Indus Water Treaty

জলযুদ্ধ

দিল্লি জানিয়েছে, যত ক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্য এবং অপরিবর্তনীয় ভাবে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে, তত ক্ষণ সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত থাকবে।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:১৬
Share:

সম্প্রতি পহেলগাম সন্ত্রাসের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিন্ধুর জলকে হাতিয়ার করল মোদী সরকার। দিল্লি জানিয়েছে, যত ক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্য এবং অপরিবর্তনীয় ভাবে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে, তত ক্ষণ সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত থাকবে। দিল্লির এমন সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হবে বলে পাকিস্তান পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেও আপাতত এই পদক্ষেপেই অনড় থাকছে মোদী সরকার। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় টানা ন’বছরের আলোচনার পরে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষর হওয়া ভারত-পাক সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি উপরে পড়ল কূটযুদ্ধের কোপ।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ওই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু এবং তার দুই উপনদী, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকবে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তিন উপনদী— বিপাশা, শতদ্রু এবং ইরাবতীর জল। লক্ষণীয়, আইডব্লিউটি-র অন্তর্গত নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত না করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের অনুমতি ছিল ভারতের কাছে। যদিও জলাধার বাঁধ তৈরি করা ছিল নিষিদ্ধ। এই চুক্তি নিয়ে দুই দেশের সাম্প্রতিক বিবাদের মূলে রয়েছে দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: ২০১৮ সাল থেকে চালু হওয়া কিসানগঙ্গা আর নির্মীয়মাণ রতলে। দু’টিই জম্মু ও কাশ্মীরে বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার উপনদীর উপর অবস্থিত। চুক্তি স্থগিত হওয়ার ফলে ভারতের তার জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাড়তি জল সঞ্চয়ের জন্য এই প্রকল্পগুলির আবার নতুন নকশা তৈরি করা যেতে পারে, যার তীব্র বিরোধিতা পাকিস্তান অতীতে করে এসেছে। পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলির ক্ষেত্রেও এই একই পরিকল্পনা করতে পারে ভারত। সুযোগ রয়েছে অন্যান্য পদক্ষেপেরও। যেমন, ভারত এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলপ্রবাহের তথ্য আদানপ্রদান বন্ধ করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্ষার মরসুমে উচ্চ অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য ভাগাভাগির কোনও দায় নেবে না ভারত। চুক্তির শর্ত হিসেবে ভারতীয় বাঁধ এবং প্রকল্পের স্থানে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনও এখন স্থগিত করা হতে পারে।

প্রশ্ন হল, ভারত কি সত্যিই সিন্ধু অববাহিকার জল আটকে রাখতে বা ভিন্ন পথে ঘুরিয়ে দিতে পারে, যার ফলে পাকিস্তান তার জীবনরেখা থেকে বঞ্চিত হবে? সংক্ষিপ্ত উত্তর: না। উচ্চ অববাহিকা অঞ্চলে ভারত কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বাঁধ এ-যাবৎ নির্মাণ করে থাকলেও, এদের কোনওটিই ওই বিপুল জল ধারণের অধিকারী নয়। বস্তুত পাকিস্তানের জলভাগ সত্যিই ব্যাহত করতে হলে প্রচুর সময় নিয়ে ব্যাপক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রয়োজন। অন্য দিকে, বাংলাদেশ, নেপাল এবং চিনের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি ভারতের এ-হেন পদক্ষেপকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখতে পারে। সে ক্ষেত্রে পূর্ব দিকে ভারত সীমান্তের কাছে ব্রহ্মপুত্রের উপরে চিনের বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান ও যুক্তিগুলিও অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়বে, এবং কূটনৈতিক ক্ষতির দিকে এগোবে। তাই সিন্ধু চুক্তির স্থগিতাদেশকে পড়শি রাষ্ট্রটির উপরে মানসিক চাপ হিসেবে দেখাই ভাল। কিন্তু পাকিস্তানকে অসুবিধায় ফেলে কূটনৈতিক দর-কষাকষি করতে হলে ভারতকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ করতে হবে, কেবল সিন্ধুজলে কুলাবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন