Ritwik Ghatak

‘সেই ট্র্যাডিশন’?

ঋত্বিক ঘটকের ছবি নাকতলার স্কুলে দেখানো হল না, পরে স্থানীয় একটি ক্লাবে প্রদর্শনের অনুরোধও বিফলে গিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫৫
Share:

ঝামেলা এড়াতে কে না চায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষকও চাইবেন— বিশেষত যেখানে ‘কিছু লোক’ এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছে, স্কুলে ঋত্বিক ঘটকের আমার লেনিন ও কোমল গান্ধার ছবি দু’টি দেখানো হলে স্কুল ভাঙচুর হবে। সেই কারণেই সম্ভবত, তিনি উদ্যোক্তা সংগঠনের সদস্যদের জানিয়ে দিলেন, স্কুলে ছবি দেখানো চলবে না। অবশ্য এও বলেছেন যে, গোড়ায় তিনি বুঝতে পারেননি স্কুল প্রাঙ্গণে ছবি দেখানো হবে, ভেবেছিলেন সিনেমা নিয়ে আলোচনা হবে তাই সম্মতি দিয়েছিলেন। অতঃপর ঋত্বিক ঘটকের ছবি নাকতলার স্কুলে দেখানো হল না, পরে স্থানীয় একটি ক্লাবে প্রদর্শনের অনুরোধও বিফলে গিয়েছে। বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকারের জন্মশতবর্ষে, তাঁর নিজের শহরে এ ঘটনা ঘটল— অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের।

Advertisement

তবু এই ঘটনাকে একটি বিক্ষিপ্ত উদাহরণ বলে ভাবাই সঙ্গত। ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘এই জমানায়’ এই শহরে বা রাজ্যে আর দেখানো যাবে না, এমন রাজনৈতিক উপসংহার টানা বাড়াবাড়ি। এ ক্ষেত্রে এ-হেন অনুমান অসঙ্গত হবে না যে, বাইরের একটি অনুষ্ঠানের সূত্রে স্কুলের শান্তি-স্থিতি বিঘ্নিত হোক, স্কুল কর্তৃপক্ষ তা চাননি; সমস্যা এ ক্ষেত্রে ঋত্বিকের ছবি নয়, স্কুলের বিপদাশঙ্কা। ঘটনাটি খবরে আসার পরে বিশেষত সমাজমাধ্যমে খুব হইচই পড়েছে এই মর্মে যে, এ হল আগাগোড়া রাজনৈতিক দমনপীড়ন— ভোটের আগে-পরে পাড়ায় শাসক দলের নিচুতলার কর্মী ও ক্যাডার-বাহিনী যে ভাবে অন্য দলের কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখায়, এও সেই রকম, তা না হলে উগ্র মারমুখীরা বিশেষত আমার লেনিন ছবিটি দেখানো নিয়ে আপত্তি তুলবে কেন। লেনিন নিয়ে কোনও ছবি দেখানো যাবে না, এই ফতোয়ার মূলে আছে সেই অজ্ঞানতা ও অশিক্ষা যা রাজনৈতিক দল-সরকার-জমানা এমনকি রাজ্য রাষ্ট্র নির্বিশেষেও দেখা গিয়েছে, নানা রূপে। বই বা সিনেমার নামে শব্দবিশেষ পছন্দ না হলেই বই পোড়ানো, বইমেলার স্টল গুঁড়ানো, সিনেমাহল ভাঙচুরের মতো কাজ করে যারা, তারা যে বইটি কদাপি পড়েনি, সিনেমাটিও দেখেনি, তা পরীক্ষিত সত্য। নাকতলার স্কুলেও আপত্তি তোলা লোকেরা অন্য দর্শকের সঙ্গে বসে আমার লেনিন ছবিটি দেখলে নিশ্চয়ই বুঝতেন। হয়তো লজ্জাও পেতেন।

তবে স্রেফ বিক্ষিপ্ত বা দুর্ভাগ্যজনক বলে নাকতলার ঘটনাটিকে সরিয়ে রাখা চলে না। দেখা দরকার— এ ব্যাপারে প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া কী, এবং স্কুলে এসে কিছু বহিরাগত মানুষের ভয় দেখানোর ঘটনায় তারা কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে চলেছে কি না। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় প্রশাসন বা সরকারের তরফে নীরবতাই সার; ওই বহিরাগতদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের দূরস্থান, খোঁজখবর পর্যন্ত করেছে কি না জানা নেই। হুমকি-প্রথা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে অনেক কথা হচ্ছে, তার বাড়বাড়ন্তে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত চিন্তিত, এমনও শোনা যায়। স্কুলে এসে, প্রধান শিক্ষককে হুমকি দিয়ে যারা সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করাল, তাদের নিয়ে তাঁর প্রশাসনের কী ভাবনা তা জানতে ইচ্ছে হয়। যদি দেখা যায় প্রশাসন নিশ্চিন্ত ও নির্লিপ্ত, ওই ‘বহিরাগত’দেরও কোনও শাস্তি হয়নি, তখন বুঝতে হবে— এই শহরে তথা রাজ্যে উপরমহলের কল্যাণহস্তপুষ্ট অপরাধীদের কুকাজ করে পার পেয়ে যাওয়ার দীর্ঘ তালিকায় আরও একটি দৃষ্টান্ত যোগ হল। বুঝতে হবে, যা হল তা আগাগোড়া রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement