Surrogacy

শরীরের অধিকার

কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার উন্নতি শুধুমাত্র সন্তানহীন দম্পতিদেরই নয়, লিঙ্গ-নির্বিশেষে সকলের কাছেই সন্তানলাভের সুযোগ এনে দিয়েছে। সারোগেসি এ ক্ষেত্রে অন্যতম জনপ্রিয় এক মাধ্যম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৫:৪৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

মাতৃত্ব ‘স্বাভাবিক’ উপায়েই আসুক, অথবা সারোগেসি-র মাধ্যমে, উপযুক্ত সুরক্ষার প্রয়োজন উভয় ক্ষেত্রে। কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই ‘মা’-কে একই রকম শারীরিক পরিবর্তনগুলির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। অথচ, সারোগেসির প্রতি একটি সামাজিক অবজ্ঞা, অসূয়া এ দেশে প্রবল— যেন সেই প্রক্রিয়াটি প্রকৃত মাতৃত্বের নয়। সেই অবহেলা শুধু সামাজিক নয়, প্রাতিষ্ঠানিকও বটে— এত দিন সারোগেট মা-রা বিমার আওতার বাইরে থাকতেন। এই বৈষম্য কিছুটা দূর করতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে ভারতের বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএআই। যিনি গর্ভ ভাড়া দেবেন এবং যিনি ডিম্বাণু দান করবেন, উভয়কেই মূল বিমার মধ্যে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে তারা। এ-হেন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সারোগেট মায়ের সন্তান প্রসব সংক্রান্ত খরচ মেটাবে বিমা সংস্থা। এই উদ্যোগ স্বাগত। এতে যে শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ায় সন্তানধারণে ইচ্ছুক দম্পতির উপর আর্থিক চাপ কিছুটা লাঘব হল, তা নয়, সারোগেট মা-র সার্বিক ভাবে ভাল থাকার অধিকারটিও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল।

Advertisement

সুরক্ষাকবচের এ-হেন উদ্যোগ বর্তমান সময়ের সাপেক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার উন্নতি শুধুমাত্র সন্তানহীন দম্পতিদেরই নয়, লিঙ্গ-নির্বিশেষে সকলের কাছেই সন্তানলাভের সুযোগ এনে দিয়েছে। সারোগেসি এ ক্ষেত্রে অন্যতম জনপ্রিয় এক মাধ্যম। ভারতে ২০০২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে গর্ভ ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং বহু আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার এর সুযোগ গ্রহণ করে জীবনধারণের স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নেয়। কিন্তু, এর অন্ধকার দিকও ছিল— স্ত্রীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সন্তানধারণে বাধ্য করা, দালালচক্রের প্রতারণা, আধা-অবৈধ চিকিৎসা-ব্যবসায়ীদের শোষণ তার কয়েকটি মাত্র। এর থেকে সারোগেট মায়েদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য নিশ্চিত ভাবেই আইনি রক্ষাকবচের প্রয়োজন ছিল। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার বিল পেশ করল বটে, কিন্তু তাতে পরিবারতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কঠোরতর হল মাত্র— বলা হল, গর্ভ ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকীকরণ চলবে না। শুধুমাত্র নিকটাত্মীয়রাই এতে যোগ দিতে পারবেন, যেখানে চিকিৎসা-ব্যয় ছাড়া অন্য কোনও অর্থের লেনদেন থাকবে না। সারোগেসি অ্যাক্ট, ২০২১ সালের মূল কথাও এটাই।

আইনের সাহায্যে সারোগেসি-র বিষয়টিকে পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার এই প্রচেষ্টা মেয়েদের শরীরের উপরে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিরোধী। এই আইনের প্রধান সীমাবদ্ধতাই হল এই যে, প্রজননের ক্ষেত্রে মেয়েদের নিজস্ব ইচ্ছার উপরে স্থান দেওয়া হল পরিবারের প্রয়োজনকে, অর্থাৎ ইচ্ছা থাকলেও তিনি পরিবারের বাইরে কারও জন্য গর্ভ দান করতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, এই মডেল-এ আশা করা হল, অন্যের প্রয়োজনে এক জন নারী মাতৃত্বকালীন শারীরিক এবং মানসিক চাপ নেবেন, অথচ এর জন্য আর্থিক সুবিধা পাবেন না। অর্থাৎ, নারীর স্বেচ্ছাশ্রমের সেই পুরনো ধারণাটিই প্রতিষ্ঠিত হল, যাতে তিনি তাঁর কাজের জন্য পারিশ্রমিক দাবি করতে পারবেন না। সারোগেসিকে মাতৃত্বের মূল স্রোতে শামিল করতে গেলে সর্বাগ্রে এই আইনটির সংশোধন জরুরি। গর্ভদাত্রীর আর্থিক সুরক্ষার পাশাপাশি তাঁর স্বাধীন ইচ্ছাটিকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement