়ে দেন কৃষকরা কিংবা সংখ্যালঘুরা— মূলস্রোতের নেতারা নন। প্রাক্-স্বাধীনতা যুগের নেতাদের সাফল্যটুকু দেখলেই চলবে? তাঁদের পরিশ্রম ও রাজনীতিদর্শনটিও ভাল করে নজর করতে হবে বইকি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement