উ চেন-শুন নোবেল পুরস্কার না পাওয়ার পিছনে লিঙ্গবৈষম্যের প্রচলিত ও জনপ্রিয় তত্ত্বই উল্লেখ করেছেন শিশির রায় (রবিবাসরীয়, ২৭-৫)। প্রকৃত তথ্যের অতিসংক্ষিপ্তসার এই রকম— ১৯৫০-এর দশক থেকেই— টাউ ও থিটা— দুটো মেসন কণার আচরণবিধি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয় বিজ্ঞান-মহলে। দুই চৈনিক-আমেরিকান পদার্থবিদ, সাং-ডাও লি এবং চেন-নিং ইয়াং সর্বপ্রথম জোরের সঙ্গে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, এই কণা দুটো ‘উইক ইন্টারঅ্যাকশন’-এ ‘প্যারিটি’ নিয়ম মেনে চলে না। কিন্তু বিষয়টা তখনও পরীক্ষিত ছিল না। ১৯৫৬-র বসন্তকালে লি, উ-এর সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চান। প্রায় পরম-শূন্য তাপমাত্রায়, কোবাল্ট-৬০ বিটা নিঃসরণ পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে বলে মনস্থির করলেন তাঁরা। উ চেন-শুন বুঝলেন এই পরীক্ষার জন্য আরও কিছু বিশেষজ্ঞের সাহায্য দরকার তাঁর। সেপ্টেম্বর ১৯৫৬-য় তিনি দেখা করলেন ওয়াশিংটন শহরের ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যান্ডার্ডস’ (এনবিএস)-এর ‘ক্রায়োজেনিকস’ বিশেষজ্ঞ আর্নেস্ট অ্যাম্বলারের সঙ্গে। উ-এর সঙ্গে পরীক্ষায় রাজি হলেন অ্যাম্বলার। এই পরীক্ষায় আরও সহযোগিতার জন্য, ওই সংস্থারই ক্রায়োজেনিকস বিশেষজ্ঞ রাল্ফ পি. হাডসন এবং বিকিরণ বিশেষজ্ঞ রেমন্ড ওয়েবস্টার হেওয়ার্ড ও ডালে ডি. হপিস্কে সঙ্গী করলেন তাঁরা। অক্টোবর ১৯৫৬, উ-এর নেতৃত্বে চার বিশেষজ্ঞের টিম ‘প্যারিটি’ বিষয়ে তাঁদের পরীক্ষা শুরু করেন। এ দিকে ‘আমেরিকান ফিজ়িকাল সোসাইটি’-(এপিএস)-এর মুখপত্র ‘ফিজ়িকাল রিভিউ’-এর পয়লা অক্টোবর ১৯৫৬ সংখ্যায়, সাং-ডাও লি এবং চেন-নিং ইয়াং, ‘প্যারিটি’ বিষয়ে তাঁদের বিখ্যাত নিবন্ধ ‘কোয়েশ্চেন অব প্যারিটি কনজ়ার্ভেশন ইন উইক ইন্টারঅ্যাকশনস’ প্রকাশ করলেন। যদিও তাঁদের বক্তব্য তখনও পরীক্ষিত ছিল না। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৫৬, অ্যাম্বলার ও সহযোগীরা ‘প্যারিটি’ বিষয়ে নিশ্চিত হন। ঠিক সেই সময়ে উ চেন-শুন ওয়াশিংটনে ছিলেন না। নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিরত ছিলেন। পরীক্ষায় সাফল্যের খবর পেয়ে দ্রুত ওয়াশিংটনে আসেন তিনি। ৪ জানুয়ারি ১৯৫৭, উ-এর সাফল্যের খবর পান লি এবং সেই দিনই সর্বসমক্ষে তা ঘোষণা করেন। লি-র ঘোষণা শুনে, সেই দিনই রাত ৮টা নাগাদ বিশিষ্ট আমেরিকান পদার্থবিদ লিয়ন ম্যাক্স লিডারম্যান, তাঁর বন্ধু আমেরিকান পদার্থবিদ রিচার্ড লরেন্স গারউইনকে ডেকে পাঠান। ভিন্ন পদ্ধতিতে এই পরীক্ষা করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন লিডারম্যান। গারউইন সহমত হলে, লিডারম্যান তাঁর ছাত্র মার্সেল ওয়েইনরিখকে সঙ্গী করে, পরীক্ষা শুরু করেন। দিবারাত্রি পরিশ্রম করে চার দিনের মধ্যেই তাঁরা ‘প্যারিটি’ বিষয়ে একই সিদ্ধান্তে পৌঁছন এবং যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ তৈরি করে ফেলেন। লিডারম্যানের সাফল্যের খবর পেয়ে এনবিএস টিম দ্রুত তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে থাকেন। ১৫ জানুয়ারি ১৯৫৭, এই টিম তাঁদের নথিপত্র জমা দেয় এপিএস-এ। একই দিনে লিডারম্যান-গারউইন-মার্সেলও তাঁদের নথিপত্র জমা দেন।
দু’দিন পর, ১৭ জানুয়ারি ১৯৫৭, এপিএস-এর দফতরে জমা পড়ে ‘প্যারিটি’ বিষয়ে তৃতীয় এক গবেষণাপত্র। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাঙ্গেরীয়-মার্কিন পদার্থবিদ ভ্যালেন্টাইন লুইস টেলেগ্ডি এবং পদার্থবিদ জেরোম আইজ়াক ফ্রিডম্যান ‘প্যারিটি’ বিষয়ে একই সিদ্ধান্তে পৌঁছন, নিজস্ব পদ্ধতিতে। অপর দুই গোষ্ঠীর পরীক্ষার খবর কিছুই জানতেন না। ফলে, ‘প্যারিটি’ বিষয়ে মোট ১২ জন গবেষকের নাম সামনে আসে।
১৯৫৭ সালে যৌথ ভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান সাং-ডাও লি এবং চেন-নিং ইয়াং। উ চেন-শুন নোবেল পাননি তিনটে কারণে— ১) কোনও বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তার পূর্ববর্তী বছরগুলোতে অবদানের জন্য। লি এবং ইয়াং-এর গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছিল অক্টোবর ১৯৫৬। উ চেন-শুন সমেত বাকিদের গবেষণাপত্র প্রকাশ পায় জানুয়ারি ১৯৫৭।
২) লি এবং ইয়াং ছিলেন মূলতত্ত্ব প্রণেতা। বাকি তিন দল গবেষক লি-ইয়াং’এর তত্ত্বকে পরীক্ষা করেছেন মাত্র। তাঁরা নতুন কোনও তত্ত্বের ইঙ্গিত দেননি। ৩) নোবেল রীতিতে, সর্বোচ্চ তিন জনের মধ্যে পুরস্কার ভাগ করে দেওয়া হয়ে থাকে। লিডারম্যান-গারউইন-মার্সেল, টেলেগ্ডি-ফ্রিডম্যানদের বাদ দিয়েও, উ চেন-শুন ও তাঁর সহযোগীদের কথা যদি বিবেচনা করাও হত তা হলেও নোবেল প্রাপক সংখ্যাটা হত সাত।
এ বার উ চেন-শুন’এর প্রাপ্ত সম্মানগুলো দেখে নেওয়া যাক:
১) প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা অধ্যাপক (১৯৪৩), ২) প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা ডক্টরেট (১৯৫৮), ৩) কমস্টক পুরস্কার (১৯৬৩), ৪) এপিএস-এর প্রথম মহিলা সভাপতি (১৯৭৫), ৫) বনার পুরস্কার (১৯৭৫), ৬) ‘ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স’(১৯৭৫), ৭) ১৯৭৮ সালে চালু হওয়া ‘উল্ফ’ পুরস্কারের তিনিই ছিলেন প্রথম প্রাপক। ৮) আমেরিকান ন্যাশনাল উইমেন’স হল অব ফেম (১৯৯৮) (মরণোত্তর)।
সহস্রলোচন শর্মা
ই-মেল মারফত
আরও স্পেশাল
‘স্পেশাল কী’ শিরোনামে শান্তভানু সেন-এর চিঠি (২২-৫) পড়ে, আরও কিছু ঘটনা যোগ করি। ১) আমি বেশ ছোট। হাটের দিন মামার (বেতার-সারানো মিস্ত্রি) দোকানে পাশের গ্রামের এক কাকু এসে বললেন, নতুন ব্যাটারি ভরলাম কিন্তু টর্চটা জ্বলছে না কেন? মামা ব্যাটারিগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে বললেন, একটু ঘুরে আসুন, ঠিক করে রাখব। মামা ব্যাটারিগুলোর প্লাস্টিকের টুপিগুলো খুলে টর্চে ঢুকিয়ে জ্বালিয়ে রেখে দিলেন। খানিক বাদে সেই কাকু এসে এক টাকা দিয়ে, টর্চ নিয়ে গেলেন।
২) বছর কয়েক আগের কথা। এক দাদার দোকানে বসে আছি। এক ভদ্রলোক এসে বললেন, একটা ভাল ফ্লাস্ক দেবেন, মুম্বইতে পাঠাব। দোকানি বললেন, এখানে ভাল ফ্লাস্ক খুব একটা বিক্রি হয় না বলে সেগুলো বাঙ্কারে রেখেছি। এই ঘনা, ওপর থেকে একটা নিয়ে আয় তো। ভদ্রলোক চলে যাওয়ার পর দাদা বললেন, ‘‘ক্যান্ডেল-ভাঙা ফ্লাস্কগুলো বাঙ্কারে রেখেছিলাম। মুম্বই যাবে তো, কমপ্লেন আসবে না।’’
৩) বছর তিনেক হবে। নামী কোম্পানির একটা মুঠোফোন মুঠোয় নিয়ে ওই কোম্পানিরই এক ‘সার্ভিস সেন্টার’-এ গেলাম। ফোনটার সমস্যার কথা জানাতেই খোপের মধ্যে বসা ছেলেটা বলল, একটু বসুন, ভেতরে গিয়ে মেকানিকের সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারব কেমন খরচ পড়বে। উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলাম, ছেলেটা ভেতরে গিয়ে এসি-টা বন্ধ করল, দুটো ফ্যান চালাল, তার পর আবার খোপে ফিরে এসে বসল। তার পর খরচের কথা বলতেই বললাম, ‘‘পকেটে একদম পয়সা নেই, ওটা সারাবার জো নেই, ফোনটা ফেরত দাও।’’ ভাই একেবারেই নাছোড়। অনেক খলকথা খরচ করে ফোন ফেরত পেয়েছিলাম।
৪) এক যুগের বেশি হবে। রাতের লালগোলায় উঠেছি। এক ভদ্রলোক এক কেজি আপেল কিনে নৈহাটি নামতেই আর এক ভদ্রলোক অভিযোগের সুরে আপেলওয়ালাকে বললেন, তোমার কাছ থেকে প্রত্যেক শুক্রবারে ২/৩ কেজি করে আপেল কিনি, আজও কিনেছি; কিন্তু ওঁর কাছ থেকে আপেলের দাম কম নিলে কেন? উত্তর এল: ওখানে আপেল গিয়েছে বড় জোর আটশো গ্রাম, এমন দামাদামি করল, কী আর করি।
কত বলব। বেশি খরচ করে, নিশ্চিন্ত হয়ে এত দিন নামী দোকান বা কোম্পানির দামি খাবারগুলো যে আমরা খেয়ে এসেছি, ‘ভাগাড় কাণ্ড’ জানার পর কে নিশ্চিন্ত হয়ে বলতে পারে— আমরা শকুনের কাছাকাছি মানুষ নই?
কল্লোল সরকার
হৃদয়পুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
ভ্রম সংশোধন
‘তিতের শেখার...’ (৬-৬, পৃ. ১৭) প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কোচ ছিলেন দুঙ্গা। আসলে কোচ ছিলেন লুইস ফিলিপ স্কোলারি। বিশ্বকাপের পরে দায়িত্ব নেন দুঙ্গা। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।