Bihar Assembly Election 2020

পরাজিত

বিহারের এনডিএ জোটে তিনি এখন ছোট তরফের শরিক— এই প্রথম বিজেপি আসনসংখ্যায় জেডিইউ-কে টপকাইয়া গেল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০৩:১৫
Share:

নীতীশ কুমার।

তিনি বিজয়ী। অথচ, সেই জয়ের সর্বাঙ্গে যেন পরাজয়ের গ্লানি। চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় ফিরিয়া আসা নীতীশ কুমার হয়তো ২০১০ সালের নীতীশকে দেখিয়া ভাবিতেছেন, তে হি নো দিবসাঃ গতাঃ। বিহারের এনডিএ জোটে তিনি এখন ছোট তরফের শরিক— এই প্রথম বিজেপি আসনসংখ্যায় জেডিইউ-কে টপকাইয়া গেল। এবং, যে আধিপত্য অর্জন করিল, তাহাতে অনুমান করা চলে, আগামী পাঁচ বৎসর বিহার শাসিত হইবে দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের সদর দফতর হইতেই। নির্বাচনে জেডিইউ-এর এমন ফল হইল কেন, সে বিষয়ে কেবলমাত্র অনুমানই চলিতে পারে। চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি যে সাড়ে পাঁচ শতাংশ ভোট পাইয়াছে, দলটি এনডিএ জোটে থাকিলে সেই ভোট জেডিইউ-এর ঝুলিতে আসিত কি না, তাহা যেমন প্রশ্ন, তেমনই প্রশ্ন উঠিতেছে, যে আসনগুলিতে এনডিএ-র জোটপ্রার্থী হিসাবে জেডিইউ লড়িয়াছিল, সেখানে তাহাদের দিকে বিজেপির ভোট যথেষ্ট পরিমাণে আসিয়াছিল কি? ২০১৫ সালে মহাগঠবন্ধনের শরিক হিসাবে লড়িয়া মুখ্যমন্ত্রী হইবার পরও নীতীশ যে ভাবে সরকার ভাঙিয়া বিজেপির সমর্থন লইয়া ফের সরকার গড়িলেন, তাহাও সম্ভবত তাঁহার ভাবমূর্তির ক্ষতি করিয়াছে। ‘সুশাসন-বাবু’ হইতে তিনি একাংশের ভোটারের নিকট ‘রাজনৈতিক সুবিধাবাদী’, ‘ক্ষমতালোভী’ ইত্যাদি পরিচয়ে পরিচিত হইয়াছেন। তাহাও এই নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলিল কি না, সেই প্রশ্নটিকেও উড়াইয়া দেওয়া চলিবে না। রাজনীতি অতি বিষম বস্তু।

Advertisement

কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, নীতীশের এই ‘বিপর্যয়’-এর সর্বাপেক্ষা বড় কারণ কি ইহাই নহে যে, তিনি একাদিক্রমে পনেরো বৎসর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ফলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট তাঁহার বিপক্ষে যাওয়াই স্বাভাবিক? কথাটি ভুল নহে। বস্তুত, এই নির্বাচনে পনেরো বৎসরের যাবতীয় ক্ষোভকে নীতীশ একাই ধারণ করিলেন। মহাগঠবন্ধনের দেড় বৎসর বাদে বাকি সময়টা যে বিজেপিও এই সরকারের শরিক ছিল, এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ যে তাহাদের গায়েও লাগিবার কথা ছিল, বিহারে তাহা কার্যত বোঝা গেল না। তাহা কতখানি নীতীশের ব্যর্থতা, কতখানি বিজেপির রণকৌশলের সাফল্য, সেই আলোচনা অন্যত্র। কিন্তু, স্বয়ং নীতীশ যে ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের গুণগান করিলেন, তাঁহার ভরসাতেই ভোট প্রার্থনা করিলেন, তাহাতে স্পষ্ট, নীতীশ নিজের উপর বিশ্বাস হারাইয়াছেন। তাহাতে জোটের ক্ষতি হইয়াছে কি না বলা মুশকিল— কিন্তু, নীতীশ কুমার লাভবান হন নাই। গত পনেরো বৎসরে বিহারে এই প্রথম নির্বাচন, যাহাতে নীতীশ কুমারের প্রতি বিহারের মানুষের অনাস্থা এতখানি প্রকট হইল।

তাঁহার প্রতি রাজ্যের যে আস্থা ছিল, তাহার দুইটি অভিমুখ— এক, সুশাসন; দুই, উন্নয়ন। লালু প্রসাদ-রাবড়ী দেবীর আমলে বিহার যে আইনহীনতায় আক্রান্ত হইয়াছিল, নীতীশ রাজ্যকে সেই অন্ধকার হইতে উদ্ধার করিয়াছিলেন। এবং, তাঁহার সড়ক-বিজলি-সাইকেলপন্থী উন্নয়নও ছিল বিহারে এক অনাস্বাদিত অভিজ্ঞতা। কিন্তু, যাহা এক বার পাওয়া হইয়া যায়, তাহার আর নূতন আকর্ষণ থাকে না। কেহ বলিতেই পারেন, এই উন্নয়নের স্বাদ বিহারের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বাড়াইয়া দিয়াছে— তাঁহারা আর এই প্রাথমিক উন্নয়নে সন্তুষ্ট নহেন। গত পাঁচ বৎসরে নীতীশ বিহারকে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে লইয়া যাইতে পারেন নাই। তিনি যে প্রত্যাশার জন্ম দিয়াছেন, তাহা পূরণ হয় নাই— বিহারের উন্নয়ন এখনও সাইকেল-সড়কেই আটকাইয়া আছে। সেই কারণেই কি প্রধানমন্ত্রী মোদীর উন্নয়ন-ক্ষমতার উপর ভরসা করিবার কথা বলিলেন তিনি— যে ‘উন্নয়ন’ ভারত এখনও প্রত্যক্ষ করে নাই, কিন্তু এখনও যে স্বপ্নের ঔজ্জ্বল্য ফিকা হইয়া আসে নাই?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement