Cricket

ছেলেখেলা

সেই কারণেই হয়তো, আইপিএল-এর ন্যায় অর্থপেটিকার কিছু অংশ বিসিসিআই বরাদ্দ করিয়াছে দেশের প্রাক্তন বা অভাবী ক্রিকেটারদের দেখাশোনা ও সাহায্যে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৩৭
Share:

সুখ-দুঃখ চক্রবৎ পরিবর্তিত হয়, শাস্ত্রবচন। ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে নজর করিলে অবশ্য মনে হইবে, দুঃখই ঘুরিয়া ফিরিয়া আসে, সুখমুহূর্তগুলি নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী। টোকিয়ো অলিম্পিক্স ও প্যারালিম্পিক্সে ভারতীয় খেলোয়াড়দের এযাবৎ কালে রেকর্ড-সংখ্যক পদকজয়ের পরেও এই কথা বলিতে হইতেছে, কারণ দুর্দান্ত সাফল্যগাথার পার্শ্বেই সংবাদমাধ্যমে স্থান করিয়া লয় বর্তমান বা প্রাক্তন খেলোয়াড়দের চরম দুর্দশায় জীবন কাটাইবার কথা। জাতীয় স্তরে জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে চারটি স্বর্ণপদক জয়ী তরুণ বাঙালি খেলোয়াড়ের পরিযায়ী শ্রমিকবৃত্তি, ২০১১-র বিশেষ অলিম্পিক্সে দুইটি ব্রোঞ্জপদক জয়ী মহিলা খেলোয়াড়ের বা একদা জাতীয় কবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী খেলোয়াড়ের মাঠ-ময়দান হইতে বহু দূরে, ফুচকা বা আনাজ-বিক্রয়ে সংসার নির্বাহ— প্রতিটি সংবাদ অনন্ত বিষাদ লইয়া আসে। মনে রাখা দরকার, যাঁহাকে হকির জাদুকর বলা হয়, যাঁহার জন্মদিন ভারতে জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসাবে উদ্‌যাপিত, সেই ধ্যানচাঁদও শেষ বয়সে চরম দারিদ্রে ভুগিয়াছিলেন। জাতীয় বিস্মৃতি ও অবহেলায় কিংবদন্তি বা এক কালের প্রতিভাদীপ্ত খেলোয়াড়, কাহারও ছাড় নাই।

Advertisement

ব্যতিক্রম ক্রিকেট। তাহা লইয়াই সর্বাধিক মাতামাতি, তাহাতেই বিপুল অর্থ, যশ, সম্মান। এবং সেই কারণেই হয়তো, আইপিএল-এর ন্যায় অর্থপেটিকার কিছু অংশ বিসিসিআই বরাদ্দ করিয়াছে দেশের প্রাক্তন বা অভাবী ক্রিকেটারদের দেখাশোনা ও সাহায্যে। ফুটবলে সেই অর্থ নাই; হকি, কবাডির কথা না উঠাইলেই ভাল। ক্রিকেট বাদে অন্য খেলাগুলির ক্ষেত্রে এবং বিশেষত অ্যাথলেটিক্সে প্রায়শই খবর আসে যে, চোট-আঘাতে, দুর্ঘটনায় বা সরকারি সাহায্যহীনতায় বহু খেলোয়াড় ক্রীড়াক্ষেত্রকে বিদায় জানাইয়াছেন, এখন রাস্তায় খাবার বেচিয়া কোনও মতে জীবন কাটাইতেছেন। তর্কের খাতিরে মানবিকতার বিষয়টি সরাইয়া রাখিলেও, এই অবহেলা কি ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য-সুযোগও নষ্ট করিতেছে না? কিশোর অ্যাথলিট বা তরুণ খেলোয়াড়ের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তাঁহাদের পরিবার যদি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ-আশঙ্কায় সন্তানদের ক্রিকেট মাঠ ভিন্ন অন্যত্র যাইতে না দেয়, অল্পবয়সি প্রতিভাবান খেলোয়াড়টি যদি প্রাক্তন ক্রীড়াবিদদের দুর্দশাচিত্র দেখিয়া হতাশায় অন্য স্রোতে জীবন বহাইয়া দেন, সেই ক্ষতি কি শেষ পর্যন্ত দেশের নহে?

অলিম্পিক্স ও প্যারালিম্পিক্স েদখাইয়াছে, একটু যত্ন লইলে ক্রীড়াক্ষেত্রে কীরূপ সাফল্য আসিতে পারে। ভারতীয় খেলোয়াড়দের সম্ভাবনা লইয়া সংশয় নাই; সংশয় উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ-সুিবধা দিয়া পরিচর্যায়। এই পৃষ্ঠপোষণের দায় কাহার? রাষ্ট্র তথা সরকারের, কারণ ক্রীড়া মন্ত্রকই নীতি, অর্থ হইতে পরিকাঠামো, সব কিছুর নিয়ামক। এই দায় জাতীয় বা রাজ্য স্তরে স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসিত ক্রীড়া সংস্থা বা সংগঠনগুলিরও— নিজ নিজ রাজ্য, শহর, গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্রীড়াপ্রতিভা অন্বেষণ, প্রশিক্ষণ ও লালনের গুরুদায়িত্ব তাহারা এড়াইতে পারে না। আর এই সমগ্র প্রক্রিয়ার সহিত জড়িত ক্রীড়াবিদদের আর্থিক সঙ্গতির প্রশ্নটি। সাময়িক উন্মাদনা নহে, প্রতিভার যোগ্য পুরস্কার, বৃত্তি, চাকুরি দিলে, ক্রীড়া-কালীন উপযুক্ত অর্থ মিলিলে প্রচারমাধ্যমে ক্রীড়াবিদদের করুণ ভবিষ্যচিত্র দেখিতে হইবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement