শীর্ষে রাজ্য, ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল

রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে কিছু দুষ্কৃতী বার বার বিপন্ন করছে চিকিৎসকদের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

দারিদ্র কমল পশ্চিমবঙ্গে

Advertisement

‘মহাত্মা গাঁধী গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা আইন’-এ কাজের প্রকল্পে জাতীয় পুরস্কার মিলল রাজ্যের। এই নিয়ে চার বার। যার অর্থ, এ রাজ্যের দরিদ্রের জীবিকা গড়ে দিতে অনেকটাই সফল এই প্রকল্প। তার মাপ কেবল মজুরির অঙ্কে হয় না। এ রাজ্যে এখন কাঁচা রাস্তার চাইতে পাকা রাস্তা বেশি। অন্তত কুড়ি হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ পথ তৈরি হয়েছে একশো দিনের প্রকল্পে। প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমের জেলাগুলিতে জল সংরক্ষণের উদ্যোগও বেশ কিছু এলাকার চেহারা বদলে দিয়েছে। পরীক্ষামূলক কাজও হচ্ছে। বাংলার রুখুশুখু জেলায় দেখা মিলছে অলিভ বাগিচা, আঙুর খেতের। এবং, বহু রাজ্যে যখন দারিদ্র বেড়েছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে তা কমেছে ছয় শতাংশ-বিন্দু। রাজ্যে বড় মাপের শিল্পায়ন তেমন হয়নি, তাই উন্নয়নের যষ্টি সরকারি প্রকল্প।

Advertisement

প্রাপ্য চাইতেও আন্দোলন

রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে কিছু দুষ্কৃতী বার বার বিপন্ন করছে চিকিৎসকদের। সমস্যা নতুন নয়, কিন্তু এ বছর তার প্রতিবাদ অতীতের সব আন্দোলনকে ছাড়িয়ে গেল। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ধর্মঘটরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াল অপর সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, দলে দলে সিনিয়র ডাক্তারেরা পদত্যাগপত্র জমা দিলেন, চিকিৎসকদের বেনজির মিছিল দেখল কলকাতা। গোড়ায় রক্তচক্ষু দেখালেও, সাত দিন ধর্মঘটের পরে চিকিৎসকদের দাবি শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে যদিও ফের অসহিষ্ণুতার স্বাক্ষর রাখলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এসএসসি পরীক্ষার মেধা তালিকায় নাম ওঠা সত্ত্বেও নিয়োগ না পাওয়ায় মার্চ মাসে টানা ২৯ দিন অনশন করলেন বেশ কিছু কর্মপ্রার্থী। জুলাই মাসে বেতনবৃদ্ধির দাবিতে চোদ্দো দিন অনশন করেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বেতন কাঠামোর দাবিতে দীর্ঘ অনশন শুরু করেন পার্শ্ব শিক্ষকেরা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে প্রাপ্য নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য কেন আন্দোলনে নামতে হচ্ছে, তার উত্তর মিলল না।

নোবেলমঞ্চে বৃহৎ বাঙালি

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন কলকাতার ছেলে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবিতে)। সেই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এস্থার দুফলো, ও তাঁদের সহকর্মী মাইকেল ক্রেমার। স্বভাবতই আবেগে ভাসল পশ্চিমবঙ্গ। দারিদ্র দূর করার পথ দেখিয়েছেন তাঁরা, সে কথা অলিগলিতে জানাজানি হয়ে গেল। কাগজের পাতা থেকে পাড়ার আড্ডা, সর্বত্র ঝড় উঠল ‘র‌্যান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোল্ড ট্রায়াল’ পদ্ধতির দোষগুণ নিয়ে। বিতর্কের ধুলো থিতিয়ে গেল উচ্ছ্বাস-বর্ষণে— ধুতি-কুর্তা পরে স্টকহলমের নোবেল পুরস্কার মঞ্চে উঠলেন অভিজিৎ, শাড়ি পরে ফরাসি মেয়ে এস্থার। এমন ছোটখাটো আত্মতৃপ্তিও তুচ্ছ নয়, যদি তা একটি জাতির হৃদয়কে স্পন্দিত, সত্তাকে জাগ্রত করে। উনিশ শতকে বঙ্গীয় নবজাগরণের সূচনা থেকেই বাঙালি নিজেকে বিশ্বনাগরিক বলে চিনেছে। বিজ্ঞান, সাহিত্য, সিনেমা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বঙ্গসন্তানেরা জগৎ-দরবারে সেরার আসন পেয়েছেন। অমর্ত্য সেনের অবদান অর্থনীতিতে নোবেল লাভের দুই দশক পরে অভিজিৎ সেই স্বীকৃতি পেলেন। এ রাজ্যের ভাগ্যাকাশে এখন একই সঙ্গে চন্দ্র আর সূর্য। এমন কিন্তু এই প্রথম বার।

রাজভবন বনাম নবান্ন

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়ে এলেন জগদীপ ধনখড় (ছবিতে)। এবং, জড়িয়ে পড়লেন বিতর্কে। হরেক প্রশ্নে জানালেন, তিনি অপমানিত বোধ করছেন। রেড রোডে কার্নিভ্যাল থেকে বিধানসভা বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অনাদর’, তিনি ক্ষুব্ধ অনেক কিছুতেই। রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চরমে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হল সেই কুনাট্যের নবতম পর্ব। অভিযোগ উঠছে, রাজ্যপাল সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বিজেপির দলীয় স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট। যাদবপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে তিনি যে ভঙ্গিতে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন, অভিযোগের সূত্রপাত সেখান থেকেই। রাজ্যপাল দলীয় স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করুন বা না-ই করুন, পশ্চিমবঙ্গে এ বছর বিজেপি অতিসক্রিয় ভূমিকায়। লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনে জয়ী হল, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’-এর প্রশ্নে রাজনীতির সুরও চড়াল। তবে, বছরশেষে তিন উপনির্বাচনেই দলীয় প্রার্থীর পরাজয় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এনআরসি-নীতি ও রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে নিঃসন্দেহে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement