কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সম্প্রতি প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য দু’টি পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমটি ‘কৃষি-ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম’ পোর্টাল (কে-ডিএসএস), যা এ বারের বাজেটে ঘোষিত কৃষিকেন্দ্রিক ডিজিটাল পরিষেবা ‘ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ প্রকল্পের অংশ। এই প্ল্যাটফর্মটি নির্দিষ্ট অঞ্চল সংক্রান্ত (জিয়োস্পেশিয়াল) তথ্য এবং উপগ্রহ চিত্রের দ্বারা ফসলের অবস্থা, আবহাওয়ার ধরন, মাটির নীচে জলের পরিস্থিতি, আঞ্চলিক জলাধারের জলস্তর এবং মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সাম্প্রতিকতম তথ্য কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে। চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি অথবা পতঙ্গের আক্রমণের মতো বিপদের আগাম সতর্কতা জারির পাশাপাশি সরকারকে আঞ্চলিক কৃষিক্ষেত্রের চাহিদার বিষয়েও অবগত করতে পারবে ‘কে-ডিএসএস’। দ্বিতীয় পদক্ষেপ ‘ন্যাশনাল পেস্ট সার্ভেল্যান্স সিস্টেম’ (এনপিএসএস) হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক একটি পদ্ধতি, যা দেশ জুড়ে ক্ষতিকারক কৃষি-পতঙ্গ দমন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার কাজে লাগবে। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটির দ্বারা দেশের প্রায় চোদ্দো কোটি কৃষক উপকৃত হবেন। তা ছাড়া ফসলে অত্যধিক কীটনাশক ব্যবহারের সমস্যার সমাধানে এটি কাজে লাগতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মাঝে যেখানে সুস্থায়ী কৃষিকাজের পদক্ষেপ আরও জরুরি হয়ে উঠছে, সেখানে কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক বদল আনতে সাহায্য করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা জিয়োস্পেশিয়াল প্রযুক্তি। আগামী দিনে কৃষি গবেষণা এবং সেই সংক্রান্ত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে কৃষিক্ষেত্রকে আরও ভাল ভাবে প্রস্তুত করা যাবে। জলবায়ু সহনশীল কৃষি উৎপাদন বাড়লে তা সুস্থায়ী খাদ্য সরবরাহ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে। প্রসঙ্গত, ২০২১-এ জিয়োস্পেশিয়াল তথ্য নীতিতে নির্দিষ্ট অঞ্চল এবং ডেটা ম্যাপিং সংক্রান্ত নিয়মকানুনে পরিবর্তন আসার পর কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিভিন্ন অঞ্চল সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহারের পথ প্রশস্ত হয়েছে।
তবে, কৃষিক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উপগ্রহ চিত্র বা ‘রিমোট সেন্সিং’-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যাও রয়েছে বিবিধ। যেমন, এই ধরনের প্রক্রিয়াগুলি অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। রয়েছে প্রায়োগিক জটিলতাও। যে-হেতু দেশের অধিকাংশ মানুষের জমির আকার খুব বড় নয়, তাই এ ক্ষেত্রে অতি উচ্চ মানের উপগ্রহ চিত্রের প্রয়োজন পড়ে। তেমন নিখুঁত প্রযুক্তি এ দেশে সহজলভ্য নয়। কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য তাই সরকার ‘ইন্ডিয়া ডিজিটাল ইকোসিস্টেম অব এগ্রিকালচার’ নামক কাঠামো গড়ে তুলেছে যার মাধ্যমে রোবোটিক্স, ড্রোন ও ডেটা অ্যানালিটিক্স-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এই ক্ষেত্রে আরও বেশি করে ব্যবহৃত হতে পারে। দেশে কৃষি গবেষণার উপরে যে আরও জোর দিতে হবে, তাতে সংশয়মাত্র নেই। অথচ, এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে কৃষি এবং কৃষক উন্নয়ন মন্ত্রকের অন্তর্গত স্বশাসিত গবেষণাকেন্দ্রগুলির বরাদ্দ দুই শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। ফলে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটির উন্নতিসাধন করতে হলে সরকারকে শুধু নীতি প্রণয়ন নয়, গবেষণার পাশাপাশি উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপরেও জোর দিতে হবে।