পর্বতশৃঙ্গে বাঙালির বিজয়কেতন বাঙালি মহিলাদেরও দুরন্ত অভিযানের সাক্ষী। ফাইল চিত্র।
গত ২৮ জানুয়ারির শতবার্ষিকী ক্রোড়পত্রে দেবরাজ দত্তের ‘পর্বতশৃঙ্গে বাঙালির বিজয় কেতন’ লেখাটিতে কোনও বাঙালি মহিলা পর্বতারোহীর নাম পেলাম না। বহু প্রতিকূলতার মধ্যে বাঙালি মেয়েদের ১৯৬৭ সালের ২৮ অক্টোবর রন্টি পর্বতশৃঙ্গ জয় দিয়ে পর্বতারোহণের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। আট জন বাঙালি মেয়ে, দীপালি সিংহ (সামনের সারিতে মাঝখানে)-এর নেতৃত্বে গিয়েছিলেন রন্টি পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে। পূর্ব ভারতের প্রথম অসামরিক সেই মহিলা দলে ছিলেন স্বপ্না মিত্র, লক্ষ্মী পাল, শীলা ঘোষ, সুজয়া গুহ, স্বপ্না নন্দী, ইন্দিরা বিশ্বাস ও সুদীপ্তা সেনগুপ্ত (প্রথম বাঙালি মহিলা যিনি আন্টার্কটিকায় পা রেখেছিলেন)। দলটিকে সাহায্য করেছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকা-র সম্পাদক অশোক কুমার সরকার। সে বছরে দীপালি সিংহ তৈরি করেছিলেন ‘পথিকৃৎ মহিলা পর্বতারোহণ সংস্থা’।
এই অভিযানের তিন বছর পর হিমালয়ের নামগোত্রহীন এক শিখরে (যার নাম তাঁরা রাখেন ‘ললনা’) মহিলারা অভিযান চালান। সুজয়া গুহের নেতৃত্বে দলে ছিলেন সুদীপ্তা সেনগুপ্ত, কমলা সাহা, শেফালি চক্রবর্তী, চিকিৎসক পূর্ণিমা শর্মা ও নীলু ঘোষ। সেই সফল অভিযান শেষে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ হারান সুজয়া গুহ ও কমলা সাহা।
এ ছাড়া ক্যাপ্টেন শিপ্রা মজুমদার (সামরিক ক্ষেত্রে) ২০০৫ সালের ২ জুন প্রথম বাঙালি মহিলা হিসাবে এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। অসামরিক ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের ১৮ মে ছন্দা গায়েন মাউন্ট এভারেস্ট ও মাউন্ট লোৎসে জয় করে ইতিহাস গড়েন। বাঙালি হিসাবে বাংলাদেশের নিশাত মজুমদারের ২০১২ সালে এভারেস্ট জয় কম কৃতিত্বের নয়। এ ছাড়া টুসি দাস এভারেস্ট বিজয়িনী, অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরি শৃঙ্গ জয়ী পিয়ালী বসাকের সাফল্যও বাঙালিকে গৌরবান্বিত করেছে।
পর্বতশৃঙ্গে বাঙালির বিজয়কেতন বাঙালি মহিলাদেরও দুরন্ত অভিযানের সাক্ষী। এই ঐতিহাসিক সত্যকে প্রবন্ধে স্থান না দিলে সেটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
শতাব্দী মজুমদার
আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান
ইডেনের স্মৃতি
খেলা নিয়ে শতবার্ষিকী সঙ্কলনের লেখাগুলি পড়ে স্মৃতিমেদুরতায় আপ্লুত হলাম। ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেনে ফুটবল সম্রাট পেলের খেলা-সহ অনেক উল্লেখযোগ্য ফুটবল ম্যাচ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ১৯৮২ সালে এই ইডেন গার্ডেন্সেই প্রথম নেহরু গোল্ড কাপের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৮৪ সালে বেশ কয়েক জন বিশ্বকাপার সমৃদ্ধ আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে ভারতীয় দলের খেলাটি আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ইডেনে নেহরু কাপের খেলাটিতে অসাধারণ লড়াই করেও ভারতীয় দল শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে যায়। ১৯৭০ সালে আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল ইরানের শক্তিশালী ক্লাবকে হারিয়ে বিজয়ী হয়। খেলা শেষ হওয়ার প্রায় অন্তিম মুহূর্তে রাইট উইঙ্গার স্বপন সেনগুপ্তের পাস থেকে গোল করেন পরিমল দে। বদলি খেলোয়াড় হিসাবে তিনি মাঠে নেমেছিলেন খেলা শেষ হওয়ার একটু আগেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোনও ভারতীয় দলের বিদেশি দলকে হারিয়ে দেশের মাটিতে ট্রফি জয় সেই প্রথম।
মানস কুমার সেনগুপ্ত
কলকাতা-৭৪
প্রাচীন ক্লাব
‘বাঙালির খেলা’ বিষয়ক বিশেষ ক্রোড়পত্রটি পড়ার পরে এই প্রসঙ্গে যৎকিঞ্চিৎ সংযোজন করতে চাই। ‘এরিয়ান ক্লাব’ ভারতের প্রাচীন ক্রীড়াজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। এই ফুটবল ক্লাব অনেক দক্ষ খেলোয়াড়ের সূতিকাগার। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা উমেশচন্দ্র মজুমদারের (দুখীরাম মজুমদার নামেই বেশি পরিচিত) হাতেই ওই সব খেলোয়াড়ের হাতেখড়ি। তাঁদের মধ্যে শিবদাস ভাদুড়ী, সূর্য চক্রবর্তী, ছানা গুহ, টগর মুখোপাধ্যায়, পল্টু গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইয়ের ছেলে ছোনে মজুমদার অন্যতম। কেবলমাত্র ফুটবলই নয়, স্যর দুখীরাম প্রথম শ্রেণির উন্নত মানের ক্রিকেট খেলোয়াড়ও ছিলেন। তাঁর হাতে গড়া বিধু মুখোপাধ্যায়, সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায়, কমল ভট্টাচার্য বিশেষ ভাবে পরিচিত। আন্তর্জেলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় পুরস্কার রূপে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ‘মজুমদার ট্রফি’ প্রদান করা হয়ে থাকে।
দিলীপ চট্টোপাধ্যায়
সল্ট লেক, কলকাতা
বুলডোজ়ার
কলকাতা ময়দানের ‘বুলডোজ়ার’ সুভাষ ভৌমিক চলে গেলেন। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। কিন্তু আমাদের মতো ফুটবল অনুরাগীদের কাছে প্রিয় ভোম্বলের চলে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ১৯৬৮ সালে ১৮ বছর বয়সে কলকাতার ছোট দল রাজস্থানে সুভাষ ভৌমিকের খেলোয়াড় জীবনের সূচনা। ৩০-এর আগেই অবসর। কিন্তু মাত্র ১১ বছরের খেলোয়াড় জীবন ছিল ভীষণ বর্ণময়। রাইট উইঙ্গার পজ়িশনের খেলোয়াড়, ছিল প্রচণ্ড গতি আর দু’পায়ের তীব্র ও নির্ভুল নিশানায় শট নেওয়ার দক্ষতা। ডিফেন্ডারদের কাছে তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তাঁর স্মৃতিচারণে সুব্রত ভট্টাচার্য ‘আগ্রাসন শিখিয়েছিল ভোম্বলদা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (২৩-১) স্বীকার করেছেন, “এই কারণেই ভোম্বলদা বিপক্ষ দলে থাকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। শারীরিক ভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী ছিল। কাঁধে করে বিপক্ষের দু’-তিন জনকে টেনে নিয়ে চলে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল।” ক্লাব, বাংলা এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসাবে তাঁর সাফল্য ঈর্ষণীয়। এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য সুভাষ বিদেশের মাটিতে হ্যাটট্রিকও করেছিলেন। বাংলাকে যেমন অসংখ্য বার সন্তোষ ট্রফি এনে দিয়েছেন, তেমনই দুই বড় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে ভারতের সব উল্লেখযোগ্য টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। মনে পড়ে, ১৯৭৫ সালের আইএফএ শিল্ড ফাইনালের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচটির কথা। ইস্টবেঙ্গল ৫-০ গোলে মোহনবাগানকে দুরমুশ করেছিল। সে দিন যেন ফুটবল দেবতা সুভাষের উপর ভর করেছিলেন। একাই বিপক্ষের ডিফেন্সকে যে ভাবে চুরমার করেছিলেন, তার তুলনা খুব কমই পাওয়া যায়। গুরু মানতেন শ্রদ্ধেয় প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে পিকে-কে।
গুরুর মতোই কোচিং জীবনেও তিনি সফল। বিদেশের মাটিতে ইস্টবেঙ্গলকে আসিয়ান জয়ী করেছিলেন। জাতীয় লিগ-সহ দেশের প্রথম সারির সব টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ ছিলেন। আদর্শ কোচের মতোই ফুটবলারদের মনস্তত্ত্ব বুঝতেন। তাই খেলোয়াড়দের থেকে সেরা পারফরম্যান্স বার করে আনতে পারতেন। অথচ ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কারের সম্মান থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। তা সত্ত্বেও দেশের খেলোয়াড় থেকে ফুটবল অনুরাগীদের হৃদয়ে সুভাষ ভৌমিকের মর্যাদার আসন চিরস্থায়ী থাকবে।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
বদল আসুক
গত কয়েক বছর যাবৎ দেখা যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল ফুটবল দলটি কর্তৃপক্ষ এবং বিনিয়োগকারী সংস্থার মধ্যে বিরোধের শিকার। তার প্রভাব পড়ছে দলটির খেলা এবং খেলোয়াড় নির্বাচনের উপর। গত ২-৩ বছর ধরে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ-এ ইস্টবেঙ্গলের ফলাফল শোচনীয়। তাই এই দলের সমর্থক হিসাবে একান্ত অনুরোধ ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ যেন যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান বিনিয়োগকারীকে বাদ দিয়ে এমন এক বিনিয়োগকারী নিয়োগ করেন, যাঁদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ আছে।
এ ছাড়াও অনুরোধ, বর্তমান খেলোয়াড়দের অধিকাংশকে বাদ দিয়ে বেশ কিছু দক্ষ খেলোয়াড়কে যেন দল গঠনের সময় নেওয়া হয়। ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্ত সমর্থকের তরফে একটাই আবেদন যে, তাঁরা যেন আমাদের আবেগ নিয়ে আর ছেলেখেলা না করেন।
সোহম রায়
কলকাতা-৩৬