Rain Water Conservation

পথ-প্রদর্শক

বিজ্ঞানীরা যেখানে বলছেন যে বৃষ্টির জলের যথাযথ সংরক্ষণ করলে গৃহস্থালির সত্তর শতাংশ জলের প্রয়োজন মেটানো যায়, সেখানে অবহেলার কারণে বৃষ্টির জলের বিপুল অপচয় হচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:০৭
Share:

জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে জল সংরক্ষণের গুরুত্বটি বহু-আলোচিত। বিচ্ছিন্ন উদ্যোগও শুরু হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। সম্প্রতি যেমন বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং তার পুনর্ব্যবহারের অভিনব পদক্ষেপ করছেন হাওড়া স্টেশন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বার্ষিক যত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, তা থেকে প্রায় ৯৭ হাজার ৫২৪ ঘনমিটারের মতো জল মেলে। স্টেশনের ২৩টি প্ল্যাটফর্ম এবং তার মূল ভবনের বিরাট ছাদ এই জল ধরে রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর একাংশ আবার সংলগ্ন জলাধারের সাহায্যে ভূগর্ভে ফেরত পাঠানো হচ্ছে জলস্তর রক্ষার লক্ষ্যে। বাকি জল শোধন করে সারা বছর ব্যবহার করা হচ্ছে স্টেশন, ট্র্যাক, প্ল্যাটফর্ম সাফাইয়ের কাজে। গত কয়েক বছর ধরেই এই পদক্ষেপ নজর কেড়েছে সকলের। এই ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নত করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ। অভিনব এই উদ্যোগের জন্য ইন্ডিয়ান গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের প্ল্যাটিনাম রেটিংও পেয়েছে এই স্টেশন।

Advertisement

এই উদ্যোগ গোটা রাজ্যের ক্ষেত্রেই অতি প্রাসঙ্গিক, যে-হেতু গত কয়েক বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে রাজ্যের বহু স্থানে দেখা দিচ্ছে জলসঙ্কট। আগামী দিনে তা যে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে, সেই আশঙ্কা প্রবল। খাস কলকাতাতেই এ বছর মেয়রকে নাগরিকদের আসন্ন জলকষ্টের বিষয়ে সতর্ক করতে হয়েছিল গঙ্গার জলস্তর হ্রাস পাওয়ার কারণে। এ ছাড়া, কৃষিকাজে ব্যবহার-সহ জল উত্তোলনের জেরে বহু স্থানেই নেমে গিয়েছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর। দেশের অন্যত্রও সঙ্কটের চিত্রটা আলাদা নয়। ফলে জনসংখ্যা, কৃষি এবং শিল্পক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে জলের বিকল্প উৎসের খোঁজ করতে হয়েছে প্রশাসনকে। যার জেরেই এ-যাবৎ বেড়েছে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের চাহিদা। এ দেশে বাড়ির ছাদে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথম পথ দেখিয়েছিল তামিলনাড়ু, যেখানে ২০০১ সালে রাজ্যের জলের উৎসগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জলস্তর বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রকল্প চালু করেছিল জয়ললিতা সরকার। তা ছাড়া এই প্রক্রিয়ার বিবিধ উপযোগিতার কথাও বহু কাল ধরে বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, এর পরিবেশগত সুবিধা হল— বড় জলাধার বা ট্যাঙ্কে বৃষ্টির জল জমার ব্যবস্থা থাকলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নিকাশি নালাগুলির উপরে চাপ কমবে। ফলে এলাকার জলমগ্ন হওয়ার সমস্যা রোধ করা সম্ভব। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করলে বন্যা রোধ করা যায়। ফলে মাটির উপরের স্তরের ক্ষয় কমে। তা ছাড়া বৃষ্টির জলে কোনও রাসায়নিক পদার্থ না থাকায় এটি অনায়াসেই সেচের কাজে ব্যবহার করা যায়।

অথচ জল নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা না থাকার ফলে আজ মহানগর তথা রাজ্যের বহু স্থানে জল অপচয় ক্রমবর্ধমান। বিজ্ঞানীরা যেখানে বলছেন যে বৃষ্টির জলের যথাযথ সংরক্ষণ করলে গৃহস্থালির সত্তর শতাংশ জলের প্রয়োজন মেটানো যায়, সেখানে অবহেলার কারণে বৃষ্টির জলের বিপুল অপচয় হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণে যদি নদী, পুকুর তথা জলাধারের স্তর ক্রমশ নামতে থাকে এবং সেই বিষয়ে নাগরিক সমাজ ও সরকার উভয়েই এখনই যথেষ্ট সচেতন না হয়, তবে আগামী দিনে দৈনন্দিন প্রয়োজনের জলটুকুও অপ্রতুল হয়ে পড়বে। সেই দুর্দিন ঠেকানোর ভাবনা অবিলম্বে শুরু করা জরুরি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement