R G Kar Hospital Incident

সম্পাদক সমীপেষু: একযোগে প্রতিবাদ

খেলা খেলার মতো হবে, রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গায়। গত রবিবারে যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ যৌথ প্রতিবাদ কর্মসূচি রুখতে হাজার হাজার পুলিশ পোস্টিং হয়ে গেল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৪ ০৬:২৯
Share:

আর জি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ দেখা গেল যুবভারতীতে ডুরান্ড কাপের ডার্বি ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান বাতিল করে দেওয়া হল। কেন? কে-ই বা বাতিল করল? যত দূর জানি, বাতিল করার অধিকার নির্দিষ্ট টুর্নামেন্ট কমিটিরই (ডুরান্ড কাপ টুর্নামেন্ট কমিটি) থাকে। শোনা গিয়েছে, রাজ্য সরকার পুলিশ সরবরাহ করতে পারবে না জানিয়ে দেওয়ায় ম্যাচ বাতিল করা হয়। ম্যাচের সময় কত পুলিশ লাগত? রাজ্য পুলিশের কিছু অংশকে কাজে লাগিয়ে কি ম্যাচ পরিচালনা করা যেত না? সব জায়গাতেই যদি রাজনীতির রং লাগানোর ব্যবস্থা হয়ে থাকে, তা হলে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ।

Advertisement

খেলা খেলার মতো হবে, রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গায়। গত রবিবারে যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ যৌথ প্রতিবাদ কর্মসূচি রুখতে হাজার হাজার পুলিশ পোস্টিং হয়ে গেল। কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন পুলিশ পোস্টিং করতে রাজ্য সরকার বা প্রশাসন নিজেদের অপারগতা স্বীকার করে নিল? খেলা তো সব কিছুর ঊর্ধ্বে থাকা উচিত— সেখানে রাজনীতি, জাতিভেদ, বর্ণবৈষম্য ইত্যাদি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সেই কারণেই স্লোগান ওঠে— ‘ডার্বি বাতিল করবি কর, জাস্টিস ফর আর জি কর’। দু’দলের সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে (এর সঙ্গে আর জি করের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের সাজার দাবিও) কোনও প্রয়োজন ছিল প্রশাসনিক দাদাগিরি দেখানোর? সব জেনেশুনেও সরকার যুবভারতীতে নানা রকম ধারা-উপধারা বলবৎ করে ক্লাব-অন্তপ্রাণ বাঙালিকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে ‘সবার উপর মানুষ (জনগণ) সত্য’। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের শতাধিক বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের জন্য দেখা গিয়েছে একযোগে লড়াই-প্রতিবাদ-আন্দোলন। ক্ষমতাবানদের এ বার সময় এসেছে সেই ইঙ্গিত বুঝে নেওয়ার।

স্বস্তিক দত্ত চৌধুরী, শান্তিপুর, নদিয়া

Advertisement

ঐতিহাসিক

আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা, গায়ক, কলাকুশলী, খেলোয়াড়, ছাত্রছাত্রী-সহ সকলেই রাজপথে নেমেছেন উপযুক্ত তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে। এর জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা বা আহ্বানের দরকার হয়নি। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান দলের সমর্থকদের খেলার মাঠে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়নি কোনও সংগঠন। তবুও কলকাতার প্রধান ফুটবল দলগুলির সমর্থকেরা একজোট হয়ে পুলিশের লাঠি ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে যে ভাবে প্রতিবাদে শামিল হলেন, তা এক কথায় ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। ‘কড়া পুলিশি রক্ষণ ভেঙে অন্য ডার্বি’ (১৯-৮) শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রকাশ ‘চুবড়ে ভিজেও জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে সবুজ-মেরুন ও লাল-হলুদ জার্সিধারী যুবকের ঝাঁক। লাঠি হাতে তেড়ে আসা পুলিশের সামনেও তাঁরা অকুতোভয়। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সামনে ওই যুবশক্তিই গলার শিরা ফুলিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, ‘ঘটি-বাঙাল এক স্বর/ জাস্টিস ফর আর জি কর’, ‘চিংড়ি-ইলিশ এক স্বর/ জাস্টিস ফর আর জি কর’।” শাসক দলের প্রিয় স্লোগান ‘খেলা হবে’ এই প্রতিবাদের ঝড়ে উড়ে গিয়েছে।

রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

কাঁধে কাঁধ

সত্য ঘটনা উদ্‌ঘাটনে রাস্তায় নেমে বাংলার মানুষ সুবিচার ও সুরক্ষার জন্য সবাই হাত ধরাধরি করে প্রতিবাদে সরব হতে জানে। গত দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিলোত্তমা কলকাতা আর এক তিলোত্তমার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উত্তাল সমুদ্রের আকার নিয়েছে। কলকাতার বাইরে অন্য জেলায়, অন্য রাজ্যে বা দেশেও মানুষ এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। এরই সঙ্গে কলকাতার ক্রীড়াপ্রেমিকরা দেখালেন, যতই মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল করি না কেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুবিচার বা নিরাপত্তা তাঁদের সর্বপ্রথম কাম্য। ডার্বি বাতিলের দিনে এক হয়ে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান সমর্থকরা কাঁধে কাঁধ রেখে পুলিশ-প্রশাসনের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে প্রতিবাদের যে নজির সৃষ্টি করলেন, তা ইতিহাস। মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল মহমেডান মিলেমিশে একটি দল ‘মানবতা’র সমর্থক হয়ে গেল। মানুষের মান আর হুঁশের মিলন ঘটিয়ে দুই দলের সমর্থকরা একে অপরের কাঁধে উঠে একজোট হয়ে যে ভাবে বন্ধ করে দেওয়া ডার্বি ম্যাচের চিন্তা না করে নগরীর রাজপথে সুস্থ ভাবে বাঁচার আর সুরক্ষা সুবিচারের দাবিতে প্রতিবাদে শামিল হলেন, তা অভূতপূর্ব।

শুধু তা-ই নয়, আর জি করের ঘটনার সুবিচারের দাবিতে অন্য ক্রীড়াবিদরাও যে-ভাবে সরব হয়েছেন, তা আরও এক বার প্রমাণ করল যে, সর্বস্তরের বা সমস্ত পেশার ব্যক্তিবর্গের প্রথম পরিচয় তাঁরা সমাজবদ্ধ মানুষ। কোনও কোনও অমানবিক বা পৈশাচিক ঘটনা অন্য পেশার মানুষের হৃদয়কেও নাড়া দেয়। অর্থ, সামাজিক প্রতিপত্তির গণ্ডি ছাড়িয়ে কোথাও তাঁরা এক হয়ে সাধারণ জনতার সুরে সুর মিলিয়ে অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সুবিচার চান। বাংলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে খেলার মাঠে নিয়মিত আসা দুই প্রধান দলের খেলাপাগল সমর্থকরা যে-ভাবে রাজপথে পুলিশের তাণ্ডব উপেক্ষা করে অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সরব হলেন, তাতে শুধু ঘটি-বাঙালের জয় নয়, ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের নৈতিক জয় ঘটল।

১৮ অগস্ট ফুটবল তথা ময়দানের ইতিহাসে এক বিশেষ দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রইল।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

আশা আছে

আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে মানুষের প্রতিবাদী মিছিল সমুদ্রের মতো আছড়ে পড়ছে। মানুষের মনের এমন কিছু স্পর্শকাতর জায়গা থাকে যেখানে হাত পড়লে তাঁরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। আর জি কর কাণ্ডে সেটাই ঘটেছে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান তথা ফুটবলপ্রিয় বাঙালি যে ভাবে প্রতিবাদ মিছিল করলেন, তা নজিরবিহীন। খেলার মাঠের লড়াই স্রেফ বিনোদন। কিন্তু মাঠের বাইরে তাঁরা সমাজসচেতন বিবেকবান মানুষ। তাঁরা জার্সির রং মুছে মানুষ হিসাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিলে আওয়াজ তুলেছেন— ‘হত্যাকারীর সাজা চাই’। আর উর্দি পরা পুলিশ তাঁদের উপর লাঠি চার্জ করছে! মিছিলে স্লোগান উঠেছে— ‘পুলিশ যত মারবে/ মিছিল তত বাড়বে’। শাবাশ। এখনও তা হলে সব শেষ হয়ে যায়নি। খেলার দুনিয়া থেকে শুরু করে সিনেমা জগৎ, স্কুল কলেজের পড়ুয়া, বাড়ির মেয়েরা— সবাই আজ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। সবাই বুঝেছেন, কেউই নিরাপদ নন।

মৃণাল মাইতি, ডিভিসি, বাঁকুড়া

অন্য খেলা

‘কড়া পুলিশি রক্ষণ ভেঙে অন্য ডার্বি’ সংবাদ শিরোনাম এবং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাঁধে চেপে প্রতিবাদের ছবি কলকাতা ফুটবলের ইতিহাসে কেউ কখনও দেখেনি। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান— সব দল মিলে গেল আর জি কর ঘটনার প্রতিবাদে। ডুরান্ড কাপ বাতিল হওয়ার পরই অন্য দাবিতে পাল্টে গেল ফুটবলপ্রেমীদের ক্ষোভ। ১৪ অগস্টের জনজোয়ারের ধাক্কার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৮ অগস্ট বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের এই অভিনব প্রতিবাদ আর একটি বার্তা দিল। এত দিন আমরা ‘খেলা হবে’ শুনে এসেছি। সেই খেলা মাঠে আর হল না, হল মাঠের বাইরে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন চত্বরে খেলা হল দিশেহারা পুলিশ বনাম বিক্ষোভকারী ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে।

পিনাকী রুদ্র, কলকাতা-১২৪

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement