Coronavirus in India

লক্ষ্যভ্রষ্ট

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যকে চিঠি দিয়া অবিলম্বে টিকাকরণের হার বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০৩
Share:

ফাইল চিত্র।

টিকা লইয়া ঢক্কানিনাদ অব্যাহত। নূতন বৎসরের শুরুতেই বিবৃতি দিয়া কেন্দ্র দাবি করিয়াছে, ভারতের টিকাকরণ কর্মসূচি যথেষ্ট সফল এবং অন্য দেশের তুলনায় টিকাদানের হারেও ভারত আগাইয়া আছে। শুনিয়া গর্ববোধ করিবারই কথা। কিন্তু অভিজ্ঞতা বড় বালাই। ইতিপূর্বে কেন্দ্র যে প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়াছিল, তাহার সহিত বাস্তবের যে অসেতুসম্ভব দূরত্ব, সেই কথা স্মরণ করিলে নাগরিক বিলক্ষণ সাবধান হইবেন। সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়া জানাইয়াছিল যে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের ৯৪ কোটি প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার দুইটি ডোজ় দেওয়া হইবে। সেই সময়সীমা পার হইয়াছে। লক্ষ্যপূরণ হয় নাই। নূতন বৎসরের শুরুতে দেখা গিয়াছে, দেশের অন্তত ১০ শতাংশ প্রথম ডোজ়টিও পান নাই। দ্বিতীয় ডোজ় পান নাই অন্তত ৩৫ শতাংশ মানুষ। বিশ্বের অনেক দেশই ওমিক্রন সংক্রমণের মুখে টিকার বুস্টার ডোজ় প্রদান শুরু করিয়াছে। কিন্তু ভারত এখনও সকল প্রাপ্তবয়স্ককে দুইটি ডোজ়ও দিয়া উঠিতে পারিল না। কবে পারিবে, সরকার তাহাও স্পষ্ট করিল না। ইহা সবিশেষ চিন্তার। অথচ, ঢাকের বাদ্যি মিলাইতেছে না।

Advertisement

উল্লেখ্য, দেশে যে পরিমাণ টিকাকারণ হইয়াছে, তাহাও সর্বত্র সমান নহে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যকে চিঠি দিয়া অবিলম্বে টিকাকরণের হার বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়াছে। পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে টিকাকরণের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় নীচে। মণিপুরে প্রথম দফার টিকাকরণের হারই আশানুরূপ নহে। অতিমারির ক্ষেত্রে এই অসাম্য ভয়ঙ্কর। সাফল্য প্রচারের পূর্বে এই তথ্যগুলি স্মরণে রাখা প্রয়োজন ছিল। ইহাও স্মরণে রাখিতে হইত যে, জনসংখ্যার কারণেই সার্বিক টিকাকরণের বিচারে ভারত অন্য দেশগুলির তুলনায় আগাইয়া থাকিবে। ইহা আশ্চর্য নহে। বরং তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে দাঁড়াইয়াও কেন এখনও দেশের টিকাকরণ মূলত কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন-নির্ভর হইয়াই রহিল, আশ্বাস সত্ত্বেও বাজারে অন্য টিকাগুলির দর্শন মিলিল না— সেই পর্যালোচনা জরুরি ছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ভারত মৃত্যুমিছিল প্রত্যক্ষ করিয়াছে। টিকা আবিষ্কার এবং টিকা-রাজনীতির প্রবল ঢাক পিটাইবার পরেও দেশের অভ্যন্তরেই টিকার মর্মান্তিক সঙ্কট দেখিয়াছে। সেই বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি কেহ চাহে না। অথচ, এই মুহূর্তে প্রবল সংক্রামক ওমিক্রন স্ট্রেনটির সামনে দাঁড়াইয়া দেখা যাইতেছে, প্রথম দফার টিকাপ্রাপ্তদের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাইয়াছে। এবং বহু মানুষ একটিও ডোজ় পান নাই। সাফল্য দাবির কি ইহা উপযুক্ত সময়?

আত্মপ্রচারের অত্যুৎসাহের ধূম্রজাল ভেদ করিয়া দৃষ্টি প্রসারিত করিতে পারিলে বিজেপি বুঝিত, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় টিকাকরণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব, প্রচারের বিষয়বস্তু নহে। টিকাকরণ সুষ্ঠু ভাবে সময়মতো সম্পন্ন হইবে, ইহাই সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত। ইহা অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বিষয়ও নহে। কিন্তু সাড়ে সাত বৎসরের বিজেপি সরকারের বৈশিষ্ট্যই হইল, যৎসামান্য কৃতিত্বকেও মহা আড়ম্বরে প্রচার করা, যাহাতে না-পারিবার ব্যর্থতাটি চাপা পড়িয়া যায়। মনে রাখা প্রয়োজন, প্রশ্ন যেখানে নাগরিকের জীবন-মৃত্যুর, সেইখানে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কোনও স্থান নাই। ফের দেশে গণচিতা জ্বলিলে, লক্ষ্যপূরণ না করিবার ব্যর্থতাটি আর ঢাকের আওয়াজে চাপা পড়িবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement