‘গরমিলের কোভিড’ (২২-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। আমেরিকার প্রথম সারির সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র (হু) রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে করোনায় মৃতের সম্ভাব্য সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ, যা ভারতের সরকারি পরিসংখ্যানের আট গুণ। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অবশ্য হু-র এই রিপোর্টের বিরোধিতা করা হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বিশ্বের বেশ কিছু প্রথম সারির সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল অক্সিজেনের অভাবে ভারতের রাস্তায় মৃত মানুষের ছবি, গণচিতার ছবি। কিছু রিপোর্টও বেরিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে তখন বলা হয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের ৪৭ শতাংশই গ্রামে। ভারতে শহরের তুলনায় নজরদারি, করোনা পরীক্ষা, মৃতের ঠিক হিসাব— সব কিছুতেই গ্রাম পিছিয়ে। কারণ, ভারতের অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম আছে, যেখানে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, হাসপাতাল নেই, এমনকি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও নেই। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আমরা গঙ্গায় লাশ ভেসে যেতে দেখেছি, গঙ্গার ধারে মাটিতে পুঁতে রাখা মৃতদেহও কম দেখা যায়নি। তাই ভারতে মৃতের প্রকৃত সংখ্যায় গরমিল হওয়া আশ্চর্য নয়।
করোনায় মারা গিয়েছেন, অথচ মৃত ব্যক্তির নাম নথিভুক্ত হয়নি, এমন ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে যাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন, শুধু তাঁদেরই করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা হাসপাতালে না এসে বাড়িতেই মারা গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই নাম সরকারি ভাবে নথিভুক্ত হয়নি। ফলে হিসাবে গরমিল হওয়া স্বাভাবিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত পরিসংখ্যানে সরাসরি কোভিডের কারণে মৃত্যু, পোস্ট-কোভিড মৃত্যু এবং চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ভারতে পোস্ট-কোভিড মৃত্যু এবং চিকিৎসা না পেয়ে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের কোনও সরকারি হিসাব রাখা হয়নি। তাই বাস্তবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এবং যত সংখ্যক মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে বিরাট ফারাক থেকে গিয়েছে।
ভারতে করোনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা সরকার প্রদত্ত পরিসংখ্যানের তুলনায় যে অনেক বেশি, সেই দাবি বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের প্ৰথম সারির মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট এবং আন্তর্জাতিক সাময়িকী দ্য ইকনমিস্ট-এর রিপোর্টেও করা হয়েছে। ভারত সরকার সেই সব দাবিকে নস্যাৎ করলেও, বিজ্ঞানভিত্তিক ঠিক তথ্য তারা যত দিন না পেশ করছে, তত দিন বিশ্ববাসীর কাছে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে না।
রবীন রায়
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
চতুর্থ ঢেউ
‘রাজ্যে চতুর্থ ঢেউ কি জুলাইয়ে’ (২৩-৪) শীর্ষক সংবাদটি মানুষকে সচেতন করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখছি, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের প্রভাবমুক্ত হয়ে মানুষ যেন মনে করছেন কোভিড আর আসবে না। এর সাম্প্রতিক প্রতিফলন আমরা লক্ষ করলাম বাংলা বর্ষবরণের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এরই মধ্যে আবার জানা গেল, দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের বুলেটিন রীতিমতো উদ্বেগজনক। দিল্লিতে বহু মানুষ নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত, প্রভাব দেখা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা-সহ পার্শ্ববর্তী কিছু রাজ্যেও। আমাদের রাজ্যেও বিক্ষিপ্ত ভাবে সংক্রমণের খবর মিলছে। ফলে আবার সচেতন হওয়া জরুরি। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হোক, সঙ্গে স্যানিটাইজ়ারও রাখতে হবে নিজেদের সুরক্ষার জন্য। আর যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা দরকার।
পরেশনাথ কর্মকার
রানাঘাট, নদিয়া
সম্প্রচার হোক
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) বাদে ভারতে কত প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ও ফুটবল লিগ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর না আছে কোনও ধারাবিবরণী, না হয় কোনও সরাসরি সম্প্রচার। যদিও বা হয়, তার কোনও আগাম সূচনা পাই না। যার ফলে এক জন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে এই সব খেলা দেখা বা শোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এখন অহরহ বিদেশের ফুটবল খেলা দেখানো হয়, অথচ দেশের খেলাগুলো দেখানো হয় না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, আইএফএ শিল্ড-সহ জাতীয় পর্যায়ের সব বড় ফুটবল প্রতিযোগিতা টেলিভিশনে দেখানো বা ধারাবিবরণীর ব্যবস্থা হলে, সকল ক্রীড়াপ্রেমী উপকৃত হবেন।
রূপেন্দ্র মোহন মিত্র
কলকাতা-৪৭
সম্পর্ক নেই
‘বিজেপির হিন্দু নববর্ষ, প্রশ্ন বাস্তবতা নিয়েই’ (৩-৪) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। হিন্দু নববর্ষ নয়, আম বাঙালির পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে সূচনা করার পিছনে মোগল সম্রাট আকবরের অসামান্য অবদান ছিল, এ কথা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য। সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে (৯৬৩ হিজরি সন) দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর শাসনকালে ভারতে বর্ষপঞ্জির হিসাব করা হত চান্দ্র মাস অনুযায়ী, যাকে হিজরি সন বলা হত। ২৭ দিনের হিসাবে এই হিজরি সন গণনা করা হত। এর ফলে প্রতি বছরই হিজরি সন এগিয়ে আসে চান্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী। এই জন্য সেই সময়ে কৃষিকেন্দ্রিক বঙ্গদেশের ফসল উৎপন্ন হওয়ার পরে কৃষকদের খাজনা প্রদানের সময়সীমার কিছুটা হেরফের হয়ে যেত। বাংলার কৃষকরা আষাঢ়, শ্রাবণ মাসের পরে নতুন ফসল উঠলে রাজা, জমিদারদের খাজনা মিটিয়ে দিতেন। কিন্তু হিজরি সনের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর চান্দ্রমাস এগিয়ে আসার ফলে বাংলার কৃষকরা নতুন ফসল না উঠলেও জমির খাজনা দিতে খুব সমস্যায় পড়তেন। কোনও বছর নতুন হিজরি সন শুরু হত ইংরেজি নভেম্বর মাসে, কোনও বছর মার্চে।
বাংলার কৃষকদের এই অসুবিধার কথা সম্যক উপলব্ধি করে সম্রাট আকবর তাঁর দরবারের স্বনামধন্য পণ্ডিত ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজি-কে নির্দেশ দেন, চান্দ্রমাস বা হিজরি সন এবং সূর্যকেন্দ্রিক বর্ষপঞ্জির সংমিশ্রণে একটি নতুন বর্ষ তৈরি করার, যাতে বঙ্গদেশের কৃষকদের খাজনা বা কৃষিকর দিতে সুবিধে হয়। সম্রাটের নির্দেশ পেয়ে অভিজ্ঞ প্রবীণ জ্যোতির্বিদ আমির ফতেউল্লাহ কয়েক বছর গণনার পর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চে একটি কৃষিভিত্তিক বর্ষপঞ্জি (হিজরি সন ও সৌরবর্ষের সংমিশ্রণে যার নামকরণ হল ‘ফসলি সন’) তৈরি করে সম্রাটের দরবারে পেশ করেন, যা বর্তমানের বঙ্গাব্দ বর্ষের গণনার সূচনা বা ভিত্তি হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। তাই বিজেপির হিন্দু নববর্ষের সঙ্গে আম বাঙালির নববর্ষের কোনও সম্পর্কই নেই।
তুষার ভট্টাচাৰ্য
কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ
কেমন আলপনা
১৫ এপ্রিল এই পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিটিতে এক জন কিছু রং দিয়ে শুভ নববর্ষ-সহ কিছু শব্দ ও একটি মুখোশের ছবি আঁকছেন। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে ‘নববর্ষকে স্বাগত জানাতে আলপনা’। বাংলায় এই আলপনা শিল্পটি তো আজ প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। গ্রামবাংলায় এই শিল্প কিছুটা দেখা গেলেও শহরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতিকে আপন করে ‘রঙ্গোলি’ এবং স্টেনসিল করা কারুকাজই দেখা যায়। শান্তিনিকেতনের এক জন প্রাক্তনী হিসেবে এবং নন্দলাল বসুর কন্যাদ্বয় যমুনা সেন ও গৌরী ভঞ্জ এবং নন্দলালের ছাত্র ননীগোপাল ঘোষের কাছে এই শিল্পটির পাঠ নেওয়া এই পত্রলেখক আজও এই শিল্পের সাধনায় ব্যাপৃত আছে। তাই ক্ষোভের জায়গা থেকেই আমার প্রশ্ন, এটাকে কি আলপনা বলা চলে?
লীনা ঘোষ
কলকাতা-৭৫